২০ হাজার টাকা পুঁজিতেই কোটিপতি রাসেল

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান রাসেল। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে তিনি এখন একজন সফল ব্যবসায়ী। শখের বশে একটি ছাগল পালনের মধ্যে দিয়ে নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে ১২ বছরে কোটিপতি বনে যান সফল উদ্যোক্তা রাসেল। নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন “রাসেল ডেইরি ফার্ম” নামক একটি প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার বিকেলে কথা হয় সাম্প্রতিক দেশকাল প্রতিনিধি জুনায়েদ আহম্মেদের সাথে।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী গ্রামের কৃষক আবদুল হালিমের ছেলে রাসেল। তিনি বাবা, মা, ভাই ও স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দেখভাল করেন তার খামার।

সফল উদ্যোক্তা রাসেল জানান, ছোটবেলা থেকে ব্যাংকার হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের চাপে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে পড়তে হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু পড়াশুনা বেশিদূর আর এগোয়নি। ছাত্রজীবন থেকে বাবার কাছ থেকে নেয়া ১০/২০ করে টাকা করে জমিয়ে শখের বশে ২০ হাজায় টাকায় একটি ছাগল কিনেন তিনি। ওই ছাগল থেকে ৩টি বাচ্চা হয়। বাচ্চাগুলো বড় করে বিক্রি করেন এক লাখ টাকা। ব্যবসার এক লাখ ও জমানো আরো ১ লাখ টাকা দিয়ে একটি শংকর জাতের গাভী ও উন্নত জাতের দুইটি ছাগল কিনেন তিনি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কঠোর পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে ১২ বছরেই কোটিপতি বনে যান সফল এই উদ্যোক্তা।

বর্তমানে তার খামারে কোটি টাকা মূল্যের ৫০টি ছাগল ও ২৫টি গরু রয়েছে। গরু পালন, দুধ বিক্রি, গোবর, বায়োগ্যাস প্লান্ট, কেঁচো দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে আজ তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত খামারি এবং এলাকার বেকার যুবকদের আশার আলো।

সফল খামারি রাসেলের ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ জমির উপর খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। খামারে লোহার খাঁচায় সারি সারি বাঁধা রয়েছে বকনা গরু ও ছাগল। তিনি জানালেন, ২০১০ সালে ফিজিয়ান জাতের একটি গাভী থেকেই প্রজনন সম্প্রসারণ শুরু। বর্তমানে খামারে ২টি ষাঁড়, ১৫টি গাভী ও ১০টি বাছুরসহ ২৫টি গরু রয়েছে। বর্তমানে ১৫টি গাভী থেকে প্রতিদিন ১০০ লিটার দুধ পান তিনি। এছাড়া দেশীয় জাতের ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল, দেশী মোরগ-মুরগি, কবুতর পালনও শুরু করেছেন তিনি।

খামারি রাসেল বলেন, খামারে বাছুর হলো লাভের অংশ। বছর শেষে ৪০টি বাচ্চা হয় সাধারণত। বাছুর থেকে বছরে আয় হয় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে খামারে তার দেড় কোটি টাকার গরু ও ছাগল রয়েছে। খামারে বোয়ার, তোতাপুরি, হারিয়ানা, বিটল, শিরহি ও যমুনাপারি নামের জাতের ছাগল রয়েছে।


গরুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খরচ কমাতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নাই। খরচ সাশ্রয় হলে খামারি লাভবান হতে পারবে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন আহাম্মদ জানান, এ এলাকায় রাসেল বেকার যুবকদের একটা উদাহরণ। স্বল্প সময়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে রাসেল তার খামারের পরিসর বাড়াতে পেরেছেন। আত্মপ্রত্যয়ী এই যুবকের খামার দেখে বেকারত্ব দূর করতে অন্যরাও এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন এই জনপ্রতিনিধি।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আইয়ুব মিঞাঁ বলেন, রায়পুরে সফল খামারি রাসেল গরু ও ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী। তার খামারের গবাদি পশুগুলোকে প্রাণি সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। পশু লালন পালনে তাকে নানা পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতার দেয়ার কথা জানালেন প্রাণি সম্পদ বিভাগের এই কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //