আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড়দের ঈদ উদযাপন

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। জগতের দুই মেরুর মানুষকে একসঙ্গে গেঁথে রাখার জন্য যদি কোনো সূত্র খোঁজা হয় তবে ফুটবল উপরের সারিতেই থাকবে। সুতরাং এমন একটা মহাজাগতিক খেলা ফুটবল যেটা ছড়িয়ে আছে সব ধর্মের ও সব বর্ণের মানুষের মাঝে। এ খেলা কতশত মানুষকে মিলিয়েছে একই বন্ধনে কিংবা আরেকটু বাড়িয়ে বললে গৃহযুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার খবরও আছে ফুটবলের কল্যাণে।

সুতরাং এ ফুটবল যেমন অতি দামি বুটজোড়া দিয়ে খেলতে পারে পশ্চিমের কোনো ধনীর দুলাল আবার সেই একই ফুটবল খালি পায়েই খেলতে পারে আফ্রিকার জনাকীর্ণ কোনো অঞ্চলের ক্ষুধায় ধুঁকতে থাকা ছেলেটি। এক সময় ধর্মীয় দিক থেকে আরবদের মাঝে ফুটবলের বিস্তার কিছুটা কম হলেও এখন তারাও মেনে নিয়েছে এ খেলায় কোনো জাতিভেদ নেই। সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপই তার প্রমাণ কিংবা ইউরোপিয়ান ফুটবলে আরবদের কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বিনিয়োগই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সুতরাং সর্বশ্রেণির খেলা ফুটবলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সব ধর্মের মানুষ। 

মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। নানা প্রান্তের মুসলমানরা নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপন করবেন সেটাই স্বাভাবিক। আর বিভিন্ন দেশের বা লিগগুলোতে খেলা মুসলিম ফুটবলাররাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে ফুটবলভক্তদের মধ্যে মুসলিম ফুটবলারদের ঈদ উদযাপন নিয়ে একটা কৌতূহল সবসময়ই কাজ করে। কেননা বড় বড় তারকা মুসলিম ফুটবলার কীভাবে তাদের ঈদ উদযাপন করেন তা জানার সুযোগ খুব কমই থাকে। সুতরাং জনপ্রিয় কয়েকজন মুসলিম ফুটবলার কীভাবে তাদের ঈদ উদযাপন করেন সেটাই এই প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু।

সাদিও মানে।

সাদিও মানে 

সর্বশেষ সিজনেই ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল ছেড়ে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখে নাম লিখিয়েছেন সেনেগালের তারকা ফুটবলার সাদিও মানে। ৯৭ ভাগ মুসলিমের দেশ সেনেগাল আর তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। তবে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে সাদিও মানের খুব কমই সুযোগ হয় নিজ দেশে ঈদ পালন করার। কেননা পবিত্র রমজান মাসসহ ঈদের সময়টাতে চলতে থাকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের ক্লাব মৌসুম। তবে ভিনদেশে থাকলেও রমজান মাসে রোজা রাখা থেকে শুরু করে ঈদ উদযাপন-কোনোকিছুই বাদ যায় না সাদিও মানের। লিভারপুলে থাকাকালে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ থেকে অনুশীলন বা ম্যাচের সময় রোজা রাখার অনুমতি নিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন মানে। ক্লাবে থাকলে ঈদের নামাজ পড়ে অন্য ফুটবলারদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। আর কখনো ছুটি কাটানোর সুযোগ পেলে মানে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটে যান নিজ দেশে। তবে যেখানেই থাকেন ঈদে মানের গায়ে শোভা পায় সেনেগালের জাতীয় পোশাক ‘বউবউ’। তাছাড়া অতি সাদামাটা জীবন-যাপনের জন্য সুনাম অর্জন করা মানের উপহার পৌঁছে যায় সেনেগালের দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের কাছে। 

মোহামেদ সালাহ 

মিশরের ফুটবলকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছেন লিভারপুলের তারকা ফুটবলার মোহামেদ সালাহ। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে সালাহর, যিনি গোল করতে পারলেই মুসলিম রীতিতে সিজদাহ্ দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন। এছাড়াও যতটুকু জানা যায় রমজানের সময় খেলার সূচি থাকলেও সালাহ বেশিরভাগ সময় রোজা রেখেই খেলা চালিয়ে চান। আর ক্লাবের সতীর্থদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন তিনি। তবে ছুটি পেলে ঈদ উদযাপনে চলে যান তার জন্মস্থান নাগরিগে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে, বিশেষ করে স্ত্রী ম্যাগি ও দুই কন্যা মক্কা ও কায়ানকে নিয়ে ঈদের দিন ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন সালাহ। তবে এবারও ঈদের সময়টাতে ক্লাব মৌসুমের ব্যস্ত সূচি থাকায় দেশে যাওয়া হচ্ছে না সালাহর। অর্থাৎ ভিনদেশেই প্রিয়জনের সঙ্গে এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবেন সালাহ।

করিম বেনজেমা।

করিম বেনজেমা

মুসলিম ফুটবলারদের মধ্যে এই মুহূর্ত যদি সবচেয়ে জনপ্রিয় কারও নাম মাথায় আসে তবে সেটা নিঃসন্দেহে করিম বেনজেমা। তার জন্ম ফ্রান্সের লিওঁতে হলেও তার মা-বাবা মূলত আলজেরিয়ান। একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবে বেনজেমা ইসলামের মূল স্তম্ভগুলো পালনে বেশ সচেষ্ট। ঈদের দিন বেনজেমা আলাদা করে কিছু না করলেও ভক্ত-সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিন শুরু করেন। নামাজ শেষে ক্লাবের কার্যক্রমে যোগ দেন। তবে সুযোগ পেলে পরিবারের সঙ্গেই দিনটি কাটানোর চেষ্টা করেন তিনি। বিশেষ করে ঈদের দিন বেনজেমার পরনে দেখা যায় বিশেষ পাঞ্জাবি, সঙ্গে খাবারের মেন্যুতে থাকে তার প্রিয় খাবার ‘কসকস’ (স্টার্চ জাতীয় উত্তর আফ্রিকান খাবার)।

পল পগবা।

পল পগবা 

গিনিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি ফুটবল তারকা পল পগবা। মায়ের কল্যাণে ২০১৯ সালে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে বেশ আলোচনার জন্ম দেন ৩০ বছর বয়সী জুভেন্টাসের এ তারকা ফুটবলার। তারপর থেকেই নিয়মিত সিয়াম পালন কিংবা হজ পালনে মক্কায় গমন করাসহ ইসলামের নানা রীতিনীতিতে বেশ সক্রিয় পগবা। সুতরাং অন্য সব মুসলিমের মতো পগবাও নিজের মতো করে পালন করেন মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। তবে ধর্মান্তরিত মুসলিম হিসেবে পগবা কীভাবে ঈদ উদযাপন করেন তা খুব বেশি জানা না গেলেও সবার আগে ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েই দিনটি শুরু করেন। নামাজ শেষে পগবা মায়ের সঙ্গেই দিনটি কাটান। 

এন’গোলো কান্তে।

এন’গোলো কান্তে 

১৯৮০ সালে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি থেকে অভিবাসী হয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমান কান্তের মা-বাবা। জন্ম প্যারিসে হলেও কান্তে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবা প্রয়াত হওয়ার পর মা ও দুই বোনের সঙ্গেই ঈদ পালন করতেন কান্তে। ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে তার বড় বোন নিয়ামা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছোট বোন, স্ত্রী জুড লিটলার এবং মায়ের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন কান্তে। তবে ২০১৭ সালে কান্তেকে মক্কায় গিয়ে ঈদ করতেও দেখা গিয়েছিল। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //