‘ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত’

ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। 

তিনি বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনের জন্য আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দায়িত্ব পালন করি। কয়েকজন সাংবাদিক উক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচনে আমার সাফল্য ও ব্যর্থতা জানতে চান। এতো সংক্ষিপ্ত সময়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। 

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে আমার কথা’ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন  

তিনি বলেন, উল্লিখিত নির্বাচনে তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সর্বদা বলে এসেছি- জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়। তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে সহিংসতা রোধ করা গেল না। নির্বাচনে ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরই দায় এসে পড়ে। তবে নির্বাচনের সকল দুর্ঘটনা, অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের পুনরাবৃত্তিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগভাবে দায়িত্বপালনের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এজন্য যারা দায়ী, প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের আটক করা হয়েছে। যারা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরও আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আরো অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে। সহিংসতারোধে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি এবং হবে না। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তা পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের টার্নআউট মোটামুটি ভালো ছিলো, শতকরা ৬৯.৩৪ ভাগ। কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে ৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত হওয়া এই নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে। অন্যদিকে নয়টা পৌরসভায় তিনজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই, সেহেতু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচিত হওয়া বলা যায় কি?- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে বহুদলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ অনিবার্য। ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতাও আমার কাছে গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত মনে হয়। এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা জড়িত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যতীত এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

১৫ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’-এ মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নীরবতা আমাকে হতাশ করেছে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সামিল হতে অনীহা প্রকাশ করছি?

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //