জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে ‘অচলায়তন’

গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে অচলায়তন। এটি প্রযোজনা করেছে প্রাচ্যনাট। সন্ধ্যা সাতটায় নাটকটি মঞ্চস্থ হবে।

নাটকটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়, বহুদিন ধরে চলে আসা প্রথাকে কঠোর নিয়মের আবদ্ধে পালন করতে গিয়ে সময়ের আবর্তনে অচলায়তন বিদ্যায়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না। এখানকার বিদ্যার্থীরাও কোনো প্রশ্ন ছাড়াই তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবতীয় নিয়ম ও অনুশাসন মেনে চলে। অচলায়তনের বাইরের জগতের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই, এমনকি যোগাযোগ করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ পাওয়াটাও তাদের জন্য ‌ ‘মহাপাপ’-এর নামান্তর!

এই বিদ্যায়তনের দুই শিক্ষার্থী- পঞ্চক ও মহাপঞ্চক। তারা আপন ভাই হলেও তাদের জীবন দর্শন বিপরীত। পঞ্চক বিদ্বেষী মনোভাবাসম্পন্ন, যে সকল গতানুগতিকতাকে প্রশ্ন করে এবং অচলায়তনের নিয়মতান্ত্রিকতার ত্রুটিসমূহকে চিহ্নিত করে। অপরদিকে, মহাপঞ্চক গতানুগতিক চিন্তাপ্রবাহে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং বিদ্যায়তনের সকল নিয়মকেই বিনা প্রশ্নে অনুসরণ করে।

এই দুই ব্যক্তির ‌মধ্যকার যে ইচ্ছার দ্বন্দ্ব তা আরও দৃঢ়ভাবে প্রকাশিত হয় যখন অচলায়তনে একটি ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুুধুমাত্র নিয়মতান্ত্রিকতাকে অটু ট রাখার স্বার্থে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হতে থাকে। এরই মধ্যে প্রেক্ষাপটে উপস্থিত হন গুরু বা দাদাঠাকুর এবং বাইরের বাস্তব জগত ও সেই জগতের মানুষদের সাথে অচলায়তনের বিদ্যার্থীদের পরিচয় ঘটে প্রায় যুদ্ধের ডামাডোলের ভিতর। পুরনো চিন্তার প্রাচীন দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে আর শুরু হয় নতুনের স্পন্দন।

নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বনাটক, প্রতীকি নাটক নিয়ে বড় বড় সমালোচকদের যে অস্পষ্টতার অভিযোগ তাকে খণ্ডন করে আমাদের অচলায়তন মঞ্চায়নের প্রয়াস স্পষ্ট এবং প্রতীকের ব্যবহার যথার্থরুপে প্রকাশের ইচ্ছা কেবল।  অচলায়তন বিদ্যাপীঠকে আমরা কল্পনা করেছি একটি বালিকা বা নারী শিক্ষাগৃহ হিসেবে। আমাদের মত পশ্চাৎপদ এবং ধর্মীয়- সামাজিক চিন্তায় অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নারী। নারীকে কু সংস্কার আর নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে আটকে রাখার নানান ষড়যন্ত্র বিদ্যমান এবং কখনো কখনো সেই ষড়যন্ত্রের নিজেও যেনো প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

তিনি জানান, আদৌ এই বিদ্যায়তনের বা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাস্তব নিরীখে কতটুকু? আবার নিয়মনীতি মন্তব্য প্রায়শ্চিত্তে মানবের মুক্তি আছে কি? নাকি এই শিক্ষার আমূল উৎপাটনেই একদিন তৈরি হবে সত্যিকারের শিক্ষা যা মানুষে মানুষে একাত্ম হওয়া, মুক্ত দুনিয়ার স্বপ্নে বিভোর করবে সবাইকে। আমাদের গুরু বা দাদাঠাকুর না-নারী, না-পুরুষ এবং মুক্তিদাতা, যে আমাদের সাথে মিলতে চায়, সবার সাথে যুক্ত থেকে খেলায় অংশ গ্রহণ করতে চায়। আমরাও দেখতে চাই, খেলতে খেলতে শিখতে পারি কিনা সত্যিকারের শিক্ষা।

নাটকের অভিনয়ে যারা আছেন- পঞ্চক  চরিত্রে সানজীদা প্রীতি, মহাপঞ্চক সাখাওয়াত হােসেন রেজভী বা ফরহাদ হামিদ, আচার্য- চেতনা রহমান ভাষা, উপাচার্য তৌফিকুল ইসলাম বা শাহেদ আলী, উপাধ্যায় শাহানা রহমান সুমি বা পারভীন পারু, সুভদ্র সুপ্তী দাস চৈতী, সঞ্জিব- নাহিদা আক্তার (আঁখি), জয়োত্তম- ডায়না ম্যারেলিন চৌধুরী, বিশ্বম্ভর- স্বাতী ভদ্র।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //