মায়ের হাতেখড়িতে উদ্যোক্তা মুসফেরা

মুসফেরা জাহান। বর্তমান সময়ের একজন উঠতি উদ্যোক্তা। একটা সময় করেছেন শিক্ষকতা। তবে পরিবারকে সময় দিতে গিয়ে ছাড়তে হয়েছে সেই চাকরি; কিন্তু মুসফেরা চার দেয়ালে নিজেকে বন্দি রাখেননি। ছোটবেলায় মায়ের কাছে শেখা সেলাই যেন আজ মুসফেরার জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মুসফেরা ২০১৯ সালে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন এবং পেজের নাম দেন ‘মম ফানুস’। টাঙ্গাইল শাড়িতে ব্লক এবং হ্যান্ডপ্রিন্টিং কাজ করেন। শাড়ি, পাঞ্জাবি, ছোট বাচ্চাদের কাপড় ছাড়াও বিভিন্ন রকমের পণ্য তৈরি করেন। এ থেকেই শুরু হয় ১০ ধরনের পণ্যের কাজ। এছাড়াও তিনি ‘গেরস্ত বাড়ি’ নামে বিভিন্ন মসলার পণ্য নিয়ে আরও একটি ব্যবসা চালু করেন।

মুসফেরার বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নে। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বাবা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি ছিল দেশি শাড়ি-লুঙ্গির দোকান। মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। 


সাম্প্রতিক দেশকালকে মুসফেরা জানান, এইচএসসি পরে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরপরই সন্তানের মা হন। সন্তান হওয়ার দুই বছর পর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হয়েছিল। কিন্তু চাকরি বেশিদিন করা হয়নি। সন্তান ও স্বামীর চাকরির কারণে স্কুলে ইস্তফা দিয়ে বগুড়া চলে আসতে হয় তাকে। এরপর তিনি বগুড়ার আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এমএ পাশ করেন।


মুসফেরা বলেন, এমএ করার পর আবার শখের বশে বগুড়া হামদর্দ ইউনানি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ডিপ্লোমা ইন ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি কোর্স সম্পন্ন করেছি। এর পাশাপাশি ইউনানি কোম্পানিতে এবং হামদর্দে চাকরি পাই; কিন্তু সেই চাকরি বেশিদিন করা হয়নি। কারণ আমার দ্বিতীয় সন্তান। সে স্পেশাল চাইল্ড। মেয়েকে সময় দেবো চিন্তা করেই জব ছেড়ে দিতে হয়। উদ্যোক্তা হবো তখনো ভাবিনি। তবে আমি যখন সন্তান ও সংসার দুটো সামলিয়ে আসছিলাম, তখন আমার একমাত্র শখ ছিল সেলাই বা হাতের কাজ করা; যা মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলাম। বাচ্চাদের বিভিন্ন রকমের জামা বানিয়ে দিতাম। সঙ্গে নিজের জন্য জামা ও শাড়ি নিজে হাতের কাজ করে তৈরি করতাম। সেই থেকে আস্তে আস্তে কাজের দক্ষতা অর্জন করতে থাকি।


‘‘এরপর আশেপাশের মানুষ আমার কাজ দেখে আমার কাছে অর্ডার দিতে থাকে। ধীরে ধীরে অর্ডার বাড়তে থাকে। এরপর মূলত ব্যবসা করার চিন্তা আসে। তারপর থেকে মাঝে মাঝে আত্মীয়-স্বজনদের গিফট হিসেবে দিয়ে পণ্য প্রদর্শন করার চেষ্টা করতাম। চাকরি ছাড়ার পর সেলাইয়ের প্রতি যেন আরও বেশি আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমে বগুড়ার আশেপাশে বিক্রি করে ব্যবসার যাত্রা শুরু করি এবং পরবর্তীতে সেলাই আমার পেশা হয়ে দাঁড়ায়।’’

‘‘এরপর কাজটা কন্টিনিউ করতে পারিনি। মাঝে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে ২০১৯ সালের মার্চে বগুড়া ছেড়ে ঢাকা চলে আসি। ২০১৯ সালে মাত্র ৭ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কিছু টাংগাইল শাড়ি কিনে আবার শুরু করি ফেসবুক পেজ ‌‘মম ফানুস’। ৫ দিনের মধ্যে সব শাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। এছাড়াও শাড়ির সাথে ব্লকের মেটেরিয়ালস ও কয়েকটা পাঞ্জাবি দিয়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করি।’’


এভাবে মূলত শুরু হয় মুসফেরা জাহানের ব্যবসা। বর্তমানে হাতের কাজের থ্রি-পিস, শাড়ি, মসলিন শাড়ি, সিল্ক শাড়ি ও ব্লক প্রিন্ট শাড়ি ছাড়াও অনেক পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ পিস কাপড় উৎপাদন করেন। মাসে ৫০-৫৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছেন। পাশাপাশি মসলার ব্যবসা ভাল যাচ্ছে বলে জানান।  


মুসফেরা তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে বুটিক কারখানায় ৬ জন কর্মী ও গুড়া মশলা কারখানায় ১০ জন কর্মী কাজ করছেন। সামনে আরো বড় কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করছি। চাকরি থেকে নিজে উদ্যোক্তা হলে নিজের স্বাধীনতা বজায় থাকে জানিয়ে মুসফেরা বলেন, এখন নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলা আমার প্রথম লক্ষ্য। এ বিষয়টি সব সময়ই আমার মধ্যে কাজ করেছে। সামনে ইচ্ছা আছে আরও বড় কিছু করার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //