১২ জেলায় হারলো আওয়ামী লীগ

দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১২ জেলায় চেয়ারম্যান পদে হেরেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। একটিতে বিজয়ী হয়েছে জাতীয় পার্টি। বাকি ৪৫টিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এর মধ্যে ২৬টিতে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা।

এর আগে কোনো ধরনের সংহিসতা ছাড়াই দেশের ৫৭টি জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়। আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর ২টায় শেষ হয়। সম্পূর্ণ ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ ভোট এক হাজার ৪০০টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করে ইসি। নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবি করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এবারের জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ৯২ জন। সদস্য পদে এক হাজার ৪৮৫ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬০৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫৭টি জেলায় সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৪৮, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৬৬টি। ভোটকেন্দ্র ৪৬২টি ও ভোটকক্ষ ৯২৫টি। মোট ভোটার ছিলেন ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। কেবল স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দুটি জেলা ভোলা ও ফেনীতে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় ভোট হয়নি। বাকি দুই জেলা নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

এ নির্বাচনে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৬৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করে সিইসি বলেন, শুরু থেকেই আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও থেকে সহিংসতা-গোলযোগ-গণ্ডগোলের তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। কেন্দ্রগুলো থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।

সিসিটিভির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকে নতুন অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আগামীতে এ অভিজ্ঞতা আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেবে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ভোটাররা এখন সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেন।

তিনি বলেন, গাইবান্ধা নির্বাচন সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে গুরুতর অনিয়ম লক্ষ্য করেছি। কমিশন বাধ্য হয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান থেকে একটা মেসেজ এসেছে। যেহেতু নির্বাচন সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাই অনিয়ম হলে সেটি বন্ধ করে দেওয়া যাবে। আমাদের মনে হয় এর একটি পজিটিভ ইমপ্যাক্ট এই নির্বাচনে পড়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী যারা
রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, রাজবাড়ীতে এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ, খুলনায় শেখ হারুনুর রশীদ, মানিকগঞ্জে অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, গাইবান্ধায় আবু বকর সিদ্দিক, যশোরে সাইফুজ্জামান পিকুল, নড়াইলে অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, ময়মনসিংহে অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, নেত্রকোণায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল, সাতক্ষীরায় নজরুল ইসলাম, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, গাজীপুরে মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, জয়পুরহাটে খাজা সামছুল আলম, চুয়াডাঙ্গায় মাহফুজুর রহমান মনজু, কি‌শোরগ‌ঞ্জে অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আল মামুন সরকার, নীলফামারীতে মমতাজুল হক, হবিগঞ্জে ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, বগুড়ায় ডা. মকবুল হোসেন, চট্টগ্রামে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, কুষ্টিয়ায় মো. সদর উদ্দিন খান এবং মাগুরায় পঙ্কজ কুমার কুন্ডু।

এছাড়া ২৬টি জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। জেলাগুলো হলো-ফেনী, ভোলা, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, ঝালকাঠী, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট।

স্বতন্ত্র থেকে বিজয়ী যারা
ফরিদপুরে শাহাদাত হোসেন, নরসিংদীতে ইশরাত উদ্দিন আহমেদ মনির, পঞ্চগড়ে আব্দুল হান্নান শেখ, পটুয়াখালীতে অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, মেহেরপুরে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, সুনামগঞ্জে নুরুল হুদা মুকুট, রংপুরে বীরমুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, চাঁদপুরে ওচমান গণি পাটওয়ারী, ঝিনাইদহে ড. হারুন অর রশীদ, কক্সবাজারে শাহীনুল হক মার্শাল এবং শেরপুরে হুমায়ুন কবির রোমান।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে দিনাজপুরে মো. দেলওয়ার হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //