২৮ বছর পর স্বর্ণ পাম জিতলেন নারী পরিচালক

কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে বড় পুরস্কার স্বর্ণ পাম (পাম ডি’অর) জিতেছে ফরাসি নির্মাতা জুলিয়া দুকোরনোর যৌনতা ও সহিংসতায় পূর্ণ অদ্ভুতুড়ে ছবি ‘তিতান'। ২৮ বছর পর কানে কোনো নারী পরিচালক জিতলেন স্বর্ণপাম। 

গতকাল  শনিবার (১৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সাড়ে ৭টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১১টা) পালে দে ফেস্টিভাল ভবনে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিভিন্ন ক্যাটাগরির পুরস্কার ঘোষণা করেন উৎসবের বিচারকের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা স্পাইক লি।

জুলিয়া এযাবৎ কান উৎসবে পাম ডি’অর জেতা মাত্র দুইজন নারী পরিচালকের একজন। আর এককভাবে এই খেতাব জেতা প্রথম নারী পরিচালক তিনি। এটি তার দ্বিতীয় ফিচার চলচ্চিত্র।

জুলিয়ার হাতে পাম ডি'অর তুলে দেন মার্কিন অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন

ছবিতে একজন নারী খুনির গল্প বলা হয়েছে। শৈশবে একটি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর গাড়ির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় এই নারী। তিতান নিয়ে সমালোচকদের মিশ্র অভিমত আছে। এটাকে বর্ণনা করা হয়েছে, উৎসবে এযাবৎকালে প্রদর্শিত সবচাইতে ‘ধাক্কা লাগার মতো’ ছবিগুলোর একটি হিসেবে।

এদিকে আয়োজনের শেষভাগে স্বর্ণ পাম বিজয়ী চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণার কথা থাকলেও শুরুতেই ‘তিতান’র নাম ঘোষণা করে নাটকীয়তার জন্ম দেন লি। পরক্ষণেই নিজের বক্তব্য ফিরিয়ে নেন তিনি। পরে দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তালগোল পাকিয়ে ফেলার জন্য ক্ষমা চাইছি’।

অনুষ্ঠানজুড়ে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পালা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিতানের নামই ঘোষণা করা হয়। ৩৭ বছর বয়সী জুলিয়ার হাতে স্বর্ণ পাম তুলে দেন শ্যারন স্টোন। এসময় আবেগাপ্লুত হয়ে জুলিয়া বলেন, ‘আজকের সন্ধ্যাটা নিখুঁত কারণ এটাতে খুঁত ছিল’।

সেরা অভিনেতা ল্যান্ডি জোনস ও সেরা অভিনেত্রী রেনেট রেইসভে

এর আগে নারী নির্মাতা হিসেবে ১৯৯৩ সালে প্রথমবার স্বর্ণ পাম পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের জেন ক্যাম্পিয়ন। তার ২৮ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো নারী নির্মাতা হিসেবে কানের ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন জুলিয়া। পরিচালনার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গল্প ও চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিনি।

মহামারির কারণে গত বছর অনুষ্ঠিত হয়নি কান চলচ্চিত্র উৎসব। এ বছরও নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পর গত ৬ জুলাই শুরু হয় এ উৎসব। এ বছর মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের সভাপতি ছিলেন মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ পরিচালক স্পাইক লি। বিচারক প্যানেলে বাকি আট বিচারকের পাঁচজনই ছিলেন নারী।

দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরে শুরু হওয়া এ উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৪টি চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ছবিগুলো প্রদর্শনের পর শনিবার রাতে উৎসবের সমাপনী দিনে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর নাম ঘোষণা করা হল।

কান চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বিভাগে অংশগ্রহণ করে বাঁধন অভিনীত বাংলাদেশি সিনেমা 'রেহানা মরিয়ম নূর’।

প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে গ্র্যান্ড পিক্স পুরস্কার পেয়েছে ‘অ্যা হিরো’, ‘কমপার্টমেন্ট নম্বর সিক্স’। জুরি পুরস্কার পেয়েছে আহেদ’স নি’ ও ‘মেমোরিয়া’, সেরা পরিচালক হয়েছেন ‘আনেট’ নির্মাতা লিও ক্যারাক্স, সেরা অভিনেতা ল্যান্ডি জোনস, সেরা অভিনেত্রী রেনেট রেইসভে, সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন হামাহুচি ও তাকামাসা (ড্রাইভ মাই কার) ক্যামেরা দ’র পেয়েছে মুরিনা।

২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বঙ জুন-হো পরিচালিত ‘প্যারাসাইট’ স্বর্ণপাম জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়ে। এমনকি ছবিটি অস্কারও জিতে নেয়।

এদিকে কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিল বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। গত ৭ জুলাই ‘আ সার্তে রিগা’ বা তরুণ নির্মাতাদের বিভাগে ছবিটি প্রদর্শিত হওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছিল ছবিটি।

ধারণা করা হয়েছিল, এই ছবিটি পুরস্কার পাবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি টিম রেহানা মরিম নূরের। খালি হাতেই ফিরতে হলো বাংলাদেশি এই সিনেমা ও তার টিমকে।


কানে সেরা যারা

স্বর্ণ পাম বা পাম দ’র: টাইটেন (জুলিয়া দুকুরনো, ফ্রান্স)

গ্র্যাঁ প্রিঁ: অ্যা হিরো (আসগর ফারহাদি, ইরান) এবং কম্পার্টমেন্ট নম্বর সিক্স (ইওহো কুয়োসমান, ফিনল্যান্ড)

সেরা পরিচালক: লিও ক্যারাক্স (আনেট, ফ্রান্স)

জুরি প্রাইজ: আহেদ’স নি (নাদাভ লাপিড, ইসরায়েল) এবং মেমোরিয়া (অ্যাপিচ্যাটপঙ বিরাসেতাকুল, থাইল্যান্ড)

সেরা অভিনেতা: ক্যালেব লান্ড্রি জোন্স (নিট্রাম, আমেরিকা)

সেরা অভিনেত্রী: রেনোত রাইনসভে (দ্য ওর্স্ট পারসন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড, নরওয়ে)

সেরা চিত্রনাট্য: ড্রাইভ মাই কার (রিয়ুসুকে হামাগুচি ও তাকামাসা ওয়ে, জাপান)

সম্মানসূচক পাম দ’র: জোডি ফস্টার ও মার্কো বেলোচ্চিও

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //