হুমায়ূন আহমেদ চলে যাওয়ার ৯ বছর

নন্দিত কথাশিল্পী ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ওই বছরের ২৩ জুলাই তার মরদেহ আনা হয় দেশে। পরদিন নুহাশপল্লীর বৃষ্টিবিলাসের পাশে সমাহিত করা হয়। 

তার মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। সেই শোক আজও কাটেনি ভক্ত-পাঠকদের হূদয় থেকে। হুমায়ূন নেই, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে।

মহামারির কারণে গত বছরের মতো এবারো মৃত্যুবার্ষিকী ঘিরে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সীমিত আকারে পরিবার ও ভক্তরা দিনটিকে স্মরণ করবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সকালে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে নুহাশপল্লীর তত্ত্বাবধায়ক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে। উপন্যাসে নিজের প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে।

তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ ১৯৭২ সালে প্রকাশের পরপরই তিনি খ্যাতি লাভ করেন। এরপর একের পর এক উপন্যাস লিখে পেয়েছেন অতুলনীয় জনপ্রিয়তা। তার একটি নতুন বই আর সেই বইয়ে একটি অটোগ্রাফের জন্য বাংলা একাডেমির বইমেলায় তরুণ-তরুণীদের দীর্ঘ লাইন বইপ্রেমীদের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে আছে। 

দেশে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা এই লেখক দুই শতাধিক ফিকশন ও নন-ফিকশন বই লিখেছেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘দেয়াল’, ‘বাদশা নামদার’, ‘কবি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘লীলাবতী’, ‘গৌরীপুর জংশন’, ‘নৃপতি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নক্ষত্রের রাত’ ইত্যাদি।

হ‌ুমায়ূন আহমেদ একদিকে সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন পাঠককে, অন্যদিকে নির্মাণ করেছেন অনন্য সব নাটক, চলচ্চিত্র ও গান। তার হাত ধরেই তারকার সম্মান পেয়েছেন এ দেশের অনেক শিল্পী। তার সৃষ্টিতে উঠে এসেছে নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, বৃষ্টিসহ বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির ব্যঞ্জনা।

প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ তাকে সাধারণ মানুষের কাছে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। তার লেখা নাটক যখন বিটিভিতে প্রচারিত হতো তখন রাস্তাঘাটে জনসমাগম কমে যেত। ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ ও জীবনঘনিষ্ঠ নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ এই দেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন।

পেশায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। নিজের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

হুমায়ূন আহমেদ নিজে ছিলেন আমুদে মানুষ। নানামাত্রিক সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দে মাতিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়েছেন জীবনভর। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //