শুভ জন্মদিন, অমিতাভ রেজা চৌধুরী

নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর জন্মদিনে তার তিনটি শর্ট ফিল্ম নিয়ে একটি ছোটখাট মতামত ‘বন্ধু অথবা বন্দুকের গল্প’ শর্ট ফিল্মটির নির্মাণ শৈলিতে একাধারে আশির দশক এবং এ সময়ের ছোঁয়া আছে।  শর্ট ফিল্মটিতে অল্প কথায় উঠে এসেছে সমাজ-বিপ্লব ও গণযুদ্ধের পক্ষে যুক্তি-তর্ক, যা এ সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অচ্ছুৎ প্রায়। সাম্রাজ্যবাদী ‘উন্নয়ন’ দর্শনের বিপরীতে প্রকৃত উন্নয়নের কথা উঠে এসেছে। সেখানে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি, কর্পোরেশনের শোষণ, উদ্বৃত্ত মূল্য এবং খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের চিত্র ফুটে উঠেছে। শর্ট ফিল্মের মূল কথা দাঁড়ায়- আদর্শের সামনে প্রাণ প্রিয় বন্ধুও কিছু নয়- যে কারও চেয়ে আদর্শ বড়।

চিত্রনাট্য, অভিনয়, লোকেশন, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বেশ ভালো ছিলো। সংলাপের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। দুই বন্ধুর একটি সংলাপ- ‘...ডেভেলপমেন্ট হইলে কি আর চুপচাপ থাকা যায় রে, বন্ধু? উন্নয়নের একটা আওয়াজ আছে না?...’

তবে কাহিনীর শেষ দৃশ্যের মঞ্চায়ন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। ওই বিপ্লবীর মিশন কী ছিলো, তা সেখানে নিশ্চিত করে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি, যা অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। তবে বন্ধ্যা সময়ে এমন রাজনৈতিক ছবি নির্মাণের উদাহরণ অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। শর্ট ফিল্মটি দশের মধ্যে সাত পেতে পারে।

‘ভালোবাসা ভাড়া হবে’ শর্ট ফিল্মটি এক অপূর্ণ প্রেমের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার গল্প। যে প্রেম ভেঙে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ শ্রেণি-বৈষম্য। গ্রামীণ নিম্নশ্রেণীর এক ছেলে ঢাকায় আসার পর প্রেম হয় এক পদস্থ কর্মকর্তার মেয়ের সঙ্গে। তবে এক সময় মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয় উচ্চশ্রেণীর কারও সঙ্গে। প্রেমিক যুগল যখন বিচ্ছেদের দ্বারপ্রান্তে, তখন তারা একটি অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ক্ষণিকের জন্য হলেও পূরণের চেষ্টা করে। তারা চেয়েছিল সংসার করতে। ভাড়া বাসায় শুরু হবে সে সংসার। পছন্দ মতো একটি বাড়ি তারা ভাড়াও নিতে যায়। বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালির মধ্যে তারা যেন নিজেদের ‘হাইপোথেটিক্যাল’ ভবিষ্যৎ দেখতে পায়, যা সংলাপে উঠে আসে।

শর্ট ফিল্মটির কাহিনী, চিত্রনাট্য, লোকেশন, সিনেম্যাটোগ্রাফি বেশ আকর্ষণীয়। পরিচালনার দক্ষতায় উতরে গেলেও অভিনয় আরো ভালো হতে পারতো। শর্ট ফিল্মটি দশের মধ্যে ছয় পেতে পারে।

‘নিঃশব্দতার শহর’ শর্ট ফিল্মটি এক অনন্যসাধারণ নির্মাণ। কাহিনী, চিত্রনাট্য, সিনেম্যাটোগ্রাফি, অভিনয়, পরিচালনা এক কথায় মুগ্ধ করবে যে কোনো দর্শককে।

এক উচ্চ মধ্যশ্রেণীর পরিবারের ছোট্ট ‘কাজের মেয়ে’র গল্প। মেয়েটির দিন শুরু হয় হুকুমের মধ্য দিয়ে, আর সারাদিন কাটে বাড়ির লোকজনের এই হুকুম পালন করেই। ছোট্ট হাতে সে সব কাজ করে বিনা বাক্য ব্যয়ে। এরপর সবাই যখন কাজে চলে যায় তাকে তালাবন্ধ করে, তখন জীবন হয়ে ওঠে ‘নিঃশব্দ’। দিনভর কোনো হুকুম নেই, নেই কোনো শব্দ। এই নিঃশব্দ শহরে টিকে থাকা যায় না, তাই ছোট্ট মেয়েটি সব পানির কল খুলে দেয়, টিভি, ফ্যান, এসি, মিউজিক প্লেয়ার চালু করে দেয়। সে নিজের এক ভিন্ন জগৎ নির্মাণ করে, যেখানে জীবন থাকে না হুকুমে বাঁধা।

‘নিঃশব্দতার শহর’ শর্ট ফিল্মে অমিতাভ রেজা ছোট্ট ‘কাজের মেয়ে’র মনস্তত্ত্ব যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। এ নিয়ে আরও অনেক কাজ হওয়া দরকার বলে মনে করি। শর্ট ফিল্মটি দশের মধ্যে নয় পেতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। তিনি প্রায় হাজার খানেক টেলিভিশন বিজ্ঞাপন বা টিভিসি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তিনি প্রচুর টিভি নাটকও নির্মাণ করেন। ২০১৬ সালে তার নির্দেশনায় প্রথম চলচ্চিত্র 'আয়নাবাজি' মুক্তি পায়। ছবিটি শুধু ব্যবসাসফলই হয়নি। দর্শকদের হলমুখো করতে এ ছবি বিশেষ ভূমিকা রাখে। দ্বিতীয় ছবি ‘রিকশা গার্ল’ সম্পর্কে এক সংবাদমাধ্যমকে অমিতাভ বলেন, ‘রিকশা গার্ল’ প্রায় শেষের পথে। শুধু অ্যানিমেশনের একটু কাজ বাকি। এটাও হয়তো শেষ হয়ে যেত, যদি মহামারির মুখোমুখি আমাদের না দাঁড়াতে হতো। সব মিলিয়ে অন্তত দু’মাস পিছিয়ে গেলাম। এই সময়ে হয়তো রিলিজ ই হয়ে যেত। তবে আগামি তিন মাসের মধ্যে ‘রিকশা গার্ল’-এর আন্তর্জাতিক রিলিজ হবে।

আজ অমিতাভ রেজা চৌধুরীর জন্মদিন। আমরা চাই, এ দিনটি বারবার ফিরে আসুক। অমিতাভ আমাদের আরো জীবনঘেঁষা, চিন্তাশীল সব নির্মাণ উপহার দেবেন।
শুভ জন্মদিন, প্রিয় নির্মাতা...

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //