সাইবার বুলিং বন্ধ হোক- তারকাদের দাবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সহজলভ্য। ইন্টারনেটের প্রসারে যে কেউ খুলে ফেলছেন অ্যাকাউন্ট। হাতের মুঠোয় এসে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। এতে করে বেড়েছে যে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ। সে সুযোগে বাড়ছে অযাচিত মন্তব্য। বিব্রত হচ্ছেন নানা অঙ্গনের তারকারা। যার নাম সাইবার বুলিং। এই বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন দেশের তারকারা।

নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান প্রায়ই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। তিনি এ বিষয়ে জানান, আমি বাংলাদেশে যে পরিমাণ বুলিংয়ের শিকার হই, তা ভয়াবহ। এর কোনো সীমা নেই। তারা পরিবার, বাবা-মা এমনকি জন্ম নিয়ে কথা বলে। এখন এসব গায়ে মাখি না। যেভাবে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়, তাতে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়। আমার মতো শক্ত মানসিকতার মানুষ সবাই নন। 


তবে বুলিং যে কেবল অশিক্ষিত মানুষজন করছেন তা নয়। সমাজে সফল, উচ্চশিক্ষিত মানুষজনও অনলাইনে আমাকে বুলিং করছে। আমার প্রতিবেশীরাও পেশা আর কাজ নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেছে।

অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা সাইবার বুলিং প্রসঙ্গে বলেন, ‘গত দশ পনের বছরে সাইবার বুলিং মহামারি রূপ নিয়েছে। আমি দেখেছি কোথাও বুলিং হলে তার নিচে ইতিবাচক মন্তব্য করলে সে চেইনটা ভেঙে যায়। কিছুটা হলেও বুলিংকারীকে প্রতিহত করা যায়। আমরা চুপ করে থাকলে নোংরামি চলতেই থাকবে। এসব বন্ধ করতে আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে। 

চঞ্চল চৌধুরীকে সম্প্রতি সাইবার বুলিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, বুলিংকারীদের বিরুদ্ধে কথা না বলে যদি আমরা চুপ থাকি, তার মানে হচ্ছে তারা শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। তারা এভাবেই আমাদের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। 

দেশের আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌটুসি বিশ্বাস সাইবার বুলিং প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যারা সাইবার বুলিং করছে তাদের কয়েকজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করলে, পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করলে অন্যরা বুলিং করার আগে কয়েকবার ভাববে। তাদের জীবনে আসলে বুলিং ছাড়া কিছু নেই। তারা অন্যকে সম্মান দিতে জানে না। তাদের অসুস্থ মানসিকতার লোকজন মনে হয়। এমন মানুষজনকে সারিয়ে তোলার জন্য মোটিভেশান দরকার। আরেকটি ব্যাপার, যাদের সঙ্গে সাইবার বুলিং হয় না তারা এ বিষয়ে সরব হয় না। যখন তাদের সঙ্গেও নোংরা ব্যাপারগুলো ঘটে তখন তারা সোচ্চার হয়। এ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। আমাদের সব ভিক্টিমের পাশে থাকতে হবে।


চলতি সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া কখনোই সাইবার বুলিংকে পাত্তা দেন না। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘চার- পাঁচ বছর আগে আমাকে নিয়ে সাইবার বুলিং হয়। সে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে বুলিংকারীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তখন তাদের গুরুত্ব না দিলে আজ এ অবস্থা সৃষ্টি হতো না। তারা সাধারণ মেয়ের ছবিতেও বাজে মন্তব্য করে। এতে বোঝা যায় তাদের মানসিকতা কেমন। 

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াকে নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় কম আলোচনা হয় না। ‘সাইবার বুলিং নিয়ে কথা বলে তা বন্ধ করতে পারব না। গণমাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক শিরোনামের খবরে যে বুলিং হয় তা বড় আকার ধারণ করেছে। এখন এমন একটি পর্যায় এসেছে যে, মায়ের সঙ্গে ছবি দিলেও বাজে মন্তব্য হয়।’ 

চলতি সময়ের ছোটপর্দার ব্যস্ত অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিন। তিনি সাইবার বুলিংকে নিজের জীবন থেকে দূরে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সাইবার বুলিংকে পাত্তা দেই না। বুলিংকারীদের কমেন্ট দেখি না। আমার কাজে এর কোনো প্রভাব পড়ে না।’


এ সময়ের আরেকজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা। সাইবার বুলিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাইবার বুলিং সবসময় ছিল। কাজের ব্যস্ততার জন্য চোখে পড়ত না। এখন সবসময় মোবাইল ফোন হাতে থাকায় মনে হয় এটি বেড়ে গেছে। বুলিংয়ের ফলে মানুষের অন্ধকার দিকটাই সামনে আসে। আমরা সারাদিনের রাগ ক্ষোভ কোথায় উগড়ে দেই? এমন একটা জায়গায় যেখানে কেউ সহজে আমাকে পাবে না। মানুষ তারকাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে। একজন তারকাকে গালি দেওয়া সহজ। একজনের দেখাদেখি আরও দশজন দিচ্ছে। এতে তারকার কিছু যায় আসে না। 

অভিনেত্রী ভাবনাকে প্রায়ই মুখোমুখি হতে হয় আপত্তিকর মন্তব্যের। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রতিবাদ করা জরুরি এটা আমার সবসময় মনে হয়েছে। তাই আমি কখনোই চুপ থাকিনি। আমার মনে হয় যতোই আমরা এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো ততই তা কমে আসবে। আমাদের সবাইকে সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //