কেবল উৎসব নয়, সারাদেশে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে: রামেন্দু মজুমদার

সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে আসতে চান। তাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেবল উৎসব নয়, সারাবছরই আমাদের সারাদেশে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে।

আজ শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সম্মেলন জাতীয় সঙ্গীত, উদ্বোধনী নৃত্য ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে ১২ দিনব্যাপী আয়োজিত দ্বাদশ গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩ এর শুভ উদ্বোধন হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তৃতায় একথা বলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

তিনি তরুণদের দেশের সংস্কৃতিচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ চট্টগ্রামে একটি সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। সেখানে ৫০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে মাত্র ২ জন ছিলো মুসলিম সম্প্রদায়ের। কারণ, অনেক মুসলিম বাড়িতে সংস্কৃতি চর্চা করতে দেয়া হয়না। সুতরাং এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ করতে হবে। আমাদের সমাজে যে ধ্বস নেমেছে। এটা সমবেতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। কারণ আমরা জানি সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের জাগরণের শক্তি।

তিনি আগামীতে সংস্কৃতিবিরোধী শক্তির মাথাচাড়া দেয়া রোধে সংষ্কৃতিকর্মীদের শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা করে এই পরিবেশ থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ এমপি বলেন, আমাদের প্রতিমাসে একটি করে উৎসব করা দরকার। এর অর্থায়ন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করবে। তিনি জানান, এখন গ্রামে মেলার আয়োজন করলে পাশেই জুয়ার আসর বসে মেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রাপালা করতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই। অথচ কারো ফোন পেয়ে পুলিশ যাত্রা শিল্পীদের ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো অনুমতি নিতে হবে। তবে অবশ্যই অশ্লীলতা যেন না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংস্কৃতিক দল পাঠানো এবং অন্য দেশ থেকে সাংস্কৃতিক দল আনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, এখনকার শিশুরা পড়া এবং বিভিন্ন কোর্সের চাপে তাদের জীবনকে উপভোগ করতে পারছে না। আমাদের শিশুদের নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে।

নাট্যজন মামুনুর রশিদ বলেন, ১১বছর আগে প্রথম ভারতে এই উৎসব শুরু হয়। তখন আমাকে তারা অতিথি করে নিয়ে যায় এবং আমি এই উৎসবের উদ্বোধন করি। এরপর অনেকেই গেছে। আমরা চেষ্টা করি তাদের নিয়ে আসতে। এই উৎসবের যিনি শুরু করেন সেই অমরেশ চক্রবর্তী। তিনি আজ প্রয়াত। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বাঙালিরা উৎসব প্রিয় জাতি কিন্তু চর্চা প্রিয় নয়।

শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, এই ধরণের উৎসব দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করবে। বিশ্বময় শহীদ মিনার তৈরির আন্দোলন চলছে। দুইদেশের মানুষকে সংস্কৃতিকে একসাথে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। এরমাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষা দিয়ে বিশ্বজয় করতে পারব।

উদ্বোধনের শুরুতে সকলে জাতীয় সঙ্গীত এবং স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীদের উদ্বোধনী নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর অতিথিদের নিয়ে প্রদীপ প্রজ্জলন করে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করেন  সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।

উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছ এর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- নাট্যজন মামুনুর রশিদ, নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্ষদ সচিব নাট্যজন  আকতারুজ্জামান।

এ বছর ৬ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল ও সঙ্গীত আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তন  এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ভারতের ৬টি দল, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৩৯টি নাট্যদলসহ মোট ৪৫টি মঞ্চনাটক প্রদর্শনী এবং সঙ্গীত আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তনে ১৯টি সঙ্গীত আবৃত্তি ও নৃত্যদল ও উন্মুক্ত মঞ্চে ১২টি পথ নাটক, ১৫টি আবৃত্তি সংগঠন, ১৫টি সঙ্গীত সংগঠন, ৭টি নৃত্য সংগঠন, ৩টি মূকাভিনয় সংগঠন, ১০টি শিশুদল এবং একক আবৃত্তি ও একক সঙ্গীত পরিবেশনা নিয়ে এ উৎসব আয়োজিত হচ্ছে। আনুমানিক ৪০০০ জন শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একযোগে ৬টি মঞ্চে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন সংস্কৃতির যৌথ উপস্থাপনে এবারের ‘গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২৩’ উদযাপিত হবে।

উল্লেখ্য, উৎসবে মঞ্চনাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, সঙ্গীত, পথনাটক, পাপেট শো ও মূকাভিনয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মোট ১৪৫ টি দল অংশগ্রহণ করবে। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব প্রতিদিন ৪.৩০মিনিট থেকে ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং মঞ্চনাটক প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //