প্রদর্শিত হবে অভ্যুত্থানের নাটক ‘বেদিশা পিঁপড়া ও বহুপদী দৈত্য’

সমকালীন বাস্তবতা ও অভ্যুত্থানের স্পৃহার পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে পঞ্চগড়ে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘বেদিশা পিঁপড়া ও বহুপদী দৈত্য’।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে পনেরো দিনব্যাপী প্রযোজনা কেন্দ্রিক নাট্যকর্মশালার অংশ হিসেবে পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় নাটকটি প্রদর্শিত হবে।

ঘটনাক্রমের অমসৃণ গাঁথুনিতে নির্মিত এই নাটকের একটি অংশে দেখানো হয়েছে, নিকটজনের অপ্রাকৃত মৃত্যুতে ব্যক্তির একান্ত বিহ্বলতা, ক্ষোভ আর স্মৃতিকাতরতা। পাশাপাশি ফুটে উঠেছে একের মৃত্যুতে সমষ্টি কীরূপে আক্রান্ত হয় অথবা কীরূপে মৃতকে পুঁজি করে গোষ্ঠীগত ফায়দা হাসিলে নিযুক্ত হয়।

নাটকের অপর অংশে উপস্থাপিত হয়েছে বহুপদী দৈত্যের পদপিষ্ঠ পেশাজীবীর নিদারুণ সয়ে যাওয়া যাপনের আখ্যান এবং প্রতিবাদের বয়ান। অভ্যুত্থানের স্পৃহাকে পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে নির্মিত এই নাটকটি কর্মশালার মাধ্যমে নির্মিত একটি প্রযোজনা। প্রযোজনায় ক্রমাগত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ক্লান্ত, দিশাহীন মানুষ বা পিঁপড়ারা দর্শকদের কাছে প্রশ্ন হাজির করে, ‘ঠিক কতবার মরলে বাঁচার স্বাদ পাওয়া যায়’? 

নাট্যকর্মশালার মুখ্য প্রশিক্ষক ও নাটকটির নির্দেশক আশরাফুল ইসলাম সায়ান প্রযোজনা নির্মাণের নেপথ্যের ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিমণ্ডলের সর্বত্রই নিজের প্রাপ্য আদায়ের জন্য আমাদের লড়াই করতে হয়। নিজেদের যাপনের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা বুঝতে পেরেছিল যে, এই দুনিয়া হামেশাই আমাদের প্রতিকূলে থাকবে। ফলে, তারা আমাদের লড়াকু হিসেবে তৈরির যাত্রার সূচনা ঘটিয়ে দেন আমাদের অজ্ঞানেই, সেই ‘স্বরে অ-তে, অজগরটি আসছে তেড়ে’ থেকেই। অথচ, জগত মানবিকও তো হতে পারত। যেখানে বাঁচতে হলে লড়াই করার প্রয়োজন পড়ত না। জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হতো না যে, আমরা বাঁচতে চাই।’


প্রযোজনাটির নির্দেশনা সহযোগী, সংগীত ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন আশিক চৌধুরী। পোশাক ও দ্রব্যসম্ভার পরিকল্পনা করেছেন নৃত্যশিল্পী রিমি রফিক। নাটকটিতে অভিনয় করছেন জিকরুল ইসলাম, দুরন্ত বাবু, ধনেশ চন্দ্র বর্মন, মেঘলা দাস, জসীম উদ্দিন, জামিল জুলফিকার রাহাত, তামিম ইকবাল মিরাজ, মাসুদ রানা, রাদিয়াত ইসলাম, রায়হান ইসলাম, সেলিম হোসেন, হাবিবুর রহমান শাওন, রুখসাদ বিনতে আলম স্নেহা, শাহিন ইসলাম ও স্মৃতি রানী। প্রযোজনাটির মঞ্চ ও রূপসজ্জা পরিকল্পনা করেছেন মোস্তাক আহমেদ, গীত রচনা, দেহ বিন্যাস ও চলন পরিকল্পনা করেছেন আশরাফুল ইসলাম সায়ান এবং মহড়া ব্যবস্থাপনায় যুক্ত আছেন এটিএম মাহমুদুল আকতার মীম। নাট্যকর্মশালা ও প্রযোজনা সমন্বয় করছেন পঞ্চগড় জেলা কালচারাল অফিসার সৈয়দ জাকির হোসেন।

প্রযোজনা সম্পর্কে নির্দেশক আরো বলেন, ‘আমাদের পুরাণ ও লোকগাঁথার অন্দরে তালাশ করলে, সৃষ্টির জন্য বিসর্জন দেওয়ার বহু নজির পাওয়া যাবে। নতুন গৃহ বা স্থাপনা তৈরিতে, দীঘিতে জল ভরতে, অনাচার রুখতে, স্বৈরাচার উৎখাত করতে, সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তের এত চাহিদা কেন? এই ভূমি কেন এত রক্তভূক! এমন কী ঋণ করেছি আমরা- এত মরণেও শোধ হয় না! সব রক্ত ফুরিয়ে যেতে দিতে চাই না আমরা, রক্তপিপাসা থামাতে হবে এখনি। আমরা চাই বিপ্লবী তৈরির কারখানা নির্মাণ বন্ধ হোক, বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা লোপ পাক, জগতে শান্তি আসুক, সাম্য আসুক।’

আশরাফুল ইসলাম সায়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি সমকালীন ঘটনাকে আশ্রয় করে গবেষণাধর্মী নাট্যপ্রযোজনা নির্মাণ করে চলেছেন। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh