সিনেমা-সিরিজ-তথ্যচিত্রে রানির কাহিনি

কিছু ঘটনা চোখের সামনে জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে থাকলে, অদৃষ্টবাদে আস্থা না থাকার পরও মানুষ ক্ষণিকের জন্য হলেও নিশ্চেতনা থেকে অদৃষ্টের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করার ফুরসত পায়। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারে জন্ম নেওয়া এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসরের জীবনটি ছিল তেমনই এক ঘটনা। কেননা তার রানি হওয়াটা যেন ছিল নিয়তি-নির্দিষ্ট।  

রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের হার মানানো প্রেমকাহিনিটি ষষ্ঠ জর্জকেই শুধু রাজার সিংহাসনে আসীন করেনি, সেই সংকটে ভাগ্য খুলে গিয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও। কেননা ২৫ বছর বয়সে কেনিয়ায় বসে পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে সেই যে ১৯৫৩ সালের জুন মাসে তিনি ব্রিটেনের রানি হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন, মৃত্যুর আগপর্যন্ত ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় তিনিই ছিলেন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। ৭০ বছরের রাজকার্যে যুক্তরাজ্য তো বটেই, সারা দুনিয়ার অনেক ইতিহাসের সাক্ষী তিনি। জীবদ্দশাতেই রানিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র, টিভি ও ওয়েব সিরিজ। 

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ চরিত্রে অলিভিয়া কোলম্যান, ক্লেয়ার ফয়, হেলেনা বনহ্যাম কার্টার ও হেলেন মিরেনসহ যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় অনেক অভিনয়শিল্পীকেই দেখা গেছে। এসবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা চলচ্চিত্র আর টিভি সিরিজগুলো হচ্ছে- ‘দ্য ক্রাউন’, ‘দ্য কুইন’, ‘ স্পেন্সার’ ‘হাডসনের হাইড পার্ক’, ‘ন্যাশনাল ল্যাম্পুন’স ইউরোপিয়ান ভ্যাকেশন’, ‘দ্য কিংস স্পিচ’।

রানির সিংহাসন আরোহণ ও শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়েছিল ১৯৫৩ সালের জুন মাসে। অনুষ্ঠানটি লাখ লাখ মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল অবশ্য অনুষ্ঠানটির সরাসরি সম্প্রচারের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে বাকিংহাম প্রাসাদ রাজপরিবারকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। রানি ও রাজপরিবারও যে সাধারণ পরিবারের মতো নানা কাজ করতেন, তা দেখাতে বিবিসিকে ‘রয়াল ফ্যামিলি’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরির অনুমতিও দেয়। ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো রয়্যাল ফ্যামিলির জীবনযাত্রা নিয়ে অ্যান্টোনির লেখা ও রিচার্ড পরিচালিত ডকু-ফিল্মটি প্রকাশ পেলে মানুষের সামনে আসে রাজপরিবারের জীবনযাত্রা।

রানি এলিজাবেথের জীবনটি ছিল বর্ণিল। তার উপর লেখা হয়েছে নানান গল্প, বই। ২০১২ সালে সেলি বেডেল স্মিথ রানির জীবনীভিত্তিক বইও লেখেন। এছাড়া তার ৭০ বছরের দীর্ঘ ঘটনাবহুল শাসনামলকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ। তার শৈশব ও রাজা ষষ্ঠ জর্জের জীবনকে কেন্দ্র করে টম হুপার নির্মিত ‘দি কিংস স্পিচ’ চলচ্চিত্রটি গল্পের কারণে অস্কার পেয়েছিল। ২০০৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল স্টিফেন ফ্রেয়ার্সের ‘দ্য কুইন’। এই ছবিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের চরিত্রে অভিনয় করেন হেলেন মিরেন। এ চরিত্রে অভিনয় করে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পান এই অভিনেত্রী। ছবিতে মিরেনের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন রানি স্বয়ং, তাকে বাকিংহাম প্যালেসে নৈশভোজের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। 

এছাড়াও ব্রিটেনের রাজপরিবার ও রাজপরিবারের শত বছরের ইতিহাস আলোকপাত করে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘দ্য রয়্যাল হাউস অব উইন্ডসর’ চলচ্চিত্রটি। তরুণী এলিজাবেথের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা ও অবদান নিয়েও তৈরি হয়েছিল ‘আওয়ার কুইন অ্যাট ওয়ার’ শিরোনামের একটি ডকুফিল্ম। রানির শাসনকালের একটি অংশও প্রতিবিম্বিত হয়েছে ‘প্রিন্স ফিলিপ: অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি লাইফ’-এ। রানি ও তার বোন মার্গারেটের সম্পর্ক কেমন ছিল এ-নিয়ে নির্মিত হয় ‘এলিজাবেথ অ্যান্ড মার্গারেট : লাভ অ্যান্ড লয়্যালটি’। 

তবে দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে নির্মিত আলোচিত ও দর্শকপ্রিয় টিভি সিরিজটি হলো পিটার মরগানের ৪০ এপিসোডের ‘দি ক্রাউন’। ২০০৬ সালে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিরিজটিতে তুলে ধরা হয়েছে রানির জীবনচিত্র। এতে রানির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্লেয়ার ফয়। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি। এই টিভি সিরিজেই ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রানির চরিত্রে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রী অলিভিয়া কোলম্যানকে। এ চরিত্রে অভিনয় করে জিতেছিলেন গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। অলিভিয়ার হাতে ওঠে এমি পুরস্কারও।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //