চোখ

চোখ দুটো জ্বলজ্বল করলেও শরীর দেখা যাচ্ছে না। এত ঘন অন্ধকার পৃথিবীতে কি নেমেছে কখনো! চারদিকে থমথমে, ভয় ভয় ভাব। আঁধার ভেদ করে ছাতিমের থই থই ঘ্রাণও নাকে আসছে না।

বাড়ির ওদিকটায় বাঁশবন। তার পেছনে পগার। আরও চাপ চাপ অন্ধকার। গা ছমছমে কালো কুণ্ডলী। সেই কুণ্ডলী ছাপিয়ে শুধু ওর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। চারপাশ থেকে জ্বলজ্বলে জোড়া জোড়া চোখ এগিয়ে আসছে। মিশমিশে কালোতেও জোড়াচোখ চেনা মনে হচ্ছে রাবেয়ার। খুব নিচু গলায় রাবেয়া জানতে চাইল, ‘কে ওখানে?’ কোনো উত্তর এলো না। শুধু অস্পষ্ট গোঙানির আওয়াজ ভেসে এলো। নিজের চোখ ডলল রাবেয়া। 

ঘুম থেকে উঠে আসা শরীরে এলোমেলো শাড়ি ঠিক করতে করতে আরেকটু এগিয়ে গেল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে রাবেয়ার। ভয়ে শরীর কাঁপছে। কাঁপা কণ্ঠে আবার বলল, ‘কে ওখানে?’ এবারও কোনো উত্তর এলো না। কোনো শব্দও হলো না। জোড়া জোড়া জ্বলজ্বলে চোখ ধীরে ধীরে দূরে সরতে থাকল।

মনের ভুল ভেবে বুকে ফুঁ দিল রাবেয়া। বাড়িমুখো পা বাড়াল। মনের জোর বাড়লেও শরীর ভারী ভারী লাগছে। অন্ধকারের কুণ্ডলীর মধ্যে মাথার চাঁদি থেকে তাপ বেরোচ্ছে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। চোখের সামনে ধাঁধার মতো জ্বলজ্বলে চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাঘের থাবার মতো ভয় বাসা বাঁধছে বুকের ভেতর।

ঘরের দিকে পা ফেলতেই মুখের সঙ্গে কী যেন ধাক্কা খেল। চমকে উঠল রাবেয়া। সটান দাঁড়িয়ে পড়ল। কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চাইল, ‘কে ওখানে?’ কোনো সাড়া এলো না। অন্ধকারে হাতড়ে ঠাওর করতে চাইল কী ওটা। কাছে গিয়ে টের পেল লেবুগাছের ডালে ঝুলে আছে শ্যামলীর ব্রা। মনের ভয় দূর হলেও ভারী শরীর নিয়ে ঘরে ঢুকল রাবেয়া। দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে শুয়ে পড়ল। এমন মিশমিশে অন্ধকার, কনকনে অন্ধকার এর আগে দেখেনি রাবেয়া। 

রাতের গর্ভ ছিঁড়ে ভোরের আলো ফুটবার সঙ্গে সঙ্গেই পাশের বাড়ির মালেকার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল। গমগমে লোকজনের ভিড় ঠেলে রাবেয়া দেখতে পেল বাঁশবনে ঝুলে আছে শ্যামলীর দেহ। স্তনজুড়ে থাবার থকথকে চিহ্ন। চোখের মণি দুটো তখনো চিকচিক করছে তার।

অন্ধকার কুণ্ডলীর সেই জ্বলজ্বলে চোখগুলো আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //