অভিনয়ের রঙিন দুনিয়া অনেককেই আকর্ষণ করে। টেলিভিশনের রঙিন পর্দায় নিজেকে দেখার তীব্র বাসনায় বিনিদ্র রজনীও কাটে অনেকের। পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীর মতো নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গত শতকের শেষের দিকে বহু তরুণ-তরুণীর বাড়ি ছেড়ে পালানোর ঘটনাও শোনা যেত। যদিও সে সময় কাজের জায়গা কম ছিল। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংখ্যাও ছিল কম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে অভিনয় একটি নির্ভরযোগ্য পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
নাটক, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, মানসম্মত বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে ওটিটির মতো নতুন মিডিয়া যুক্ত হয়েছে। কাজের পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। ফলে এখন আরো বেশি বিস্তৃত অভিনয় করার সুযোগ। কাজের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, ঠিক সে হারে ভালো অভিনয়শিল্পী বাড়ছে না। নিজেকে তৈরি না করা এর সবচেয়ে বড় কারণ। অনেকেই মনে করেন, অভিনয় করা অনেক সহজ, শেখার কী আছে। কিন্তু অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে হলে যে অভিনয় দক্ষতা আয়ত্ত করতে হবে! আর অভিনয় দক্ষতা আয়ত্ত করতেই অভিনয় শিখতে হবে এবং জানতে হবে।
অভিনয় একটি শিল্প। অন্য সব শিল্পের মতো এটিও চর্চার বিষয়। অনেকেই মনে করেন, অভিনেতা-অভিনেত্রী হতে গেলে তথাকথিত সুন্দর চেহারা থাকতে হবে, লম্বা হতে হবে, এটা ভুল ভাবনা। দক্ষিণ ভারতের তারকা অভিনেতা ধানুশ এবং বলিউড তারকা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ইদানীং তরুণদের মধ্যে এই পেশায় আসার ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের অনেকের মধ্যে সম্ভাবনা থাকলেও এবং অনেকেই এই পেশায় ক্যারিয়ার শুরু করলেও তাদের অভিনয় জীবন সাফল্যের সঙ্গে বেশি দিন অতিবাহিত করতে পারছেন না। এর কারণগুলো হলো অভিনয়ের ফাউন্ডেশন বা ভিত মজবুত নয়, স্থিরতার অভাব, নিজের দক্ষতাকে প্রতিমুহূর্তে সময়োপযোগী করতে চেষ্টা না করা, বই পাঠে অনাগ্রহ, সর্বোপরি সঠিক গাইডেন্সের অভাব। মূলত এসব কারণে ইচ্ছা ও সম্ভাবনা থাকার পরও নতুন প্রজন্মের অনেক অভিনয়শিল্পী, অভিনয় শিল্পে তাদের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন না বা শুরু করলেও বেশি দিন কন্টিনিউ করতে পারছেন না।
চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে, তাদের বিভিন্ন মেয়াদি কোর্স রয়েছে। কোর্সগুলোর কোনোটি তিন মাস এবং কোনোটি ছয় মাসব্যাপী। এসব প্রশিক্ষণে যারা যুক্ত হন তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে সঠিক গাইডেন্স এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি কাজের সুযোগও দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূলত শেখানো হয় ক্যামেরার সামনে সরাসরি অভিনয়, অভিনেতার প্রস্তুতি, অভিনয় কী, অভিনয়ের প্রকার-প্রকরণ, চরিত্রায়ণ, চরিত্র বিশ্লেষণ, অভিনেতার পর্যবেক্ষণ শিক্ষা, শুদ্ধ উচ্চারণ, আবৃত্তি, ধ্বনির ব্যবহার ইত্যাদি। এসব প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গেলে একজন নতুন অভিনয়শিল্পীর প্রাথমিক ভিতটি তৈরি হয়ে যায়। এরপর বাকিটা নিয়মিত চর্চা এবং সাধনার ওপর নির্ভরশীল।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh