কেমন কাটছে তারকা ফুটবলারদের সংসারজীবন

করোনা নতুন করে বীরদর্পে জেঁকে বসেছে বিশ্বে। নবরূপে, নব উদ্যমে ভয়ার্ত থাবায় পুরো দুনিয়াকে চেপে ধরেছে। সর্বগ্রাসী করাল থাবায় প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। অত্যাধুনিক দুনিয়ার মানুষ ভয়ে-আতঙ্কে দিশেহারা। ভয়ার্ত এই পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ ভালো আছেন বিশ্বের তারকা ফুটবলাররা। মাঠে এবং মাঠের বাইরেও।

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের আঁচড় বিশ্বের তারকা ফুটবলারদের জীবনের ওপরও লেগেছে। প্রথম ধাপে নেইমার, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, কিলিয়ান এমবাপে, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াসহ বিশ্বের অনেক তারকা ফুটবলারই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে প্রত্যেকেই করোনাকে জয় করে আবার বীরদর্পে শুরু করেছেন দ্বিতীয় জীবন! এই মুহূর্তে তারকা ফুটবলারদের সবাই বেশ ভালোই আছেন। নতুন করে জেঁকে বসা দ্বিতীয় ধাপের করোনা এখনো তারকা ফুটবলারদের শিকারি তালিকার বাইরেই রেখেছে। নতুন করে কারও শরীরে মরণ-বসতি বানায়নি!

এই সুযোগে নিজেদের জীবনটা তাড়িয়ে উপভোগ করছেন- মেসি, রোনালদো, নেইমার, আতোইন গ্রিমজান, এমবাপে, লুকা মড্রিচ, টনি ক্রুস, হ্যারি কেন, গ্যারেথ বেল, বরার্ট লেভান্ডভস্কি, লুইস সুয়ারেজ, সার্জিও রামোস, কাসেমিরো, মোহাম্মেদ সালাহ, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনোরা। মৌসুমের শেষ দিক বলে শিরোপার আশায় একদিকে মাঠ যেমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তেমনি মাঠের বাইরেও কাটাচ্ছেন সুখি-বিলাসী জীবন। এই প্রতিবেদনে আমরা বর্তমান বিশ্বের বড় চার তারকা ফুটবলারের মাঠের বাইরের সংসারজীবনের সুখের খবর জানব।


লিওনেল মেসি
বর্তমান বিশ্বের তারকা ফুটবলারদের আলোচনায় নিশ্চিতভাবেই লিওনেল মেসির নামটিই চলে আসে সবার আগে। বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মাঠে কেমন সময় কাটাচ্ছেন, সেটা ফুটবলপ্রেমী মাত্রই জানেন। জানেন তার সংসারজীবনের খবরও। তারপরও বলতে হয়, মাঠে যতটা ভালো কাটাচ্ছেন, মাঠের বাইরের জীবনটা তার চেয়েও ভালো কাটছে মেসির। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেসির মাঠের বাইরের জীবনটা যেন কাটছে ঘরোয়া-পিকনিক মুডে।

সেই শিশুকালের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করে সারাজীবনের সঙ্গী করেছেন ২০১৭ সালে। একই ছাদের নিচে তাদের একসঙ্গে বসবাস আরও অনেক আগে থেকেই। তো সুন্দরী স্ত্রী ও তিন ছেলে- ৯ বছর বয়সী থিয়াগো, ৬ বছর বয়সী মাতেও এবং ৩ বছর বয়সী চিরোকে নিয়ে সুখের সাগরেই যেন ভাসছেন। তারা যে সত্যিই সুখের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছেন, তার প্রমাণ মিলেছে কদিন আগেও। কদিন আগেই ক্লাব বার্সেলোনার জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন মেসি।


আনুষ্ঠানিকভাবে সেই রেকর্ড উদযাপন করতে মেসি স্ত্রী রোকুজ্জো এবং তিন ছেলেকেই ডেকে নিয়েছিলেন মাঠে! বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে কোনো ফুটবলার ব্যক্তিগত কোনো রেকর্ড কখনো এভাবে পরিবারসহ মাঠে নেমে উদযাপন করেছেন, তেমন নজির পাওয়া যায় না! মেসি সেই বিরল দৃষ্টান্ত গড়ার মধ্য দিয়ে নিজের পারিবারিক জীবনের সুখের বার্তাটাই যেন দিয়েছেন ফুটবল দুনিয়াকে।

শুধু মাঠে নেমে একসঙ্গে ওই রেকর্ড উদযাপনই নয়, এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও উপলক্ষ পেলে পারিবারিক পার্টি আয়োজন করে থাকেন মেসি। সময় পেলেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে যান দেশ আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের নানা জায়গায়। স্ত্রী-সন্তানদের পাশাপাশি বাবা-মা-ভাইয়ের সঙ্গেও সম্পর্কটা অটুট আছে তার। যদিও তার বাবা-মা দেশ আর্জেন্টিনাতেই থাকেন। আর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেসি সুখের ঠিকানা গড়েছেন বার্সেলোনাতেই। তবে অবসর পেলেই মেসি সপরিবারে ছুটে যান বাবা-মার কাছে। বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে এখানে-ওখানে যাওয়াটা তো পিকনিকের চেয়েও বেশি আনন্দময়!


ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
মেসির চেয়েও মাঠের বাইরের ‘সংসার’জীবনটা বেশি উপভোগ করছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। রোনালদোর সংসারজীবন-কথাটায় অবশ্য কারও কারও প্রবল আপত্তি আছে। কারণ সত্যিকারের সংসার গড়তে একজন পাকাপাকি বউ দরকার; কিন্তু রোনালদো এখনো পর্যন্ত কারও সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। মানে বিয়ে করেননি তিনি। তবে বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজের সঙ্গে ঠিকই একটা সংসার গড়ে তুলেছেন। বিয়ে না করেও সেই ২০১৬ সাল থেকে বসবাস করছেন একই ছাদের নিচে। তাদের ঘরে একটি মেয়েও আছে। ২০১৭ সালে জন্ম নেওয়া সেই মেয়ের নাম আলানা মার্টিনেজ।

রোনালদো বরাবরই উচিতের চেয়েও বেশি আমোদবিলাসী। ফুটবল মাঠ থেকে ছুটি পেলেই তাকে আবিষ্কার করা যায় কোনো সমুদ্র ভ্রমণে বা সমুদ্র উপকূলের কোনো বিলাসবহুল রিসোর্টে। সঙ্গে যথারীতি থাকে নারী সঙ্গী। ২০১৬ সালের পর থেকে অবশ্য একজন নারীকেই বারবার দেখা যায় তার সঙ্গী হিসেবে, তিনি জর্জিনা রদ্রিগেজ; কিন্তু তার আগে অনেক নারীই এসেছে তার জীবনে। নতুন নতুন নারীর সঙ্গে প্রেম করাটা শখ বানিয়ে ফেলেছিলেন জুভেন্টাসের পর্তুগিজ সুপারস্টার। একটা সময় ফুটবল দুনিয়ায় এমন কথাও প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল, পোশাক বদলের মতোই বান্ধবী বদল করাটা অভ্যাস রোনালদোর।

পর্তুগিজ তারকার সেই একটা ছেড়ে আরেকটা ধরার রোগ দূর করে দিয়েছেন জর্জিনা রদ্রিগেজ। সেই ২০১৬ সালে আর্জেন্টাইন বংশোদূত স্প্যানিশ মডেল কন্যা রোনালদোর জীবনে এসেছেন। এরপর আর অন্য নারীর দিকে তিনি তাকাতে দেননি প্রেমিককে। জর্জিনা রূপ-ভালোবাসায় মুগ্ধ রোনালদোও ‘একটা ছেড়ে আরেকটা ধরার’ নেশা থেকে সরে এসেছেন। শুধু তাই নয়, আংটি বদল করে রাখা জর্জিনা রদ্রিগেজকে পাকাপাকিভাবে ‘বউ’ করার পরিকল্পনাও করে রেখেছেন। উপযুক্ত সময় পেলেই বান্ধবী থেকে পদোন্নতি দিয়ে জর্জিনাকে বউ করবেন বলেও জানিয়ে রেখেছেন।

বহু নারীর সঙ্গ নেশাধারী রোনালদোর এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেবে কি-না, সময়ই বলে দেবে। তবে বর্তমানে প্রেমিকা জর্জিনাকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি। জর্জিনা তার সমস্ত রূপ-যৌবন এবং ভালোবাসা ঢেলে দিয়ে রোনালদোকে বেঁধে রেখেছেন। এই বছরই যখন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন রোনালদো, এই জর্জিনা সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে একনিষ্ট সেবার মাধ্যমে তাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলেছেন। শেষ দিকে যখন করোনায় তাদের দু’জনের সম্পর্কটাকে উষ্ণতায় ভরে রেখেছে চার চারটি সন্তান। হ্যাঁ, বর্তমানে চারটি সন্তানই রোনালদোর। দুই ছেলে, দুই মেয়ে। তাদের মধ্যে সবার ছোট আলানা মার্টিনেজ জর্জিনা রদ্রিগেজের গর্ভে এসেছে। বাকি তিনজন, ক্রিস্তিয়ানো জুনিয়র, মাতেও এবং ইভার মা কে, কেউ জানে না!

একের পর এক প্রেম করাটা যেমন সখ ছিল রোনালদোর, তেমনি তার আরেকটি সখ, বেশি বেশি সন্তানের বাবা হওয়া। প্রথম সখটি বর্তমানে মাটিচাপা পড়লেও বেশি বেশি সন্তানের শখটা এখনো রোনালদোর রয়েই গেছে। রোনালদো অনেকবারই প্রকাশ্যে বলেছেন, ১১টি সন্তান চাই তার! নিজের সন্তানদের নিয়েই আলাদা একটা ফুটবল টিম গঠন করার স্বপ্ন তার আছে কি-না কে জানে! তবে এই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে রোনালদোকে আরও ৭টি সন্তানের জন্ম দিতে হবে!

সংখ্যাটা বেশি মনে হলেও রোনালদোর জন্য তা অসম্ভব নয়। কারণ বর্তমানে তিনি যে ৪ সন্তানের বাবা, তার ৩ জনকেই দুনিয়ায় এনেছে একটু আলাদাভাবে! ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হওয়া তার প্রথম সন্তান ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের মা কে, তা দুনিয়াবাসী জানে না। চুক্তিপত্রেই নাকি উল্লেখ আছে, ক্রিস্তিয়ানো জুনিয়রের মা কে, তা কখনো প্রকাশ করা হবে না। রোনালদো প্রকাশ করেনওনি। এরপর ২০১৭ সালে বাইরের এক নারীর গর্ভ ভাড়া করে লাভ করেছেন যমজ সন্তান মাতেও ও ইভাকে। স্বাভাবিকভাবেই মাতেও এবং ইভাকে কে গর্ভে ধারণ করেছেন, সেটিও দুনিয়াবাসী জানে না! এভাবে যদি গর্ভ ভাড়া করে সন্তান লাভ করতে থাকেন, তাহলে আর ৭ জনকে দুনিয়ায় আনাটা তার জন্য কঠিন কিছু হবে না। তবে সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার।

বর্তমানে চার সন্তান এবং বান্ধবী জর্জিনাকে নিয়ে রোনালদোর সুখের অন্ত নেই। প্রায় বান্ধবী জর্জিনা এবং সন্তানদের নিয়ে সমুদ্র ভ্রমণে যান রোনালদো। অন্তরঙ্গভাবে কাটানো মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দিও করেন। অর্ধ বা নামমাত্র পোষাকে তোলা সেসব ছবি ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপ করে কাড়ি কাড়ি টাকাও কামিয়ে নিচ্ছেন। এক দিকে আমোদ-প্রমোদ করে সময় কাটানো, অন্যদিকে সেই মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে টাকা কামানো, সুখ কাকে বলে!


নেইমার
এ মুহূর্তে নেইমারের জীবনে কোনো নারী আছে কি-না, নির্দিষ্ট করে নাম বলা যাচ্ছে না। তার মানে কিন্তু এই নয়, পিএসজির ব্রাজিলিয়ান তারকা ভালো নেই। বরং এটা বলা যায়, মাঠের বাইরে মহানন্দেই আছেন নেইমার। ওই যে কথায় বলে, পিছুটান না থাকাটাই বরং কারও কারও জন্য ভালো। স্বাধীনভাবে ছুটে যাওয়া যায় যেখানে খুশি, ফুর্তি করা যায় যে কারও সঙ্গে। পিছুটানহীন স্বাধীন নেইমারও বর্তমানে পার্টি-মাস্তি করে বেড়াচ্ছেন যেখানে যখন খুশি।

প্রায়ই তাকে আবিষ্কার করা যায় বিভিন্ন পার্টিতে। খবর হন দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পার্টি করে রাত কাটানোয়। উল্লেখ্য সেসব পার্টিতেই তার সঙ্গী হিসেবে থাকে নারীরা। তা একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক হিসেবে তিনি পার্টি করতেই পারেন; কিন্তু স্বাধীন নেইমার কখনো কখনো নিজের সেই অধিকার খাটান দলীয় ব্যস্ততার সময়ও এবং তা দলকে না জানিয়ে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য সমালোচিতও হন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় ক্লাব থেকে সাবধানও করা হয়; কিন্তু নেইমারের মতো তারকাদের জোর করে শৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ করা কঠিন। পিএসজিও নেইমারকে সেই শৃঙ্খলার শিকলে বাঁধতে পারেনি। উপলক্ষ পেলেই ক্লাবকে না জানিয়ে পার্টি করতে চলে যান। কখনো কখনো তো পার্টি করতে দেশ ব্রাজিলেও ছুটে যান।

এমনিতে নেইমারের জীবনে প্রেম কম আসেনি। অনেক নারীই এসেছেন তার জীবনে। ছোটবেলার প্রেমিকা ক্যারোলিনা দান্তাসকে বিয়েও করেছিলেন। তাদের ঘরে একটি ছেলেও আছে। ২০১১ সালে দুনিয়ায় আসা সেই ছেলের নাম ডেভি লুকা; কিন্তু তাদের সেই বিয়ে বেশি দিন টিকেনি। ছেলে ডেভি লুকাকে রেখেই সম্পর্ক ভেঙে চলে গেছেন ক্যারোলিনা দান্তাস। সেই সম্পর্ক ছেদ নিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। খর-পোষের টাকা আদায়ে নেইমারের আদালতের কাঠগড়াও তুলেছেন ক্যারোলিনা। 

যাই হোক, ক্যারোলিনার সঙ্গে সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পর ছেলে ডেভি লুকাকে নিয়ে বেশ কয়েকটা বছর একাকীই কাটিয়েছেন নেইমার; কিন্তু কত দিন আর মনকে বেঁধে রাখা। এরপর বেশ কয়েকজন নারীই এসেছে তার জীবনে। তবে যেমন হুট করে তারা এসেছেন, তেমনি হুট করেই চলেও গেছেন। তবে বারবার প্রেম ভেঙে গেলেও নেইমার কখনোই হতাশায় ভেঙে পড়েননি। বরং পুরনো সম্পর্ক ভাঙায় নতুন সম্পর্কের রাস্তা খুলে যাওয়ায় মনে মনে হয়তো পুলকিতই হয়েছেন! কিন্তু কিউবান-ক্রোয়েশিয়ান মডেল কন্যা নাতালিয়া বেরুলিচের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের পর গত বছর দেড়েকে নতুন করে নির্দিষ্ট কাউকে খুঁজে পাননি। যে শূন্যতা তিনি পুষিয়ে নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে পার্টি-মাস্তি করে; কিন্তু কত দিন আর এভাবে বাইরে বাইরে পার্টি করে বেড়ানো?

২৯ বছর বয়সী নেইমারের মন হয়তো বিশেষ একজনের বাঁধন চাইছে। তা একজনকে খুব মনেও ধরেছে ব্রাজিল তারকার। শুধু মনে ধরা নয়, ইতালিয়ান ফ্যাশন মডেল কায়রা নাস্তির পেছনে ফিল্ডিংও দিয়ে যাচ্ছেন নেইমার। ইতালিয়ান গণমাধ্যমের দাবি অন্তত সেরকমই। ইতালির গণমাধ্যমের খবর, অনেক দিন ধরেই ২৩ বছর বয়সী কায়রা নাস্তিকে নক করে যাচ্ছেন নেইমার। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কায়রা নাস্তির পোস্ট করা প্রতিটি ছবিতেই নাকি ‘নাইস’, ‘বিউটিফুল’, ‘ওয়াও’ জাতীয় বাহারি সব শব্দের মাধ্যমে মন্তব্য করে যাচ্ছেন নেইমার। এমনকি কায়রা নাস্তির সঙ্গে দেখা করার পুনপুন চেষ্টাও নাকি করে যাচ্ছেন তিনি; কিন্তু কায়রা নাস্তি পাত্তাই নাকি দিচ্ছেন না তাকে। কি করে পাত্তা দেবেন, কায়রা নাস্তি যে অন্য আরেকজনের বাহুডোরে বন্দি।


লুইস সুয়ারেজ
রোনালদো, নেইমারদের মতো বহু নারীতে আসক্ত নয় লুইস সুয়ারেজ। বরং খাঁটি বাঙালি ঘরানার অতি ভদ্র ছেলের মতো এক নারীতেই কাটিয়ে দিচ্ছেন জীবন। সোলম্যাট বলতে যা বোঝায়, লুইস সুয়ারেজ ও সোফিয়া বালবি ঠিক তাই। একে অন্যের হৃদয়ের জুটি হয়েই দিন কাটাচ্ছেন তারা। শুধু পরিপাটি করে ঘর-সংসার সামলে মাঠের বাইরের জীবনটা অমিয় ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া নয়, সত্যিকারের জীবনসঙ্গী হয়ে সোফিয়া বালবি বড় ভূমিকা রাখছেন সুয়ারেজের মাঠের জীবনেও।

হত-দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া সুয়ারেজ যে আজকের বিশ্বসেরা ফুটবলারদের একজন, তার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা এই সোফিয়া বালবিরই। ছোটবেলায় অতি-দরিদ্রতার কষাঘাতে বেড়ে ওঠা সুয়ারেজ অমিয় ফুটবল প্রতিভা নিয়েই জন্মেছিলেন; কিন্তু দরিদ্রতা নামের চাবুকের আঘাতে জর্জরিত সুয়ারেজ প্রায়ই উদাস মনে ঘুরে বেড়াতেন। কোনো কিছুই যেন ভালো লাগত না তার। এমনকি স্বপ্নের ফুটবলটাও ঠিক মতো খেলতেন না! মাঠে অন্যরা যখন খেলত, সুয়ারেজ উদাসিন মনে ঘুরে বেড়াতেন রাস্তায়। কখনো বা জনশূন্য, কোলাহল মুক্ত নির্জন পরিবেশে গিয়ে চুপচাপ বসে কাটিয়ে দিতেন বিকাল!

জীবনের এমন ভবঘুরেময় সময়েই আলোকবর্তিকা হয়ে সুয়ারেজের জীবনে আসেন বালবি। বয়স তখন ১৫। বালবির বয়সও সুয়ারেজের কাছাকাছিই। তো কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনের নদীতে সাঁতার কাটতে শুরু করা বালবি ভালোবাসা আর পরামর্শে উদাসিনতা দূর করে সুয়ারেজকে করেন ফুটবলমুখী। প্রেমিকার ভালোবাসার শীতল পরশে সুয়ারেজ লক্ষ্মী ছেলেটি হয়ে ফুটবলে মনপ্রাণ ডুবে দেন ফুটবলে। ব্যস, এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বরং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিভার জোরে ফুটবলার হিসেবে নাম কামাতে শুরু করেন সুয়ারেজ। পরের বছরই যোগ দেন উরুগুয়ের বিখ্যাত ক্লাব ন্যাসিওনালের যুব একাডেমিতে। 

এরপর কেবলই তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া। এই ন্যাসিওনালের হয়েই ২০০৫ সালে পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে অভিষেক হয় সুয়ারেজের। পরের বছরই দেশ উরুগুয়ে ছেড়ে সুয়ারেজ পাড়ি জমান ক্লাব ফুটবলের উর্বর ভূমি ইউরোপে। যোগ দেন ডাচ ক্লাব গ্রোনিনজেনে। সুয়ারেজের এই ইউরোপ যাত্রার পেছনেও বড় ভূমিকা ছিল প্রাণপ্রিয় বান্ধবী বালবির। কারণ প্রেমিক সুয়ারেজকে ফুটবলমুখী কিছুদিন পরই বালবিদের পরিবার পাড়ি জমায় ইউরোপে। ঠিকানা ঘাড়ে স্পেনের বার্সেলোনায়। তো বার্সেলোনায় বসে বালবিই প্রেমিক সুয়ারেজকে অনুপ্রাণিত করেন ইউরোপে চলে আসার জন্য।

সুয়ারেজও সেটাই করেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল বিশ্বখ্যাত বার্সেলোনায় খেলবেন। সুয়ারেজ বার্সেলোনার খেলার স্বপ্নটা হৃদয়ে গেঁথে নেন প্রিয়তমা বালবির জন্যই। বালবিরা যে বার্সেলোনায় থাকেন। তো প্রিয়তমার সঙ্গে থাকতে হলে তো তাকে বার্সেলোনাতেই যেতে হবে; কিন্তু বার্সেলোনার মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে খেলতে হলে তো নিজেকে বিশ্বসেরা হয়ে উঠতে হবে। সেই লক্ষ্যেই গ্রোনিনজেনে যোগ দেন। সেখান থেকে আয়াক্স হয়ে পাড়ি জমান ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে। এই লিভারপুলের জার্সি খেপাটে সুয়ারেজ নাম কামান বিশ্বজোড়া। যার ফল, ২০১৪ সালে লিভারপুল ছেড়ে যোগ দেন স্বপ্নের ঠিকানা বার্সেলোনায়। গিয়ে ওঠেন প্রিয়তমা বালবিদের বাসায়। 

প্রেমপর্বের পাট চুকিয়ে সুয়ারেজ-বালবি অবশ্য আয়াক্সে থাকতেই জীবনের পাকা জুটি গড়ে ফেলেন। বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী বনে যান ২০০৯ সালে। প্রেমিকা থেকে স্ত্রী হয়ে স্বামী সুয়ারেজের জীবনের নাটাইটা আরও শক্তহাতে কব্জা করেন বালবি। স্ত্রী বালবির যোগসাজশেই সুয়ারেজ পাল্টেছেন ক্লাব। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর বার্সেলোনাতেই আলাদা বাসা নেন সুয়ারেজ। যেখানে তারা গড়ে তুলেন সুখের সংসার। বর্তমানেও বার্সেলোনাতেই বাসা তাদের। যদিও সুয়ারেজ বার্সেলোনা ছেড়ে গত মৌসুমে যোগ দিয়েছেন অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদে। বার্সেলোনা থেকে মাদ্রিদ শহরের এই দূরত্ব সুয়ারেজ-বালবি জুটির জীবন রসায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। 

এখনো তাদের ভালোবাসা আগের মতোই অটুট। স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে মাঠের বাইরের জীবনটা পরম সুখেই পার করছেন সুয়ারেজ। হ্যাঁ, সুয়ারেজ-বালবির ঘরে আছে তিন সন্তান। এক মেয়ে, দুই ছেলে। টাকা-পয়সার প্রাচুর্য যেমন আছেন, তাদের ঘরে তার চেয়েও বেশি আছে সুখ। একই ক্লাবে খেলতেন বলে লিওনেল মেসির সঙ্গে তার গড়ে উঠে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। তাদের যে বন্ধুত্ব রূপ নিয়েছে পারিবারিক বন্ধুত্বে। জীবনটা উপভোগ করতে প্রায়ই তারা একে অন্যের বাসায় পার্টি বসান। সেই সুবাদে মেসির ছেলেদের সঙ্গে সুয়ারেজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও গড়ে উঠেছে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। তারা খেলাধুলা করেন একসঙ্গেই। সব মিলে অভিভাবকতুল্য স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে মাঠের বাইরের জীবনটা মহা আনন্দেই কাটাচ্ছেন সুয়ারেজ। পাশাপাশি মাঠের জীবনটাও যে সাফল্যের ঊর্ধ্বাকাশেই উড়ছে, সেটি তো ফুটবলপ্রেমীদের ভালো করেই জানা।  


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //