ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এমবিএ শেষ করেছেন মনোয়ারুল ইসলাম। তার পড়ার প্রধান বিষয় ছিল ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং। লক্ষ্য ব্যাংকার হওয়া। প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার। তার কাছে জানতে চাই, কেন অন্য সব পেশা ছেড়ে ব্যাংকার হতে চান? উত্তর মেলে, ‘আসলে ব্যাংকে চাকরির ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। নিশ্চিত জীবন, ভালো বেতনের নিশ্চয়তা- এর সবকিছুই আমাকে ব্যাংকার হওয়ার জন্য উৎসাহ জোগায়।’
হ্যাঁ, দেশের তরুণ প্রজন্ম, যারা এখন চাকরির বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অথবা সবে চাকরিতে ঢুকেছেন, তাদের কাছে ব্যাংকের চাকরি এখন আকর্ষণীয়। ভালো বেতন, সামাজিক সম্মান, ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ- এর সবকিছু যে গুটিকয়েক পেশায় মেলে, ব্যাংকিং তার মধ্যে একটি। প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোতে প্রচুরসংখ্যক লোক নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তরুণদের।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেল আহসান বলেন, ‘দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দরকার দক্ষ জনবলের। ব্যাংকগুলোতে তরুণরা যোগ দিতে আগ্রহী। কারণ সুন্দর কাজ করার পরিবেশ, সুন্দর ভবিষ্যৎ ও মেধার মূল্যায়ন।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন মেধাবী ব্যাংকার অতি অল্প সময়ে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। আমাদের দেশে অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে ব্যাংকিং পেশায় চাকরির নিরাপত্তা বেশি। সাধারণত ব্যয় সংকোচনের জন্য কর্মী ছাঁটাই দেখা যায় না ব্যাংকিং সেক্টরে।’
শুধু যে চাকরির নিরাপত্তা তাই-ই নয়, এ ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য যত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা তাদের এ পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত করছে।
এ পেশায় আসতে চাইলে
নিয়োগের আগে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় পত্রিকায়। সাধারণত দ্বিতীয় শ্রেণি থাকলেই ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। তবে কিছু কিছু ব্যাংক প্রথম শ্রেণি অগ্রাধিকার দেয়। সব বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এ পেশায় আবেদন করতে পারলেও সাধারণত এমবিএ, এমবিএম সম্পন্ন প্রার্থীরাই প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। বেশির ভাগ ব্যাংকেই ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন হয়।
প্রথম ধাপ পেরোনোর পর প্রার্থীকে বসতে হবে লিখিত পরীক্ষায়। নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবার মুখোমুখি হতে হবে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের।
যেভাবে প্রস্তুতি
এখানে পরীক্ষা হয়ে থাকে সাধারণত ইংরেজিতে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের জব কাউন্সেলর শাহনাজ ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাংকভেদে প্রশ্নের ধরন কিছুটা আলাদা হলেও মূল কাঠামো একই থাকে। সাধারণত প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার, অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, পাজলস ও ডাটা সাফিশিয়েন্সি অংশ থেকে। আর লিখিত বা বর্ণনামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে গণিত, ইংরেজি ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি অংশ থেকে। তাই ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে, টিভির খবর দেখতে হবে, সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষ হওয়াটা বেশ জরুরি। জি-ম্যাটের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। আর সেই সঙ্গে সময় নিয়ে ব্যাংকে নিয়োগের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে অবশ্যই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা হক বিবিএ শেষ সেমিস্টারে রয়েছেন। ফারজানা বলেন, ‘ব্যাংকার হওয়া আমার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন সফল করার প্রথম ধাপ অনার্স শেষের দিকে, তাই দ্বিতীয় ধাপ নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছি।’
একজন ভালো ব্যাংকার একই সঙ্গে কাজের সুন্দর পরিবেশ, সামাজিক মর্যাদা, কর্মক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ও নিশ্চিত জীবন পেয়ে থাকেন। তাই চোখ বন্ধ করে এই চমৎকার জীবন বেছে নিতে পারেন আপনিও। একটু কষ্ট সহ্য করে, কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে ছোট্ট একটা লাফ দিন ব্যাংকের দিকে, এরপর আর ভাবতে হবে না কিছু, ব্যাংকই আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ব্যাংকার হতে হলে রবিউল কমল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংক
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh