সিনেমার স্বাদ নাটকে ঢুকে গেছে: চয়নিকা চৌধুরী

নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতা তার। এরই মাঝে মুক্তি পেয়েছে তার নির্মিত তিনটি সিনেমা। নাটকের পর চলচ্চিত্র নির্মাণেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। নিজের কাজ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেক...

‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘প্রহেলিকা’ ও ‘কাগজের বৌ’- তিনটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এ পর্যায়ে এসে কেমন লাগছে?
আমি ভাবনার চেয়ে বেশি পেয়েছি। প্রতিটি সিনেমার টিম ভালো ছিল বলেই দর্শক কাজগুলো সাদরে গ্র্রহণ করেছে। আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী কাজগুলো আরও ভালো করার তাগিদ অনুভব করছি। আমি সময় পেলেই নিজের কাজগুলো দেখি। যে ভুলগুলো চোখে পড়ে সেগুলো পরবর্তী ছবিতে শুধরে নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। প্রহেলিকা জনপ্রিয় হয়েছে দর্শকের জন্য। গল্প, গান ও অভিনয়- সব মিলিয়ে দর্শক ছবিটি পছন্দ করেছে। যে দর্শক ২০-৩০ বছর আগে সিনেমা দেখেছে, তারা ফিরে এসেছে। এ সিনেমায় মাহফুজ আহমেদ অভিনয় করেছেন। তার ও আমার দর্শক সিনেমাটি দেখতে এসেছে। মাহফুজ ও বুবলীর রসায়নও ছিল চমৎকার। বুবলী তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছে। অন্যদিকে কাগজের বৌ তিন সপ্তাহ হলে ছিল। এর মধ্যে কিছু দর্শক তো হলে গেছে। এতকিছু সিনেমাটি নিয়ে আশা করিনি।

অন্যান্য কাজের কী খবর?
প্রায় ১০ মাস পর তিনটি নাটকের শুটিং শেষ করেছি। এগুলো হলো  ‘শেষ প্রহর’, ‘ধুলোপড়া স্মৃতি’ ও ‘রেসিপি অব লাভ’। প্রথম দুটো নাটকে কমন ফ্যাক্টর আবুল হায়াত। তাকে কেন্দ্র করেই গল্পগুলো আবর্তিত হয়েছে। আমার মনে হয়েছে এমন গল্পে তাকেই আমার লাগবে। নাটকগুলোয় অভিনয় করেছেন শাশ্বত দত্ত, আইশা, সাফা কবির, মম, ডলি জহুর প্রমুখ। এ ছাড়া পরবর্তী সিনেমার প্রস্তুতি চলছে।

এ সময়ে এসে আমরা কয়েকজন নির্দিষ্ট প্রবীণ শিল্পীর ওপর আস্থা রাখছি। যাদের বিকল্প এখন অব্দি পাওয়া যায়নি। কেন?
এখন যারা প্রবীণ, তারা ৮০-৯০ দশকে কাজ করেছেন। সে সময়ের স্কুলিং ছিল অন্যরকম। তাদের ভালো কাজ করার আগ্রহ ছিল। তারা জানতেন একটি কাজ ভালো করতেই হবে। তাই এখনো তারা জ্বলজ্বল করেন। এ ছাড়া অভিনয় শিখেই তারা এসেছেন। এ প্রজন্মের নতুনদের মধ্যেও তুখোড় কয়েকজনকে দেখেছি। আমার সেটে অন্তত সময় অনুযায়ী এসেছেন।

টানা সিনেমার শুটিং শেষে নাটক নির্মাণ করলেন। কাজের ধারায় কোনো পরিবর্তন এসেছে?
এত দিন পর নাটকের কাজ করতে এসে দেখলাম সিনেমার স্বাদ নাটকে ঢুকে গেছে। ভালো ক্যামেরার পাশাপাশি ডিওপি রাখছি মানসম্পন্ন। চলচ্চিত্রের মতো সেট নির্মাণ করছি। আগে বুঝিনি। সিনেমা নির্মাণের পর বুঝতে পেরেছি কেন মানুষজন আমাকে বলত, সিনেমার মতো করে নাটক নির্মাণ করি।

ওটিটিতে কাজের বিষয়ে কী ভাবছেন?
একটি প্ল্যাটফর্মের জন্য ৭ পর্বের ওয়েব সিরিজ নির্মাণের কথা হচ্ছে। সময় হলে বিস্তারিত জানাব।

আমাদের দেশে এখনো নারী নির্মাতার সংখ্যা কম। এর কারণ কী হতে পারে?
আমাদের দেশে নারীরা পরিবার থেকে সহযোগিতা পায় না। নির্মাতা হতে গেলে ধৈর্যের দরকার হয়। লেগে থাকতে হয়। এক প্রকার নির্মাতা আছেন যাদের প্রযোজকরা প্রয়োজনীয় সব উপকরণ দিয়ে দেন, তিনি শুধু নির্মাণ করেন। থালায় খাবার সাজিয়ে দেওয়ার মতো অনেকটা। আরেক প্রকার নির্মাতা আছেন যারা চিত্রনাট্য লেখেন, প্রযোজক খুঁজবে, শিল্পী নির্বাচন করবে। কষ্ট করে পাওয়ার মাঝে আনন্দ থাকে। প্রেম ও ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায়। আমি দ্বিতীয় ঘরানার পরিচালক। প্রেম আমার কাজ, যার মাঝে থাকে ভালোবাসা-যতœ-বিশ্বাস। আমি সবসময়ই চেয়েছি দর্শক যেন কাজ দিয়ে আমাকে চিনতে পারে। দর্শকদের ভালোবাসা আমার সেরা উপহার।

একজন নির্মাতা হিসেবে দর্শকের কিংবা নেটাগরিকদের সমালোচনা কীভাবে দেখেন?
আমি কিছু করছি বলেই ভালো-মন্দ, তর্ক- বিতর্ক হয়। আমি গঠনমূলক সমালোচনা নিই। কিন্তু যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা- এ ধারণার সমালোচনা গায়ে মাখি না। বিশ্বাসও করি না। অমূলক সমালোচনা আমার মন খারাপের কারণ হয় না।

নারী দিবস (৮ মার্চ) উপলক্ষে দর্শকদের উদ্দেশে কী বলতে চান?
দর্শকদের বলতে চাই নারী যেন তার পরিবার থেকে যথাযথ সম্মান পায়। পরিবারের প্রতিটি পুরুষের উচিত তাদের নারীদের সম্মান করা। তা হলে নারী বাইরেও সম্মান পাবে। তার কাজ করতে উৎসাহ পাবে। এভাবেই একজন নারী এগিয়ে যাবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //