প্রকৃতিতে বইছে দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। রোজা শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই এমন গরমে দিশাহারা হয়ে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জেলার মানুষ। এই গরমে সবথেকে বেশি কষ্ট হয় শিশু ও বয়স্কদের। গরমের তীব্রতা আরও কয়েক দিন থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সময়ে শিশু ও বয়স্কদের সুস্থতায় সঠিক যত্ন নিতে হবে। নিয়ম মেনে খাবার খাওয়াসহ এড়িয়ে চলতে হবে ভাজাপোড়া। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ স্থানেই মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন বাড়তে পারে।
আজ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগসহ মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান চলমান তাপপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টি না থাকায় আরও সপ্তাহখানেক মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। এ সময় কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আগামী প্রায় এক সপ্তাহ বড় ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে দেশের উত্তর-পূর্বের সিলেটে অল্প বৃষ্টি হতে পারে। যদিও আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের আগে নয় এমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া যশোর, রাজশাহীতে তাপমাত্রা উঠে গেছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। দেশের আরও বেশ কিছু স্থানেও তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। গত রবিবার (৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের এই অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হলেও নেই ঝড়ের সম্ভাবনা।
এপ্রিলে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সে সঙ্গে মাসের শেষার্ধ্বে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের ফলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টি এবং দুয়েক দিন তীব্র কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
গরম শুরুর পর গত কয়েক দিন রজাধানীতে দেখা গেছে, নগরবাসী প্রখর রোদে ছাতা নিয়ে বাইরে বের হচ্ছে। রাতে ঘুমাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। শ্রমিকদের মাথায় গামছা বেঁধে কাজ করতে দেখা গেছে। যানবাহনে শ্বাস নেওয়া কষ্টকর। গরমে সবথেকে বেশি কষ্ট হয় দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে। ইফতারের আগে এ যানজট আরও তীব্র হয়। এ সময় রোজাদারদের কষ্ট বেড়ে যায় বহুগুণ।
২০২১ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে তাপপ্রবাহের সময় বয়স্ক মানুষ, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িব পরিশ্রম করেন তারা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন।
গরমে শিশুদের ভালো রাখার উপায়: গরমে সবথেকে বেশি কষ্ট হয় শিশুদের। এ সময় শিশুদের প্রতিদিন নিয়ম মেনে গোসল করানো, অন্তত দিনে দুবার মাথাসহ পুরো শরীর নরম সুতি কাপড় কিংবা ভেজা গামছা দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে কিছুক্ষণ পরপর নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, তাজা ফলের শরবত খাওয়াতে হবে। যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে, তাদের ঘন ঘন বুকের দুধ দিতে হবে।
গরমে কী খাবেন, কী খাবেন না: পুষ্টিবিদরা বলেন, গরমে সাধারণ জ্বর, কাশি, হিটস্ট্রোক, এলার্জি, কোষ্ঠকাঠিন্য, পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়াও পানিবাহিত রোগ যেমন- কলেরা, জন্ডিস, ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও অনেক বেশি। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে দিনে ২-৩ লিটার ফ্রেশ পানি পান করা উচিত। কফি, চা, কোল্ড ড্রিংক অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিত। প্রচণ্ড গরমে খুব ঠান্ডা পানি এবং বাইরে থেকে এসে কোনোভাবেই ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত নয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বাংলাদেশ পরিবেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর তাপপ্রবাহ তাপমাত্রা
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh