দেশে কোরিয়ান ড্রামার জনপ্রিয়তা বাড়ছে

গল্প ,মান, বাজেট এবং মেকিং- সব দিক থেকেই বিনোদন জগতে এগিয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রামা (কে ড্রামা) বা নাটক। অ্যাকশন, থ্রিলার, রোমান্টিক- তিন বিভাগেই বিশ্ব মাত করে চলেছে কে ড্রামা। বিশ্বব্যাপী খ্যাতির পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। 

কোরিয়ানরা সৌন্দর্য্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ফ্যাশন সেন্স, সহজ আউটফিটে সাবলীল উপস্থাপনের দারুণ প্রতিভা তাদের। আর তাতেই মনোযোগ কেড়েছে বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীদের। দৈনন্দিন লাইফ স্টাইলেও কোরিয়ান ভাবধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে দেশের তরুণ দর্শকদের মধ্যে। যারা আগে হলিউডের কিংবা হিন্দি ড্রামাগুলোর জন্য অপেক্ষা করতেন, তারা এখন অপেক্ষা করেন কে ড্রামার। ড্রামার এক পার্ট শেষ হলে আরেক পার্ট কবে রিলিজ হবে সে অপেক্ষায় দিন গুণেন ভক্তরা। 

কে ড্রামা ভক্ত সিটি কলেজের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, তিনি মোটামুটি সব ধরনের কে-ড্রামা দেখেছেন। স্কুল জীবন থেকে কে-ড্রামা দেখা শুরু করেন তিনি। এখন পর্যন্ত এর নিয়মিত দর্শক। অপেক্ষায় থাকেন কবে নতুন ড্রামা রিলিজ হবে।

সুমাইয়া বলেন, যেহেতু আমি প্রেম,রহস্য এবং জাদু- এ ধরনের জনরা দেখতে বেশি পছন্দ করি সুতরাং আমার দেখা প্রথম ড্রামা ছিলো ‘মাই লাভ ফ্রম দ্য স্টার’ । এটা দেখার পর আমি কে-ড্রামার প্রতি মুগ্ধ হয়ে গেছি। তার মতে, কোরিয়ানদের নির্মাণের ধরন অনেক দৃষ্টিনন্দন। সাধারণ কোনো ফ্রেমকেও অর্থবহ করে তুলে আনতে পারে তারা। তাদের গল্প এবং গল্পের ধারাবাহিকতা দেখে কখনও একঘেয়ে লাগেনা। তিনি বলেন, ওদের ফ্যাশন সেন্স আমার কাছে খুব ভালো লাগে। মেয়েদের মেকাপ খুবই সাদামাটা। যেটা নজর কাড়ার মতো বিষয়। এছাড়া ড্রামাগুলো খুবই স্বল্প সময়ের হওয়ায় বোরিং লাগার সুযোগ কম। 

কোরিয়ান ড্রামাভক্ত দশম শ্রেণির ছাত্র ওমর হাসান ইসান বলেন, আমি নিয়মিত কে-ড্রামার দেখি। সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা থাকায় বাসা থেকে টিভি দেখা বা ফোন চালানো নিষেধ, তারপরও পড়ার ফাঁকে বা লুকিয়ে কে-ড্রামা দেখার লোভ সামলাতে পারি না। ইসান বলেন, বেশি বছর হয়নি আমি কে-ড্রামা দেখা শুরু করেছি। আমার দেখা প্রথম ড্রামা ছিল ‘লেজেন্ড অফ দ্য ব্লু সী’। এই এক ড্রামার গল্পেই আমি কে ড্রামায় আটকে গেছি। 

ফেসবুকে কে ড্রামা গব্লিনের একটি বাংলা ডাবিং ভিডিও ক্লিপ দেখে ভক্ত হয়ে যান রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিফা আক্তার। তিনি বলেন, আগে কে ড্রামা অন্যরা দেখলে বিরক্ত হতাম। ভাষা বুঝতাম না আর সব অভিনেতা অভিনেত্রীদের চেহারা একই রকম লাগত। আমার মনে হতো মানুষ এইসব জিনিস কেন দেখে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা শেষে ফেসবুকে গব্লিনের একটা ভিডিও দেখে আমার আগ্রহ জাগে। তখন থেকে দেখা শুরু করলাম, এখন পর্যন্ত দেখেই যাচ্ছি। তিনি বলেন, ড্রামাগুলো থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। আমার নিজের জীবনে আমি যা যা করতে চাই কে ড্রামা দেখে সেগুলো করার উৎসাহ পাই। 

বাংলাদেশি নাটকপ্রেমীদের অনেক বড় একটি অংশ কে ড্রামা ভক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু সক্রিয় গ্রুপগুলোই এর জানান দেয়। গ্রুপগুলোতে সদস্যরা মুলত কে ড্রামা নিয়ে তথ্য আদান-প্রদান করেন।

এমন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপ কে-ড্রামালজি। গ্রুপটির এডমিন আল জিহাদ জানান, তিনি দুই বছর ধরে ৩৭ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়ে এই গ্রুপটি পরিচালনা করছেন। তার গ্রুপটির খোলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কোরিয়ান ড্রামাকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তোলা। গ্রুপটির মাধ্যমের দর্শকরা যেন তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে । পোস্ট করে অনুভূতি জানাতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, এই গ্রুপটিতে ১৮ থেকে ২৪ বছরের ছেলে মেয়েদের সাড়া বেশি। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তার মতে, বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা কোরিয়ান সংস্কৃতি পছন্দ করলেও বাস্তব জীবনে সেটির প্রয়োগ খুব কম। কারণ কোরিয়ান লাইফ স্টাইল অনেক ব্যায়বহুল। তবুও ভক্তরা তাদের প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনুসরণ করেন।

আরেকটি ফেসবুক গ্রুপ কোরিয়ান মুভি এন্ড ড্রামা লাভার্স বিডি’র এডমিন মাহাতির মাহারাজ নিলয় জানান, নয় মাস ধরে চল্লিশ হাজারেরও বেশি সদস্য নিয়ে এই গ্রুপটি চালাচ্ছেন তিনি। জানা অজানা কোরিয়ান ড্রামা এবং মুভি সম্পর্কে যেন দেশের দর্শকরা জানতে পারে, নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারে, এ উদ্দেশ্যে গ্রুপটি খোলেন তিনি। ভবিষ্যতে গ্রুপটিকে আরও বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে নিলয়ের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //