বিন্নি বলল, ‘মা দেখো বশিষ্ঠজীর দেওয়া অ্যালোভেরা গাছটা মনে হয় মরে যাচ্ছে। রোজই তো জল দিই আমি। তাও কেন মরে যাচ্ছে মা?’
আমি সুপ্তি, তিন্নি আমার বারো বছরের মেয়ে। আমার বরের নাম মোহিত। মোহিত যাদব। বিহারি ছেলে। বুঝতেই পারছেন, প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম।
আমার এবং মোহিতের, দুই বাড়ি থেকেই চূড়ান্ত আপত্তি ডিঙিয়ে প্রেমের আকাশে ভাসতে ভাসতে বাড়ি ছেড়েছিলাম দুজনই। চোখে তখন রামধনু রঙের পট্টি।
মোহিতের ছোটখাটো একটা কাপড়ের ব্যবসা ছিল। মূলত শাড়ি, পরে সালোয়ার কামিজের পিসও রাখতে শুরু করেছিল। হাওড়ার ডোমজুড়ের দিকে ছিল ওর দোকান। দোকানের কাছাকাছি একটা দু-কামরার একতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার পাতলাম দুজনে।
দু-বাড়িই আমাদের ত্যাজ্য করে দিল। পাঁচটা নয়া পয়সাও পেলাম না কোনো তরফ থেকে। বুঝে গেলাম, যা করতে হবে নিজেদেরই করতে হবে।
স্থানীয় একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াতে ঢুকলাম। গ্র্যাজুয়েশন করা ছিল তাই ওটুকু জুটল। মাইনে খুবই কম। কিন্তু লাভের লাভ যেটা হলো, কিছু প্রাইভেট টিউশনের অফার পেলাম এবং নিলাম। একটাই শর্ত, আমার বাড়ি এসে পড়তে হবে।
ছোট থেকেই গাছ ভালোবাসতাম। যৌথ পরিবারে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী যিনি, তিনি ছাড়া কারোর একার শখ তেমন প্রাধান্য পায় না। তাই গাছের টব বসাতে এত জনের অনুমতি নিতে হতো যে ওসবের ধারপাশ দিয়েই যেতাম না।
বিয়ের পর বেশ কয়েকটা পাতাবাহার আর জল ছাড়া বিশেষ যত্ন লাগে না, এরকম কয়েকটা ফুলের গাছ আনলাম। ভাড়া বাড়ির রঙচটা দেয়ালও দেখতে ভালো লাগত যখন ফুল ফুটত।
বিয়ের ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই বুঝলাম মা হতে চলেছি। শিরশিরে অনুভূতি দোলা দিয়ে গেল শরীরজুড়ে। দোকান থেকে ফিরতেই খবরটা দিলাম মোহিতকে। মোহিতের মুখটা ঝলমলিয়ে উঠল। বলল, ‘বড় করে ছেলের এক বছরের জন্মদিন করব।’
ধাক্কা খেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর যদি মেয়ে হয়?’ মোহিত বুঝল ওর বক্তব্যে আমি খুশি হইনি। তড়িঘড়ি বলল, ‘আরে আমি কথার কথা বলেছি। মেয়ে হলেও আমি পার্টি দেব।’ মেয়ের কথা শুনে আমি ওর মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছি। আমার দৃষ্টি খুব তীক্ষ্ণ, এড়ানো মুশকিল। কেবল মন পড়তে পারি না, এই যা।
মেয়ে হলো আমার। শুকনো মুখে কাঠ হেসে মোহিত দাঁড়াল আমার বেডের সামনে। বলল, ‘খুব সুন্দর হয়েছে রানী বেটি। তোমার মতোই।’
এর পরের ঘটনাপ্রবাহ একেবারেই সিনেম্যাটিক নয়। মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে স্কুলের চাকরিটা ছাড়লাম। প্রাইভেট টিউশনগুলো করছিলাম।
মোহিত ইদানীং মদ খাওয়া শুরু করেছে। জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘এত চাপ না গো, সামান্য খেলে একটু হালকা লাগে।’ চাপের কারণ আমি আর জানতে চাই না। মেয়ে হয়েছে বলে চাপ কি? ছেলে হলে ঘরে দহেজ আসত, মেয়েকে তো দহেজ দিতে হবে। সে তো মোহিতদের নিয়ম। আমি কক্ষনো যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেব না।
পাড়ার অনেকের সঙ্গেই আলাপ পরিচয় হয়ে গেছে এখন। তার মধ্যে একজন বয়স্ক মানুষ আছেন গুরু বশিষ্ঠ। একটা আশ্রমের ইনচার্জ উনি। দেখলেই ভক্তিভাব জাগে মনে। মাঝেমধ্যে এসে খোঁজ নিয়ে যান। বিন্নিকে খুব স্নেহ করেন।
একদিন হাতে করে একটা টব নিয়ে এসে বললেন, ‘সুপ্তিমা, আমাদের আশ্রমে প্রচুর ঘৃতকুমারী গাছ হয়েছে। তুমি গাছ ভালোবাস তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।’
আমি দেখলাম, ওনার হাতে একটা মাঝারি মাপের টবে অ্যালোভেরা গাছ। অ্যালোভেরাকেই বাংলায় ঘৃতকুমারী বলে তাহলে। গাছটা কচি। পাতাগুলো তখনো পুরুষ্টু হয়নি। লিকলিক করছে।
বশিষ্ঠজী বললেন, ‘এই গাছ ঘরে রাখা ভালো।’ আমি ওনাকে প্রণাম করে বললাম, ‘ধন্যবাদ গুরুজী। আপনি খেয়াল করে আমার জন্য এনেছেন, আমার খুব ভালো লাগল।’
ভাড়া বাড়িতে কতটুকুই বা জায়গা। এক চিলতে বারান্দায় সার দিয়ে কিছু গাছ রাখা আছে। আর একটা টবও রাখার জায়গা নেই। তাই শোবার ঘরে খাটের পাশের জানলার বাড়ানো অংশটায় রেখে দিলাম। আলো-বাতাস পাবে, এই ভালো। গাছটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ঘৃতকুমারী নামটা বড্ড বড়। আমি তোর নাম দিলাম কুমারী।’
বিন্নির দায়িত্ব ছিল গাছে জল দেবার। ও নিয়ম করে সে দায়িত্ব পালন করত। ইতিমধ্যে মোহিতের স্বভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছি। ও মনে হয় গোপনে ওর বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
একদিন রাতে আদর করতে করতে আমাকে বলল, ‘দেখো সুপ্তি, আমাদের আর একটা সন্তান নেওয়া উচিত। বিন্নিটারও সঙ্গী হবে আবার ফ্যামিলিও কমপ্লিট হবে। এক মেয়ে, এক ছেলে। তাই না?’
‘আবার যদি মেয়ে হয়? ছেলে হবার কোনো গ্যারান্টি আছে? তাছাড়া, একটা সন্তান বড় করতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে, দ্বিতীয় জন এলে সামলাতে পারবে?’
মোহিত কোনো উত্তর না দিলেও ওর চোখেমুখে একটা ক্রূরতা নজর এড়ালো না আমার। ইদানীং মোহিত বেশি সময়টাই বাইরে থাকে। বলে, ব্যবসা বাড়াবার চেষ্টায় এদিক ওদিক যাচ্ছি। আমার কেন জানি না, অন্য রকম সন্দেহ হয়। কেবল মাত্র সন্দেহের বশে তো আর কাউকে দোষী করা যায় না। তাই চুপ করে থাকি।
বিন্নি যেদিন কাঁদো কাঁদো হয়ে ঘৃতকুমারীর কথা বলল, সেদিন গাছটার দিকে ভালো করে নজর দিলাম। মাটিতে হাত দিয়ে দেখলাম, জবজব করছে জলে। পাতাগুলো কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতদিন ভালো করে লক্ষ্য করিনি। মন মেজাজ ভালো থাকে না আজকাল।
পাশে দাঁড়িয়ে বিন্নি ঘেনিয়েই যাচ্ছে, ‘ও মা, তুমি কিছু একটা করো না গাছটা যাতে মরে না যায়।’ আমি হেসে ফেললাম, ‘আমি কি গাছের ডাক্তার!’ তাও মেয়েটার শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘দেখছি চেষ্টা করে। আমি না বলা পর্যন্ত তুই এই গাছে জল দিবি না। মনে হচ্ছে অতিরিক্ত জলে গোড়া পচে যাচ্ছে।’
বিন্নি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমি কুমারীর পাতাগুলোয় হাত বুলিয়ে বলি, ‘সেরে ওঠো তুমি আমার প্রিয় কুমারী। খুব ভালোবাসি তোমাকে।’ যে পাতাটা সবচেয়ে লম্বা, সেটাকে তুলে ধরে আলতো চুমু খাই।
হঠাৎ করেই ছোটকার ফোন আসে। আমি খানিকটা অবাক হই। এতকাল কেউ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। আমিও জেদের বশে সম্পর্ক জোড়া দেবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিনি। অসম্ভব মন খারাপ হলে চানের সময় হাউহাউ করে কেঁদেছি। মগ মগ জল আমার কান্না ধুয়ে দিয়েছে। চিরকালই আমি একগুঁয়ে।
‘ছোটকা, কতদিন পর ফোন করলে! ভালো আছ?’
‘আজ সকাল সাতটা চল্লিশ মিনিটে বড়দা চলে গেছেন। খবরটা জানাবার জন্য ফোন করেছি।’
‘বাবা?’ কী বলছ ছোটকা, কী হয়েছিল বাবার? আমাকে একটু জানালে না আগে, একবার দেখে আসতাম!’
ওপ্রান্তে ফোন কাটার আওয়াজ পেলাম। এখনো আমি ব্রাত্য ও বাড়িতে। ঢুকতে দিক বা না দিক, আমি যাব।
মোহিতকে ফোন করে জানাতে ও বলল, ‘তুমি চলে যাও, আমি তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করছি। বিন্নিকে বোলো হুট করে যেন দরজা না খোলে।’
প্রায় তেরো বছর পর বাবার বাড়ি গেলাম। কত কিছু পালটে গেছে। মনে হচ্ছিল অচেনা বাড়িতে ঢুকছি। আত্মীয়দের কৌতূহলী চোখ জরিপ করছিল আমায়। কিন্তু ঢুকতে বাধা দিল না কেউ। অনেক কষ্ট, দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। মনের ওজন তখন কয়েকশ গুণ বেশি।
বাড়ি ঢুকতেই মোহিত বলল, ‘তোমাদের বাড়ি গেছিলে না শ্মশানে?’
এক কথায় উত্তর দিলাম, ‘বাড়ি।’
‘যাক, এনট্রি পেলে তাহলে। এবার যাতায়াত করতে পারবে। বাবা তো চলে গেল, এবার মা নিশ্চই মেয়ের বিয়ের পাওনা গণ্ডাগুলো মিটিয়ে দেবেন।’
আমি হতবাক হয়ে তাকালাম মোহিতের দিকে। এই পরিস্থিতিতে কেউ এরকম কথা বলতে পারে? মোহিত বুঝতে পেরে কথা ঘোরাল, ‘আমি ইয়ার্কি মারছিলাম। সিচুয়েশনটা একটু লাইট করার চেষ্টা করছিলাম।’
আমি আর একটাও কথা না বলে ঘরে ঢুকে কুমারীর কাছে গেলাম। ওর শীতল পরশ আমাকে আরাম দেয়। রোজ ওকে আদর করি, আজ করা হয়নি। একটু হলেও কুমারীর চেহারায় পরিবর্তন এসেছে। ওর কাছে দাঁড়িয়ে খানিক কাঁদলাম। লম্বা পাতাটা তুলে বুকের কাছে ধরলাম। মনে হলো যেন হাত বূলিয়ে দিল আপন কেউ।
কুমারী এখন অনেক সতেজ। বিন্নিকে বলেছি সপ্তাহে এক দিন জল দিতে। আজ যখন আদর করছিলাম কুমারীকে, ওর একটা পাতা কেবলই আমার বাঁ হাতের পাতায় এঁটে বসছিল। কারণটা বুঝতে পারছিলাম না।
পরের দিন হঠাৎই দেয়াল আলমারি খুলতে গিয়ে কাঠের বদলে কাচে হাত পড়ল আর সেটা ভেঙে হাতে ঢুকে গেল। বাঁ হাতের পাতার ওপরে, ঠিক যেখানে গত রাতে কুমারীর একটা পাতা চেপে বসেছিল। দৌড়ালাম ডাক্তারের কাছে। চারটে স্টিচ পড়ল।
মোহিত যে ওর বাড়ির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে সেটা বুঝে গেলাম অনায়াসে। ও সেদিন স্নানে ঢুকেছিল। অন্য সময় মোবাইলটা সাইলেন্ট মোডে উলটো করে রেখে দিয়ে যায়। কিন্তু আজ ভুলে গেছে। ফোন রিং হতেই তাকিয়ে দেখি ‘মাইয়া’। মোহিতের মা।
এ ছাড়া আরও একটা ব্যাপার সম্পর্কে ক্রমশ ধন্দ কাটছে আমার আর সেটা হলো, ওর জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী এসেছে। মদ খাওয়াও বেড়েছে। টলতে টলতে বাড়ি ফেরে এক একদিন। আমার অসহ্য লাগে। অশান্তির ভয়ে আমি ওর সঙ্গে কথা বলা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছি।
বিন্নিকে ভালো একটা বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে দেব এমনই চিন্তাভাবনা করছি। এই পরিবেশে থাকলে ওর মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে। খরচের একটা ব্যাপার আছে। মেয়ের জন্য মোহিতের তো সেটুকু করা উচিত।
কুমারী এখন বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। সেদিন ওর দিকে পেছন ফিরে কিছু একটা করছিলাম। পিঠের মাঝখানে সুড়সুড়ি লাগতেই চমকে উঠি। ঘুরে তাকাতেই বুঝলাম, কুমারীর কোনো একটা পাতা পিঠে লেগেছে। সেই সেঁটে যাওয়া অনুভূতি। জোর করে ঘুরে পাতাটায় হাত বুলিয়ে আদর করে রান্নাঘরে চলে যাই।
দুদিন বাদে রাত্রে শুতে যাবার সময়ে বিন্নি বলে ওঠে, ‘মা তোমার পিঠের মাঝখানটা ওরকম লাল কেন? কিছু কামড়েছে?’
‘হতে পারে। খুব চুলকাচ্ছিল। আমি তোর স্কেলটা দিয়ে বেশ করে চুলকেছি। মশা বা পিঁপড়ে কামড়েছে হয়তো।’
‘না মা, কেমন যেন দানা দানা হয়ে আছে। একটু বোরোলীন লাগিয়ে দেব?’
পিঠের সেই অংশ ঘায়ের মতো হতে আবার গেলাম ডাক্তারের কাছে। দেখেশুনে উনি বললেন, ‘কোনো বিষাক্ত পোকা চেটেছে বা কামড়েছে।’
সেই রাতে আচমকা আমার মনে হলো, কুমারী কি কোনো আগাম বিপদের সংকেত দেয় আমাকে? যেখানে যেখানে ও চেপে বসে, সেখানেই কিছু না কিছু বিপদ ঘটছে!
মোহিতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় তলানিতে। এক ছাদের নিচে আছি এই পর্যন্ত। বিন্নিকে বোর্ডিঙে দিতে রাজি হয়েছে মোহিত। কারণ ও থাকলে মোহিতের অসভ্যতা করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। মেয়ে বড় হচ্ছে।
অনেক চেষ্টা করে একটা নার্সিং হোমে রিসেপশনিস্টের কাজ জোগাড় করেছি। রবিবার তিনটি টিউশন করি। নিজেকে আবার ব্যস্ত করে ফেলেছি।
আগে জলখাবারে এটা সেটা বানাতাম। এখন ব্রেড টোস্ট আর ডিম সেদ্ধই রোজ চালাই। বিন্নি বোর্ডিঙে চলে গেছে দিন পনেরো হবে। বড্ড কাঁদছিল যাবার সময়। প্রতি সপ্তাহে দেখা করব আর চিকেন মোমো খাওয়াব এই শর্তে রাজি করিয়েছি।
সেদিন পাউরুটি সেঁকছিলাম, পেছনে মোহিত এসে দাঁড়াল।
‘তোমাকে একটা কথা বলার আছে সুপ্তি।’
‘বলো।’
‘আমি ডিভোর্স চাই।’
ইলেকট্রিক শক খাবার মতো কেঁপে উঠলাম। এতটা ভাবিনি।
ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’
‘অপর্ণাকে বিয়ে করতে চাই।’
মাথায় রক্ত চড়ে গেল। পাউরুটি দুটো পুড়ে গেছে। গ্যাস বন্ধ করে ঘুরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘আমাকেও তো তুমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে। তার কী হলো?’
‘বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছে ছেলের জন্য। তুমি তো আর বাচ্চা নিতে দিলে না।’
‘ব্যস? এই জন্য তুমি ডিভোর্স চাইছ? দারুণ তো! বেশ। তুমি তোমার কথা বলেছ। এবার আমারটা শোনো। আমি ডিভোর্স দেব না। কিছুতেই না। তোমার জন্য আমি বাবা মা, সব কাছের মানুষকে ছেড়ে এসেছিলাম। এখন তোমার শখ মেটাতে নিজেকে বলি দেব? নো, নেভার।’
চুপচাপ ঘরে চলে যায় মোহিত।
ইদানীং মোহিত গভীর রাতে বাড়ি ফেরে। রাতের খাবার বাড়িতে খায় না। মনে হয়, রাতে থাকার জায়গা নেই বলেই বাড়ি ফেরে। না হলে ফিরতই না। এভাবেই চলছিল।
কুমারী আজ জল পাবে। মগে করে জল দিচ্ছিলাম গোড়ায়। পাতাগুলো অনেকটা ছড়িয়ে গেছে। আমার বুকে ঠেকে যাচ্ছে কয়েকটা। তার ভেতর একটা আমার গলার কাছে উঠে এসেছে। আবার সেই চেপে বসার মতো। এবার একটু ভয় পেলাম। গলায় আবার কিছু হবে নাকি!
ভয়ানক একটা চিন্তা গ্রাস করল আমাকে। গলায় কী হতে পারে? গলা ব্যথা? সে তো এমন কিছু নয়। আর... আর... আমি কি খুন হয়ে যাব? মোহিত কি গলা কেটে দেবে আমার? না হলে আর কীই বা হতে পারে গলায়। কুমারী বিপদের আগাম সংকেত দিতে পারে কিন্তু আটকাতে পারে না। মাকে জানাব বা ছোটকাকে? কিন্তু তেমন যদি কিছু না হয় তা হলে তো যা-তা ব্যাপার হবে!
আমি জানি না আমি কী করব। এখন রাত তিনটা বাজে। মোহিত ঘুমোচ্ছে। আমি জেগে আছি। আচ্ছা, ও আমাকে মারার আগে আমিই যদি ওকে শেষ করে দিই। ও এখন আগাছা হয়ে গেছে। বাবা বলতেন, আগাছা নির্মূল না করলে ছেয়ে যায়। শুয়ে ছিলাম, উঠে বসলাম বিছানায়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : আগাছা চুমকি চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh