ইলিশ মাছের প্রাণ

বাজারে ইলিশের অনেক দাম এবং পকেটের অবস্থাও নড়বড়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল রফিকুল ইসলামের নিজেরও আছে অ্যালার্জির সমস্যা। তাই ইলিশ মাছ খাওয়া থেকে দূরে থাকাই তার জন্য ভালো। কিন্তু ভালোর চিন্তা কে কবে করেছে! 

রফিকুল তাই দুদিন পরপর ইলিশ মাছ কেনে। আর কেনে পাতা পাতা এলাট্রল। ইলিশ মাছ খেয়ে অ্যালার্জির ওষুধ খেয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে। এই বাজারে অন্য কারও ঘন ঘন ইলিশ কেনার সামর্থ্য না থাকলেও রফিকুলের কোনো সমস্যা হয় না। জনগণের জানমালের হেফাজতের জন্য সে কত ত্যাগ স্বীকার করে আর তার জন্য তারা কিছু করতে পারবে না? জনগণ কিছু না করুক; কিন্তু সে তো আর নিজের পাওনা ভুলে যেতে পারে না। তাই পকেটে কখনো তার টান পড়ে না।

দুদিন হয়ে গেল ইলিশ খাওয়া হয়নি। আজ কেনার ইচ্ছা। আজকের ইলিশের টাকাটা কার কাছে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন সেটাই চোখ কুঁচকে দেখে সে। এই যে আসছে অল্পবয়সী ছেলে, দিনদুনিয়া সম্পর্কে যেন বা ঠিকঠাক ওয়াকিবহাল নয়। রফিকুল হাঁক ছেড়ে ডাকে। ছেলেটি চমকে ওঠে তাকায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ পোশাক দেখে। অজানা আশঙ্কায় মুখটা ছোট হয়ে যায় তার। রফিকুল এগিয়ে যায় দেখি বলে ব্যাগ খুলতে বলে। তার মুখ হাসিতে ভরে যায়। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে, এটা কী?

ছেলেটির এই বস্তু দেখার কথা না, ফলে সে অবাক হয়। রফিকুল আবার বলে, গাঁজা কোত্থেকে নিছস? এই বয়সে গাঁজা! চল তোরে থানায় চালান করে দেব।

গাঁজার কথা, থানার কথা শুনে ছেলেটা হাউমাউ করে কেঁদে পড়ে। তাতে রফিকুলের কিছু আসে যায় না। কলার চেপে পাশে নিয়ে যায়। পকেটে বেশি কিছু ছিল না। হাজার পাঁচেক ছিল মাত্র। মা হাসপাতালে। ওষুধের টাকা বললেও কয়েকটা থাপড় দিতেই পালিয়ে বাঁচল দেবদূত। ইলিশের ব্যবস্থা হয়ে গেল আজকের মতো।

বাড়ি এসে মাছ দুটো ধরিয়ে দিল শায়লার হাতে। অন্য লক্ষ্মী বউদের মতোই শায়লাও কখনো রফিকুলের আয়-ব্যয় নিয়ে কখনো প্রশ্ন করে না। রান্নাঘর থেকে শায়লার চিৎকার শুনে রফিকুল দৌড়ে যায়। কী হয়েছে?

আরে দেখো, ইলিশ মাছ এখনো জ্যান্ত।

রফিকুল দেখে, কথা সত্য। শুধু জ্যান্ত না, জিওল মাছের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ঘটনা দেখে শায়লা আর মাছ কাটার চিন্তাও করতে পারে না। রফিকুল জানত এই দিন তারে অবশ্যই দেখা লাগবে; কিন্তু কার টাকায় যে এত আগুন তা এখন কীভাবে খুঁজে বের করবে? ঘরে কিছু টাকা রাখা ছিল। নিয়ে বের হয় রফিকুল। যে পথে বাড়ি এসেছিল সেই পথেই সে ফিরে যেতে থাকে। ডিউটির জায়গায় এসে দেখে দেবদূত দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা না বলে, তার হাতে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দেয় রফিকুল। ছেলেটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে যায়। পকেটে বেজে ওঠে ফোন। শায়লা।

-মাছ আর নড়াচড়া করতেছে না। এখন এটা কেটেকুটে রান্না করব?

-দরকার নেই। আমি ওল, কচু-যা পাই নিয়ে আসতেছি। ইলিশ মাছ ফেলে দাও ড্রেনে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //