বিসিএসে ধৈর্য্য ধরে রাখাটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং: ফারাজ হাবীব খান

৪১তম বিসিএস-এ অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ফারাজ হাবীব খান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে তিনি কৃষি ও পরিবেশ অডিট অধিদপ্তরের অডিটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। 

ফারাজ হাবীব খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায়। ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন ফারাজ। প্রথমে বিসিএস পরীক্ষা না দিতে চাইলেও, পরে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া বাবার প্রচ্ছন্ন স্বপ্নকে সত্যি করতে ও মায়ের অনুপ্রেরণায় বিসিএস-এ অংশ নেন এবং সফল হন। 

সম্প্রতি সাম্প্রতিক দেশকালের সহ-সম্পাদক তৌসিফ আহমেদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন নানা বিষয় নিয়ে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল: আপনি ৪১-তম বিসিএসে অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। জানতে চাই কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল সামগ্রিক পথচলা?

ফারাজ হাবীব খান: চূড়ান্ত ফল পাবার আগ পর্যন্ত সবকিছুই অনিশ্চিত ছিলো৷ বিসিএস এর সিলেবাস খুব বিস্তৃত হওয়ায় পড়ার সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা- এ তিনধাপে পুরো বিসিএস যাত্রা সম্পন্ন করতে প্রায় ৫ বছর লেগে যায়৷ এ দীর্ঘ সময়ের প্রতিটি দিন অনিশ্চয়তার, হতাশার, ক্লান্তিকর। কাজেই ধৈর্য্য ধরে রাখাটাই আমার মতে বিসিএস যাত্রার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল: বিসিএস তো বলতে গেলে এক রকম অনিশ্চয়তার খেলা। তবুও কেন চাকরীপ্রার্থীরা এই সোনার হরিণের পিছনে ছোটে?

ফারাজ হাবীব খান: প্রতি বছর লাখ লাখ গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে। সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়েনি। ক্যাডারদের সামাজিক মর্যাদা, আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার প্রভৃতি কারণে তরুণরা বিসিএসমুখী হচ্ছেন। অনিশ্চয়তা থাকলেও নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব- এই আস্থার কারণেই তরুণরা বিসিএস নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্নতত্ত্বের মত একটি বহুমাত্রিক সাবজেক্টে পড়াশুনা করেছেন। বিসিএস প্রস্তুতিতে একাডেমিক শিক্ষা আপনাকে কতটুকু সহায়তা করেছে?

ফারাজ হাবীব খান:  নিজ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ব্র্যান্ডিং করাই প্রত্নতত্ত্বের মূল কাজ; যা একজন ক্যাডারেরও অন্যতম দায়িত্ব। ফলে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে। যেমন - ‘প্রত্নতত্ত্ব কী? এর গুরুত্ব লিখুন। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রত্নস্থানের বর্ণনা দিন। পর্যটন বিকাশে এসব প্রত্নস্থানের ভূমিকা আলোচনা করুন। উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব লিখুন।’ এরকম প্রায় ২০/৩০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয় লিখিত পরীক্ষায়। তাছাড়া  ভাইভাতেও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে সবাইকে কম-বেশি  প্রশ্ন করা হয়। এর মাধ্যমে একজন প্রার্থীর শেকড়, দেশপ্রেম, ঐতিহ্যপ্রীতি ইত্যাদি বিষয় যাচাই করা হয়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল: বিসিএসে ভাল ফলাফল অর্জনের পিছনে কাদের অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি ছিল? 

ফারাজ হাবীব খান: বাবার প্রচ্ছন্ন একটা স্বপ্ন ছিল যে আমি ক্যাডার হব। ২০১৪ সালে তিনি মারা যান। তারপর আমার মা হয়ে ওঠেন আমার অনুপ্রেরণার উৎস, আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। প্রায়ই মাকে বলতাম, আমার দ্বারা হবে না। মা বলতেন, ইনশাআল্লাহ হবে। নিরলসভাবে তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন এবং স্রষ্টার কাছে দিনরাত প্রার্থনা করেছেন। আমার ভাইভার দিন তিনি রোজাও রেখেছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে আসা মায়ের মাথায় অতিযত্নে কনভোকেশন হ্যাট পরিয়ে দিচ্ছেন ফারাজ হাবীব খান


সাম্প্রতিক দেশকাল: আপনার একটি ‘আনন্দময় স্মৃতি’ সম্পর্কে জানতে চাই।  অতীতের কোন ঘটনা মনে পড়লে হৃদয় আজও খুশিতে ভরে ওঠে?

ফারাজ হাবীব খান: তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। উপজেলার এক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা। আমি ছিলাম জারিগানের দলনেতা। ‘শিক্ষা হলো দেশের খুঁটি জানেন সবাই/শিক্ষা ছাড়া বাংলাদেশের উপায় কিন্তু নাই’- সে জারিগান সবার ভালো লেগেছিল। 

সাম্প্রতিক দেশকাল: গত এক দশক ধরে দেখা যায় চাকরিপ্রার্থীরাই বিভিন্ন লাইব্রেরি দখল করে থাকে। এতে সাধারণ পাঠক নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

ফারাজ হাবীব খান: লাইব্রেরিতে বিভিন্ন শাস্ত্রের অনেক বই থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় যে- চাকরীপ্রার্থীরা লাইব্রেরিতে বসে বাজারের গাইডবই মুখস্ত করে। এর ফলে সাধারণ পাঠক লাইব্রেরিতে বসার জায়গা পান না। এটা হতাশাব্যঞ্জক। এ চর্চার অবসান হওয়া উচিত। 

সাম্প্রতিক দেশকাল: বইপোকা নাকি টেক-স্যাভি, ফারাজ হাবীব খান আসলে কোনটা? 

ফারাজ হাবীব খান:  বিসিএস প্রস্তুতি নেয়ার সময় ইন্টারনেট থেকে অনেক সহায়ক গ্রন্থ, উদ্ধৃতি, চিত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করতাম। একটা মুঠোফোন যেন একটা পকেট লাইব্রেরি৷ তারপরেও কাগুজে বইয়ের আবেদন চিরায়ত। বই কেনা, বই পড়া, বই সাজিয়ে রাখা-এগুলো ভীষণ টানে। কাজেই টেক-স্যাভির চেয়ে ফারাজ বেশি বইপ্রেমী৷ 

সাম্প্রতিক দেশকাল: প্রশাসন ক্যাডারদের তো দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। সমাজে ভাল পরিবর্তন আনতে আপনি কোন কাজটি করতে চান?

ফারাজ হাবীব খান: যে দায়িত্বই অর্পিত হোক, সেটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই। প্রতিটি শ্রেণিপেশার মানুষকে সম্মান দিতে চাই।

সাম্প্রতিক দেশকাল: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফারাজ হাবীব খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাম্প্রতিক দেশকালের জন্য শুভকামনা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //