মৃৎশিল্পের ভালোবাসায় সফল উদ্যোক্তা তাহমিনা

ছোটবেলা থেকেই মাটির পাত্রে খাওয়ার শখ ছিলো তাহমিনা ইসলামের। এক সময় সেই শখের পণ্য নিয়েই কাজ শুরু করেন তিনি। সেই শখের পণ্যের ব্যবসা করেই এখন সফল উদ্যোক্তা তাহমিনা। 

প্রাচীনকালে গ্রাম কিংবা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে থাকতো মাটির প্লেট, গ্লাস, সানকি, কলস, পানির জগ, মগ, চায়ের কাপ, নাস্তার বাটি, বোল, হাঁড়ি ইত্যাদি। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্রের ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে। মূলত মাটির পাত্রের উপকারী দিকগুলো অনেকেই জানেন না বলে এর ব্যবহার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে মানুষ। মাটির পাত্রে রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং খাওয়ার জন্য মাটির তৈরি পণ্য ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে। তাই ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্রের ব্যবহার আবারো ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালাচ্ছেন উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম। 


বাবা-মায়ের ছোট মেয়ে উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার। ২০১৫ সালে বিয়ে হওয়ার দুই বছরের মাথায় একটি পুত্র সন্তানের মা হন তাহমিনা। কিন্তু বিয়ের আগে যে স্বপ্ন ছিলো তা পূরণ হয়নি বলে মনে একটি আক্ষেপ রয়ে যায়।


উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম জানান, এইচএসসির পর কাইতলা আলীমউদ্দিন জোবেদা ডিগ্রি কলেজ পড়া-লেখা শেষ করলেও প্রশাসনে কাজ করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, পরিস্থিতির কারণে স্নাতকও শেষ করতে পারেননি।

উদ্যোক্তা জীবন শুরু হওয়া নিয়ে তাহমিনা জানান, ২০১৯ সালে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। ব্যবসা প্রথম শুরু করেন দেশী থ্রি-পিস দিয়ে। কিন্তু তা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। পরে শখের মৃৎশিল্প নিয়েই কাজ শুরু করেন।


এরপর তিনি ২০২০ সালের ১০ জুলাই থেকে শখের মাটির তৈজসপত্র নিয়ে ব্যবসা নতুনভাবে শুরু করেন। ৯ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেন। মাটির ডিনার সেটসহ বিভিন্ন আইটেমের দিকে দৃষ্টি দেন। যাতে করে দেশীয় পণ্যের শৌখিন ক্রেতারা সৃজনশীলতা খুঁজে পায় এবং উদ্যোক্তার পণ্য সহজেই বিক্রি হয়। 

উদ্যোক্তার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ তাহমিনা’স কালেকশনে পণ্যের ছবি প্রদর্শন করে বিক্রি করে থাকেন। এখন তিনি মাসে বিক্রি করেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।


দেশের কোন কোন স্থানে পণ্য বিক্রি করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু মাটির তৈরি পণ্য তাই দেশের ঐতিহ্য হিসেবে অনেকেই শখ করে মাটির তৈরি প্লেট ও গ্লাসে খাবার খেতে পছন্দ করে। তাই বাংলাদেশের অনেক জায়গা থেকেই অর্ডার আসে। আর তিনি সব সময়ই চেষ্টা করেন নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছে দিতে।


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম বলেন, নিজের একটি শো-রুম হবে ইনশাআল্লাহ। আমি চাই আমার দ্বারা অসহায় ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান হোক।


নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছে থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। প্রতিটা নারীর উচিত নিজের পায়ে দাঁড়ানো। নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করা। মেয়েরা চাইলে সব করতে পারে, সব বাধা অতিক্রম করতে পারে, শুধু আমাদের ইচ্ছে শক্তিটা প্রয়োজন। 


এছাড়া তিনি বলেন, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেন নিজের স্বপ্নগুলোকে একটু একটু করে বাস্তবায়ন করতে পারি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //