একটি ব্যতিক্রমী অনিন্দসুন্দর পাখি। আমাদের পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। শীতকালে উপকূলে বেশ বড় একটি ঝাঁকের আগমন ঘটে। এ ছাড়াও অন্যত্র বড় নদীতে মাঝে মাঝে স্বল্প সংখ্যায় দেখা যায়। এরা প্রধানত প্রশস্ত নদী এবং অববাহিকায় অবস্থান করে থাকে।
পাখিটি কোথাও কোথাও পানিকাটা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Indian Skimmer. পৃথিবীতে তিন প্রজাতির স্কিমার আছে। দেশি-গাঙচষা ছাড়াও আছে আফ্রিকান স্কিমার এবং উত্তর আমেরিকার ব্ল্যাক স্কিমার। আকৃতিতে ব্ল্যাক স্কিমার সর্ববৃহৎ। সব স্কিমারদের শরীরের উপরের পালক কালো, নিচে সাদা, মাথা সাদাকালো, ঠোঁট প্রধানত লাল, ছোট পা-জোড়া লালচে। নিচের ঠোঁটটি উপরের ঠোঁটের চেয়ে দীর্ঘতর এবং ছুরির মতো পাতলা। ফলে উড়ন্ত অবস্থায় পানি কেটে চলতে সুবিধা হয়। পাখা দুটি দীর্ঘ এবং সুচালো, যা এই কাজে সহায়তা করে।
দেশি-গাঙচষা লম্বায় সর্বোচ্চ ৪৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে, পাখার বিস্তার ১০৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পানির উপরের দিকের জলজ পোকা এবং ছোট চিংড়ি ও মাছ এদের প্রধান খাদ্য। কখনো একা আবার কখনো ছোট দলে মিলে খাবার খুঁজে থাকে।
নদীর চরে খোলা স্থানে এরা বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। স্ত্রীটি ৩ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। দিনের শীতল ভাগে বিরতিহীনভাবে ডিমে তা দিয়ে থাকে, তবে উষ্ণ সময়টিতে বাসা থেকে দূরে থাকে। এরা কখনো কখনো নদীয়া-পানচিলের বাসায়ও ডিম পেড়ে থাকে।
এদের প্রজনন স্থান সংলগ্ন নদীগুলোতে পানির স্তরের অতিরিক্ত ওঠানামা, সেচ এবং বালু উত্তোলনের ফলে উঁচু পানির লেভেলে বাসা ভেসে যায়। আবার পানি বেশি নিচে নেমে গেলে বাসাগুলো শিকারি প্রাণীদের নজরে পড়ে যায়। এ সমস্ত কারণে ডিম নষ্ট ও ছানা মৃত্যুর হার বেশি, যা এদের সংখ্যাকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। আগে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এদের বিস্তৃতি থাকলেও বর্তমানে ঐ অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে। এখন শুধু ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে এই পাখিটিকে দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে শুধু ভারতের মধ্যপ্রদেশের চম্বল নদীর চরাঞ্চলে এদের প্রজনন লক্ষ করা যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী তিনটি প্রজন্মে এদের বর্তমান সংখ্যা ৩৪-৪৬% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এসব কারণে আইইউসিএন দেশি-গাঙচষাকে বিলুপ্তি হুমকি তালিকায় রেখেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : পাখি Indian Skimmer দেশি-গাঙচষা
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh