রম্য

ফ্রি পার্কিং

ওয়াহিদের বড় ভাই করোনায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি। ডিউটি করতে হয় ছোট ভাই ওয়াহিদকে। সকালে নাস্তা, দুপুরে লাঞ্চ, রাতে ডিনার তিনটিই পৌঁছে দিতে হয় নিয়ম করে। হাসপাতালে খাবার দেয়; কিন্তু বড় ভাই হাসপাতালের খাবার খেতে পারে না। তাই আপাতত এই ব্যবস্থা। সমস্যা হচ্ছে মোটরসাইকেল রাখার জায়গা নেই, নতুন কেনা মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেলে সাড়ে সর্বনাশ। সর্বনাশ হচ্ছে এত টাকা দিয়ে শখের কেনা মোটরসাইকেল যদি চুরি হয়। আর সাড়ে সর্বনাশ হচ্ছে ব্যাংকের কিস্তি দেয় প্রতি মাসে, মোটরসাইকেল চুরি হলেও দিয়ে যেতেই হবে...। আর এই সময় কি নগদ টাকায় কিছু কেনা সম্ভব? লোনের কেনা মোটরসাইকেলের প্রতি দরদ অন্যরকম। 

যা হোক হাসপাতালের গেটের কাছে মোটরসাইকেল রেখে ওয়াহিদ দারোয়ানকে বলল ‘ভাই একটু দেখে রাইখেন, আপনাকে খুশি করে দিবনে!’ তারপর ডিউটি শেষে চলে যাওয়ার সময় বিশ ত্রিশ টাকা দারোয়ানকে দিয়ে যায়. কখনো কখনো পঞ্চাশ টাকাও দেয়। এভাবেই চলছিল। 

কিন্তু একদিন হঠাৎ নিজেকে গাধা মনে হলো ওয়াহিদের। হ্যাঁ, চতুষ্পদ কান লম্বা ‘গাধাই’। ইংরেজিতে যাকে বলে এ ডাবল এস ‘এস’, ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানায় কিছুক্ষণ গাধার খাঁচার ভেতর বসে থাকে। কারণ? কারণ সেদিন গেটে কিছুক্ষণের জন্য দারোয়ান ছিল না এবং তখনই সে আবিষ্কার করল। এই হাসপাতালের পেছনে বিশাল পার্কিং প্লেস। সেখানে গাড়ি মোটরসাইকেল সব পার্ক করে রাখা যায়; তার জন্য কোনো পার্কিং চার্জ লাগে না। আর এতদিন ধরে সে দারোয়ানকে বিশ ত্রিশ পঞ্চাশ টাকা করে দিয়ে আসছে। আর হারামজাদা দারোয়ানও পিছনের এই পার্কিংয়ের জায়গা নিয়ে টুঁ শব্দটা করেনি। মাঝখান দিয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দিব্যি টু পাইস কামিয়ে নিয়েছে। কোনো মানে হয়? মাথায় যেন আগুন ধরে যায় ওয়াহিদের। দারোয়ানকে একটা শিক্ষা দিতে হবে; কিন্তু কীভাবে? 

ওয়াহিদ ছুটে গেল তার পাড়ার বড় ভাই বিচক্ষণ আবদুর রহমানের কাছে। রহমান ভাই কিছু করেন না, পাড়ার টংয়ের দোকানে বসে চা খান আর সিগারেট ফুঁকেন। আর একে ওকে নগদে উপদেশ দেন এবং মাঝে মাঝে বেশ মজার কথাও বলেন। যেমন দ্বিতীয় কিস্তির লকডাউনের প্রথম দিন তিনি টংয়ে বসে মাস্ক ছাড়া চা সিগারেট খাচ্ছেন দেখে ওয়াহিদ বলল-

রহমান ভাই আপনি লকডাউনে বাইরে? তাও আবার মাস্ক ছাড়া? 

আরে এই লকডাউনে তো সব বন্ধ। দোকানপাট গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ, মাস্ক পরাও বন্ধ! এই হচ্ছে রহমান ভাই। 

যাই হোক রহমান ভাইকে সব খুলে বলল ওয়াহিদ। রহমান ভাই মাথা ঝাকিয়ে বললেন ‘হুম’ 

কী করা যায় রহমান ভাই? ওই হারামজাদা দারোয়ানকে একটা শিক্ষা দিতে চাই। কোনো বুদ্ধি আছে? 

একটা বুদ্ধি আছে

কী বুদ্ধি?

 তুমি এর পরের বার যখন হাসপাতালে যাবে তখন তোমার মোটরসাইকেলটা রাখবে পেছনের পার্কিংয়ে

আচ্ছা রাখলাম। 

তারপর হাসপাতালে ঢোকার সময় দারোয়ান নিশ্চয়ই জানতে চাইবে মোটরসাইকেল কই? 

তা চাইতেই পারে। 

তখন তুমি করবে কি বাইরে দাঁড়ানো কোনো গাড়ি দেখিয়ে বলবে ‘ আজ গাড়িতে এসেছি গাড়িটা একটু দেখে রাখবেন’ 

তারপর?

তারপর দেখ কি হয়! বলে রহমান ভাই মুচকি হাসলেন। 

তাই করল ওয়াহিদ। দুপুরে মোটরসাইকেলে গিয়ে সেটা রাখল হাসপাতালের পেছনের পার্কিংয়ে। তারপর হেঁটে গেট দিয়ে ঢোকার সময় দারোয়ান সালাম দিল, বলল ‘স্যার মোটরসাইকেল আনেন নাই?’

আজ গাড়িতে আসলাম। ওই যে লাল গাড়িটা একটু দেখে রাইখেন, চারদিকে খুব গাড়ি চুরি হচ্ছে ...আজ ভালোমতো খুশি করে দিবনে।

জ্বি আচ্ছা। দারোয়ান খুশি। 

ভাগ্যিস তখন বাইরে একটা লাল টয়োটা গাড়ি দাঁড়িয়েছিল।

ওয়াহিদ হাসপাতালে ঢুকে গেল। বড় ভাই তিন তলার ৩০১ নম্বর কেবিনে। সেখানে তার খাবার দিল, তার খোঁজ খবর নিল কবে ছাড়বে কি সমাচার জানতে চাইল। ঠিক তখনই হাউমাউখাউ চিৎকার চেঁচামেচি শোনা গেল বাইরে। ঘটনা কি? ওয়াহিদ কেবিনের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বাইরে লাল গাড়ির সামনে বিরাট হাউকাউ। এক ষন্ডা টাইপের লোক হাসপাতালের দারোয়ানকে কিল চড় ঘুষি মারছে; যাকে বলে উপর্যুপরি কিল-চড় ঘুষি। পরে জানা গেল ষন্ডা টাইপের লোকটা ওই লাল গাড়ির মালিক। তিনি যখন নিজের গাড়িতে উঠতে যাবেন তখন নাকি দারোয়ান ছুটে এসে মালিকের কলার চেপে ধরে গাড়ি চোর সন্দেহে। তার পরতো ইতিহাস...। 

ওইদিন হাসপাতালের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল ওয়াহিদ। দারোয়ানকে এড়ানোর জন্য, তাছাড়া এদিক দিয়ে বের হলে পার্কিংয়ে পৌঁছাতেও সুবিধা। সে কারণে বাকি যে কয়দিন হাসপাতালে ডিউটি ছিল এই পথেই যাতায়াত করেছে ওয়াহিদ। তারপরও একদিন দারোয়ানের মুখোমুখি। তখনো দারোয়ানের কপালে আর থুতনিতে ব্যান্ডেজ, চাপার কাছে একটা মেডিক্যাল টেপ মারা। ওয়াহিদ এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে করে বলল ‘ভাই এরপর কেউ মোটরসাইকেল, দেখে রাখতে বললে বলবেন- পেছনে ফ্রি পার্কিং আছে’ দারোয়ান মাছের চোখে তাকিয়ে থাকে ওয়াহিদের দিকে। 

ওয়াহিদ ঠিক করল আজ পাড়ায় গিয়ে রহমান ভাইকে এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা মাস্ক গিফট করবে। অবশ্য মাস্ক পরে সিগারেট খাওয়া যাবে কি-না কে জানে!  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //