স্টুডিও থিয়েটারে হলে মঞ্চস্থ হবে ‘বঙ্গমাতা’

গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে আজ সোমবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গমাতা মঞ্চস্থ হবে। এটি প্রযোজনা করেছে উত্তরীয় থিয়েটার।

বঙ্গমাতা নাটকের পটভূমি সম্পর্কে জানা যায়, শেখ ফজিলাতুন্নেসা ১৯৩০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। পাঁচ বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মারা যান। বেগম ফজিলাতুন্নেসার বয়স যখন মাত্র ৩ ও শেখ  মুজিবের বয়স যখন ১৩, তখন পরিবারের বড়রা তাদের বিয়ে ঠিক করেন। ফজিলাতুন্নেসা শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কে চাচাতো বোন। ১৯৩৮ সালে ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে। পরে তাদের দুই কন্যা ও তিন ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তারা হলেন- শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ১২ মে বেগম ফজিলাতুন্নেসা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং ধানমন্ডির বাড়ি ২৬, সড়ক ৯ এ (পুরনো ১৮)তে বন্দি অবস্থায় ছিলেন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

শেখ ফজিলাতুন্নেসার স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। উদার গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও সমাজবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি পরিণত হয়েছিলেন বাঙালির অনন্য সাধারণ মুক্তির নায়কে। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বৈরী শক্তির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে তিনি সহ্য করেছেন অপরিসীম অত্যাচার-নির্যাতন ও জেল-জুলুম।

শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতি মনে প্রাণে ধারণ করে জন আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। সেই লক্ষ্যকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য নিবেদন করেছিলেন সমগ্র জীবন। কৃষক- শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে তিনি লড়াই করে গেছেন নিরন্তর।

চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা-আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন মুক্তির সংগ্রামের প্রতিভূ। তিনি তার দল আওয়ামী লীগকে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন। তার এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” ঐ সংগ্রামের জন্য তিনি জনগণকে “যা কিছু আছে তাই নিয়ে” প্রস্তুত  থাকতে বলেন। তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান ও চার লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল তারই বজ্রকন্ঠ আহ্বানে।

স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশ পুনর্গঠন, সংবিধান প্রণয়ন এবং দেশ পরিচালনায় তিনি দিয়েছিলেন দূরদর্শী নেতৃত্ব। শত সংকট ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব সমাজে।

১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। দেশের জনগণ ছিল তার মনে, দেশের মাটি ছিল তার অন্তরে। জীবনের সবটুকু দিয়ে, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে উর্বর করে গেছেন বাংলাদেশের মাটি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক বেগম ফজিলাতুন্নেসাও বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের নিভৃত সৈনিক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা। টুঙ্গী পাড়ায় জন্ম নেওয়া রেণুর জাতীয় চরিত্র হয়ে ওঠা, জাতির দুর্দিনে হাল ধরার সাহসের কথা, শেখ মুজিবের যোগ্য সহযোদ্ধা হয়ে ওঠার কাহিনী এই নাটকের উপজীব্য।

উত্তরীয় থিয়েটারের দল প্রধান দিব্যেন্দু উদাস জানান, নাটকটি রচনা করেছেন আনিসুর রহমান। এটি উত্তরীয় থিয়েটারের তৃতীয় প্রযোজনা।

দলের কার্যক্রম প্রসঙ্গে দিব্যেন্দু উদাস বলেন, রুখো অপসংস্কৃতি, রুখো সাম্প্রদায়িকতা, সমাজ পরিবর্তন কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতা- এসকল ভারী আপেক্ষিক বিষয় অনেকের মতো আমাদের কাছেও দূর্বোধ্য। আমরা বুঝি প্রতিনিয়ত নষ্ট কিছুর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হয়। অন্ধকার আমাদের ঘিরে ধরলে আমরা দিশাহীন হাতড়ে বেড়াই, যদি আলোর দেখা পাই।

তিনি বলেন, তাজা সবুজ প্রাণগুলোকে গ্রাস করে নিচ্ছে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কুরুচীপূর্ণ সংস্কৃতি অথবা মাদকের নেশা। চলমান সময় শুধু হতাশা আর অপরকে অশোভনভাবে ডিঙিয়ে যাওয়া। লক্ষ্যহীন ছুটে চলা সকলের; সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে গড্ডালিকায় ভেসে যাওয়া সকলের। এরমধ্যেই কেউ কেউ ব্যতিক্রম, যারা সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যায় না, সমস্যাকে সবার সামনে এনে, আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়। তারা চায় মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে, চায় সুন্দরকে দু’চোখ ভরে দেখতে।

‘জীবন সত্য প্রকাশে শিল্পীত চেতনা’- এটি শুধুমাত্র শ্লোগান নয়। এ শ্লোগানের ভেতরেই লুকিয়ে আছে জীবনকে সুন্দর চোখে দেখার, কিভাবে দেখতে হয়। সত্য-মিথ্যা, সুন্দর-অসুন্দর, সংগতি-অসংগতি আমরা শিল্পীত মাত্রায় সবার সামনে তুলে ধরতে চাই- বলেন দিব্যেন্দু উদাস।

তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ ‘উত্তরীয় থিয়েটার’ আত্মপ্রকাশ করেছে। নিয়মিত অনুশীলন ও চর্চার মধ্য দিয়ে ‘জীবন সত্য প্রকাশে শিল্পীত চেতনা’ এই মন্ত্রে অদ্যাবধি সচেষ্ট আমরা। ‘বঙ্গমাতা’ আমাদের তৃতীয় মঞ্চ নাটক প্রযোজনা। আশা করি এই প্রযোজনাটি দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।

বঙ্গমাতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রওশন জান্নাত রুশ্নি। সূত্রধার - সানভি আহম্মেদ রাফি ও মারিয়া আক্তার। 

কলাকুশলী
লাইট ডিজাইন এ- প্রজেকশন - জিল্লুর রহমান
ভিডিও অ্যানিমেশন এ- প্রজেকশন - মোশারফ হোসেন টুটুল
মিউজিক ডিরেকশন - দিব্যেন্দু উদাস
সাউ- এ- মিউজিক কন্ট্রোল- তাহা
প্রযোজনা অধিকর্তা - মোশারফ হোসেন টুটুল। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //