মিষ্টি মিষ্টি ঈদ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসছে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। মজার সব খাবার দিয়ে আতিথেয়তা না করলে তো আনন্দই থাকে না ঈদে। আর উৎসবের খাবারের তালিকায় মিষ্টি না থাকলে কি হয়! তাই ঈদের দিন রসুই ঘর মাতিয়ে রাখুন বিভিন্ন রকম মিষ্টি খাবারে। ঈদে মিষ্টি খাবারের কয়েকটি রেসিপি দিয়েছেন নাজিয়া ফারহানা...

কুনাফা

উপকরণ

লাচ্ছা সেমাই এক প্যাকেট, তরল দুধ আধা লিটার, মজেরেলা চিজ এক কাপ, চিনি স্বাদমতো, নারকেল কোরানো ১/৪ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক এক কাপ, কাস্টার্ড পাউডার এক চা চামচ, ঘি দুই টেবিল চামচ। 

প্রস্তুতপ্রণালি

নারকেল, চিনি ও ঘি দিয়ে ভেজে নিন লাচ্ছা সেমাই। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন হয়ে এলে কাস্টার্ড পাউডার, কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে নামিয়ে নিন। বেকিং মোল্ডে ঘি ব্রাশ করে এতে সেমাইয়ের উপরে দুধের মিশ্রণ ও চিজ দিয়ে আবার সেমাই দিন। ওভেনে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট বেক করুন। নামিয়ে চিনি সিরা ঢেলে ঠান্ডা করে উপরে কিশমিশ ও বাদাম কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

নারকেল দুধে ফালুদা 

উপকরণ

এক লিটার নারকেলের দুধ, এক কাপ সাবুদানা, ফালুদা মিক্স এক প্যাকেট, ইচ্ছামতো ফল কাটা দুই কাপ, ২/৩ ধরনের বাদাম সিকি কাপ, জেলাটিন, ফুড কালার, ফ্লেভার ও পছন্দের ফ্লেভারের আইসক্রিম।

প্রস্তুতপ্রণালি

১. প্রথমে দুধ ফুটিয়ে একটু ঘন করে নিতে হবে। এরপর এতে চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিন। চিনি গলে মিশে গেলে এতে সাবুদানা দিয়ে রান্না করুন। সাবুদানা প্রায় রান্না হয়ে এলে এতে নুডলস দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। সবটা রান্না হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখুন। 

২. জেলাটিন প্যাকেটের নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তুত করে নিন। যদি জেলাটিনের সঙ্গে রং ও ফ্লেভার দেওয়াই থাকে তবে আর ফুড কালার ও ফ্লেভার দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সাধারণত এক টেবিল চামচ জেলাটিন গুঁড়ার জন্য দুই কাপ পানি প্রয়োজন হয়। দুই কাপ পানিতে মিশিয়ে নিন দুই টেবিল চামচ চিনি। এতে এক টেবিল চামচ জেলাটিন এবং এক-দুই ফোঁটা ফুড কালার ও ফুড ফ্লেভার মিশিয়ে গরম করে নিন যতক্ষণ না জেলাটিন গলে মিশে যায় তরলের সঙ্গে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ছাঁচের ভেতর ঢেলে নিতে পারেন এই মিশ্রণ। প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন শেপের আইস কিউব ছাঁচ পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। অথবা সাধারণ একটি প্লাস্টিকের কনটেইনারে রেখেও ফ্রিজে জমিয়ে নিতে পারেন জেলাটিন। জমে গেলে এটাকে বের করে ইচ্ছেমতো শেপে কেটে নিন। বেশিরভাগ সময়ে ফালুদায় লম্বা ফালি করে অথবা ছোট কিউব করে কেটে জেলি পরিবেশন করা হয়। 

৩. বিভিন্ন ফল কেটে চিনি-পানির মিশ্রণে মাখিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন, এতে কালো হয়ে যাবে না। এর মাঝে থাকতে পারে আপেল, কলা, আঙুর, আনার, আম, তরমুজ। 

৪. পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম কুচি করে নিতে পারেন। এছাড়া তাওয়ায় একটু টেলে ভেঙেও নিতে পারেন। 

৫. ফালুদা তৈরির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো সাজানো। সুন্দর লম্বা কাচের গ্লাস প্রস্তুত করতে হবে ফালুদার জন্য। প্রথমে কয়েক রকমের ফল ১/২ চামচ রাখতে হবে গ্লাসে। এরপর সাবু ও নুডলসের মিশ্রণ ফ্রিজ থেকে বের করে গ্লাসের তিন ভাগের এক ভাগ পূর্ণ করতে হবে। এরপর এর ওপরে দিতে হবে জেলি। একের বেশি রঙের জেলি থাকলে তা দেখতে সুন্দর লাগবে। সবার উপরে আইসক্রিম, বাদামের মিশ্রণ এবং অল্প করে জেলি দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন ফালুদা। সবার উপরে একটি চেরি দিয়ে দিলে আরও ভালো লাগবে দেখতে।

অরেঞ্জ পায়েস 

উপকরণ

কমলালেবু খোসা ছাড়ানো ২ কাপ, দুধ এক লিটার, কাজুবাদাম ২/৩টি কুচি করা, পেস্তা বাদাম ২/৩টি কুচি করা, কাঠবাদাম ২/৩টি কুচি করা, চিনি ৪/৫ টেবিল চামচ, কিশমিশ ৪/৫টি, অরেঞ্জ ফুড কালার ১/২ ফোঁটা ও লবণ এক চিমটি।

প্রস্তুতপ্রণালি

প্রথমে একটি পাত্রে চিনি ও লবণ দিয়ে দুধ জ্বাল দিতে হবে। এমনভাবে নাড়তে হবে যেন দুধ লেগে না যায়। দুধ ক্রিমের মতো ঘন হয়ে এলে এতে অরেঞ্জ ফুড কালার যোগ করে দিন ১/২ ফোঁটা। এবার চুলা থেকে দুধ নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এবার খোসা ছাড়ানো কমলা ঘন দুধে মিশিয়ে নিন। এতে চাইলে কিশমিশ ও বাদাম মিশিয়ে দিতে পারেন খানিকটা। এবার ঠান্ডা হতে ফ্রিজে রেখে দিন ৩০ মিনিট।

আপেল সন্দেশ 

উপকরণ

গুঁড়া দুধ ১ কাপ, পাউডার সুগার আধা কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, এলাচ গুঁড়া ১ চিমটি, ফুড কালার প্রয়োজনমতো (লাল ও হলুদ) ও লবঙ্গ কয়েকটি।

প্রস্তুতপ্রণালি

প্রথমে প্যানে গুঁড়া দুধ, পাউডার সুগার, কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ নাড়ার পর যখন সব উপকরণ একসঙ্গে মিশে যাবে তখন প্রয়োজনমতো ফুড কালার (হলুদ) মিশিয়ে দিন। এবার এলাচ গুঁড়া দিয়ে নেড়ে দিন মিশ্রণটি। এভাবেই কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। যখন মিশ্রণ প্যানের গা ছেড়ে উঠে আসবে তখন নামিয়ে নিন। একটি পাত্রে মিশ্রণ ঢেলে হালকা ঠান্ডা করে নিন। এরপর হাতে ঘি মেখে আপেলের মতো গোল করে নিন। বেশি ঘি মাখবেন না হাতে, কারণ এতে সন্দেশ আপেলের আকারে তৈরি করতে পারবেন না। বারবার ভেঙে যাবে। যখন সবগুলো সন্দেশ আপেল আকৃতির করে তৈরি করা হয়ে যাবে; তখন আপেলের গায়ে ব্রাশ দিয়ে লাল ফুড কালার ব্যবহার করুন। আপেলের মুখে একটি লবঙ্গ বসিয়ে দিলেই  তৈরি হয়ে গেল আপেল সন্দেশ।

সেমাইয়ের লাড্ডু 

উপকরণ

লাচ্ছা সেমাই ১ প্যাকেট, নারকেল কোরানো ১ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক আধা টিন, প্রাণের সেফ ঘি ৬ টেবিল-চামচ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, এলাচি গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাজু, পেশতা ও কাঠবাদাম কুচি সিকি কাপ, জর্দার রং সামান্য (ইচ্ছা) ও চিনি (যদি লাগে)।

প্রস্তুতপ্রণালি 

সেমাই হাত দিয়ে ভেঙে একদম গুঁড়া করে ২ টেবিল চামচ  ঘিতে জর্দার রং দিয়ে ভেজে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। এবার প্যানে ৪ টেবিল ঘি দিয়ে অর্ধেক বাদাম কুচি ভেজে নিন। তারপর কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে নাড়তে নাড়তে এলাচি গুঁড়া দিয়ে আবারও নাড়তে থাকুন। এখন ভেজে রাখা সেমাই দিয়ে ভালো করে মেশান। তারপর গুঁড়া দুধ ও বাকি বাদাম দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে। চিনি দেওয়ার দরকার নেই যেহেতু কনডেন্সড মিল্কেই চিনি থাকে। তারপরও যদি লাগে তাহলে এই সময় চিনিটা দিয়ে দিতে হবে। কিছু সময় নেড়ে আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে গরম থাকতেই হাতে সামান্য ঘি বা তেল মাখিয়ে গোল গোল করে লাড্ডুর মতো আকার দিন। ঠান্ডা করে বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

নবাবি সেমাই 

উপকরণ 

লাচ্ছা সেমাই ২৫০ গ্রাম, দুধ ১ কেজি, মিল্ক পাউডার ২০০ গ্রাম, চিনি প্রয়োজনমতো, কর্নফ্লাওয়ার তিন চামচ, কনডেন্সড মিল্ক ৫০ গ্রাম, ক্রিম ৫০ গ্রাম।

প্রস্তুতপ্রণালি

কড়াইতে ঘি দিয়ে লাচ্ছা সেমাই ভেজে নিতে হবে। এবার চিনি ও মিল্ক পাউডার দিয়ে ভালোভাবে ভাজতে হবে। অন্য কড়াইতে দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিতে হবে। ৫ মিনিট পর কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তারপর চিনি দিন। ৫ মিনিট নাড়ার পর ক্রিম দিন। এবার কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে ঘন হয়ে ক্রিম ভাব এলে চুলা বন্ধ করে দিন। এবার একটি পাত্রে ভাজা সেমাই দিন। তার উপরে ক্রিম দিন। তার উপর সেমাই দিন। উপরে বাদাম কুচি ছড়িয়ে দিন। এরপর ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন। 

কাস্টারড 

উপকরণ

দুধ এক লিটার, ডিমের কুসুম দুইটা, কাস্টার্ড পাউডার তিন টেবিল চামচ, চিনি ১/২ কাপ বা স্বাদমতো, কিশমিশ দুই টেবিল চামচ, কাঠ বাদাম দুই টেবিল চামচ, ফল (কলা, আম, আপেল, আঙুর, লাল বা সবুজ চেরি ফল, ডালিম/আনার, স্ট্রবেরি) কিউব করে কাটা প্রায় ২ কাপ।

প্রস্তুতপ্রণালি

প্রথমে ডিমের কুসুম দুটি একটি বাটিতে নিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার কাস্টার্ড পাউডার দিয়ে ভালো করে মেশান এবং নরম মিশ্রণ তৈরি করুন। একটি পাত্রে দুধ নিন। অল্প আঁচে জাল দিন। দুধ একটু ঘন হয়ে এলে চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। ডিম ও কাস্টার্ডের মিশ্রণটি দুধের মধ্যে ঢেলে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটি একদম অল্প আচে রান্না করতে হবে এবং বিরতিহীনভাবে নাড়তে হবে তা না হলে কাস্টার্ড জমে যাবে। কাস্টার্ড হালকা ফুটে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। এরপর ঠান্ডা হলে ফ্রিজে রাখুন। খাওয়ার সময়  পছন্দমতো ফল দিয়ে পরিবেশন করুন।

আমের রসমালাই

উপকরণ

দুধ ১ লিটার, ভিনেগার বা লেবুর রস ১ কাপ, এলাচ ২টি, গুঁড়া করা চিনি দেড় কাপ, সুজি ২ চা চামচ, পানি পরিমাণমতো।

মালাইয়ের জন্য : আমের রস ২ কাপ, দুধ ২ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১ কৌটা, গোলাপ জল ৪-৫ ফোঁটা।

প্রস্তুতপ্রণালি

প্রথমে হাঁড়িতে দুধ ফুটিয়ে নিন। ভালোমতো ফুটলে ভিনেগার কিংবা লেবুর রস আধা কাপ ঢেলে দিন। দেখা যাবে দুধ ছানা হয়ে গেছে। যদি না হয় তাহলে আরও ভিনেগার কিংবা লেবুর রস দিয়ে দুধ থেকে ছানা তৈরি করে নেবেন। ছানা হয়ে গেলে এর থেকে পানি ফেলে দিন। এবার পানি দিয়ে ছানা ধুয়ে একটা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছানাগুলো ভরে পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখুন। এভাবে কমপক্ষে এক ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখবেন। এরপর ছানা নামিয়ে এর সঙ্গে সুজি বা আটা এবং এলাচ গুঁড়া খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার ছানা দিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করুন। ৩ কাপ পানিতে চিনি ঢেলে অন্য একটা হাঁড়িতে ১৫-২০ মিনিট জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করুন। এরপর চিনির সিরার ভেতর আস্তে আস্তে বলগুলো ছেড়ে দিয়ে আগুনের আঁচ কমিয়ে দিন। হাঁড়ির মুখ ঢেকে দিয়ে ১৫-২০ মিনিট জ্বাল দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার বলগুলো সিরা থেকে তুলে নিয়ে আলাদা একটা পাত্রে রাখুন। 

এবার মালাই তৈরি করতে দুধ জ্বাল দিন। দুধ ঘন হয়ে আসলে কনডেন্সড মিল্ক, আমের রস ঢেলে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন। এখন বলগুলো রান্না হতে থাকা অবস্থায় মালাইয়ের মধ্যে একটা একটা করে ছেড়ে দিন। আরও ৮-১০ মিনিট রান্না করুন। নামানোর আগে উপর দিয়ে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন আমের রসমালাই।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //