নজরুল জীবনের কিছু অধ্যায়

১.

‘পুড়িব একাকী’-তে জীবনের গল্পটি তুলে এনেছি, রঙ চড়াইনি। প্রজাপ্রতির পাখা রঙিন হয়ে উঠেছে মাঝে মাঝে। ফিকশন, ইতিহাস নয়। গল্প আমাদের প্রিয় কবির। বিদ্রোহ ও সুন্দরের কারণে হিন্দুরা অনুভব করছেন, মুসলমানরা আঁকড়ে ধরতে চাইছেন তাদের একমাত্র নকিব, কমরেডরা খুঁজেছেন বঞ্চিতের জয়গান উদ্গাতাকে। মাত্র দশটি বছর সময় পান কবি তার জীবন মেলে ধরার। সাম্প্রদায়িক মিলনের স্বপ্ন ছিল তার। চুরমার করে দিতে ছুটে আসে মহাযুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা। প্রতিকূল সময়ের ঝড়ে পাল তোলে হিংসা-অপবাদের ছুরি, অপমান। বিক্ষত কবিমনকে ধীরসন্তর্পণে গ্রাস করে দারিদ্র্য, আঘাত ও ব্যাধি।

সম্প্রদায়ের সমঝোতা না হতেই দেশ ভাগ। উপন্যাসের ময়ূরপঙ্খী কখনো চলে দুলকি চালে বাতাসের আবর্তে, কখনো ফিকশনের ক্ষরস্রোতে; স্বগত উচ্চারণে, কবিতায়, গানে, ভাষণে। বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম মানসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে কবি, প্রবাহিত তিনি নিজ দুঃখনদীতে। কেউ নিতে পারেননি সে দুঃখভার।

ময়লা কথা ময়লা বাক্সে। শেষের দিনে ঘাড়ে মাথায় নিয়েছেন আঘাত। পিতৃবন্ধু মল্লিক এর কথন সত্যি বলে গ্রহণ করেছি। বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি অসুস্থ, আর ওই দিন থেকে তার অসুস্থতা বেড়েই চলে, চিকিৎসা হয় বহুদিন ধরে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন নির্বাক। আপনার মনে পুড়েছেন একাকী গন্ধবিধূর ধুপ। এরপর আর গল্প নেই।

সবার আগ্রহ অন্তর্গত মানুষটির গল্পে, কবিপ্রাণে। সমসাময়িকদের স্মৃতিবাসরে সযতনে কুড়িয়েছি সংলাপ। পথ গিয়েছে বেঁকে, দু’ধারের তৃণলতাও কথা বলে উঠেছে। ইথারে ভেসে বেড়ায় স্বগত সংলাপ। কথা ছিল তার গানের ভাষণের আড়াল। কেউ খুঁজবেন স্থান কাল পাত্র। আমি শুধু মূল সুর খোঁজার চেষ্টা করেছি।

ছোট জীবন, ব্যাপ্তি বিশাল, প্রয়োজন হাজার পৃষ্ঠার। লিখেছেন অল্পই। তার কেউ নই আমি, তবু উত্তরাধিকারীদের একজন। লক্ষ অনাত্মীয় পাঠক পড়বেন ঘনিষ্ঠতম কবির কাহিনী। প্রজন্মের অশ্রুভরা চোখে নামাবে বিষাদের বৃষ্টি, যা আমার ইচ্ছা ছিল না। একাকী পুড়েছে যে কবির হৃদয়, জলসা শেষে ফিরে গেছেন প্রভুর কাছে। গ্রন্থের প্রতিবাক্য ভালোবাসার অশ্রু দিয়ে গাঁথা, গীতশেষে প্রার্থনা।

বিদ্রোহী প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। অসহযোগের গান গেয়েছেন একদিকে, আবার রাজা-রাণীর জয়গানও গেয়েছেন, তাদের সঙ্গে নজরুলের তফাৎ বুঝবেন এই গ্রন্থে। যার ধর্ম তার কাছে। পৃথিবীতে এত মানুষ। প্রতি মানুষের সমর্পণ ও সম্পর্ক তার নিজ প্রভুর সঙ্গে আলাদা। ধর্ম বাইরে থেকে শনাক্ত করা গেলেও ভেতরে ঢোকার সাধ্যি কার, প্রতি মানুষের সঙ্গে বিধাতা সেখানে একাকী, নজরুল, আমার, আপনার সবার ক্ষেত্রে তাই।

হিন্দু-মুসলমানের সমঝোতা হয়নি। মাটির কলসি ভেঙে গেলে আর জোড়া লাগে না। থাকব ভাইয়ের মতো, হিংসার ঊর্ধ্বে।

২.

নজরুলের বিদ্রোহবাণীতে প্রকাশিত বাঙালির চিরকালীন মুক্তির উদ্দাম স্বপ্ন। কোথাও নেই কোনো বাধা, নেই কোনো অস্পষ্টতা। সমাজের, যুগের ও জনতার দাবি এক হয়ে প্রকাশিত হলো নজরুলের মাঝে, আর কারও মাঝে নয়।

‘মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল

আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,

কবিতা প্রকাশিত হলে বাঙালির শিরায় শিরায় বয়ে যায় তরল অনল। কে এ বিদ্রোহের কবি? রাতারাতি বিখ্যাত কবি নজরুল।

বক্তৃতা মঞ্চ থেকে উনি গাইলেন :

কারার ওই লৌহ কপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট

রক্তজমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি ...

সরকারি রোষ নেমে আসে নজরুলের বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকেই। ফৌজদারি বিধির ৯৯ এ ধারায় বইটি বাজেয়াপ্ত হয়। বইটি ‘নবযুগ’ পত্রিকায় লেখা নজরুলের কয়েকটি নিবন্ধের সংকলন। এর দু’বছর পর ‘বিষের বাঁশি’ ও ‘ভাঙার গান’ বাজেয়াপ্ত হয়।

‘বিষের বাঁশি’র প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদে তরুণ কিশোর বাঁশি বাজাচ্ছে হাঁটু গেড়ে, তাকে জড়িয়ে বিশাল এক বিষধর সর্প, তীক্ষ্ণ জিহ্বা অগ্রবর্তী, কিশোরের অবয়বে নেই সামান্যতম ভয় ও ভীতি। তন্ময় হয়ে সে বাঁশি বাজিয়েই চলেছে। বাঁশির সুরে যেন জেগে উঠছে সমস্ত পৃথিবী।

নজরুল যেমন শত্রু চিনেছিলেন, ইংরেজও। ‘যুগবাণী’তে ছাপা তার লেখা ‘কালা আদমীকে গুলি মারা’ প্রবন্ধে ইংরেজদের প্রতি তার প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষের পরিমাপ করা যায়। লিখেছেন :

‘একটা কুকুরকে গুলি মারিবার সময়ও এক আধটু ভয় হয়, যদি কুকুরটা আসিয়া কোনো গতিকে গাঁক করিয়া কামড়াইয়া দেয়! কিন্তু আমাদের এই কালা আদমীকে গুলি করিবার সময় সাদা বাবাজীদের সে-ভয় আদৌ পাইতে হয় না। কেননা তাহারা জানে যে, আমরা পশুর চেয়েও অধম।’

কবিতাটি প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো। বারীন্দ্রকুমার দাস মাদ্রাজ থেকে নজরুলকে সাবধান করে দিলেন : গরম গরম লিখে জেলে যেও না। মুজফ্ফর আহমদ লিখছেন,

: ‘ধূমকেতুর অনেক লেখা নিয়েই নজরুলের নামে মোকদ্দমা হতে পারত, কিন্তু মোকদ্দমা হলো আনন্দময়ী আগমন নিয়ে’। ধূমকেতু জনপ্রিয় হয়ে উঠল। পত্রিকা বেরুলেই তা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়, কয়েক মিনিটের মধ্যেই পত্রিকা শেষ।

মুজফ্ফর আহমদ লিখছেন : ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে একসঙ্গে অনেকগুলো জুতোর শব্দ শোনা গেল। পুলিশ এসেছে ধূমকেতুর অফিসে তল্লাশির পরোয়ানা ও কাজী নজরুল ইসলামের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে’। নজরুল ওই পত্রিকায় লেখেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’।

‘এক ধারে রাজার মুকুট, অন্য ধারে ধূমকেতুর শিখা। একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড, অন্য জন সত্য হাতে ন্যায় দণ্ড। রাজার পক্ষে নিযুক্ত রাজ-বেতনভোগী রাজকর্মচারী। আমার পক্ষে সকল রাজা, সকল বিচারকের বিচারক, আদি অনন্তকাল। রাজার পেছনে ক্ষুদ্র, আমার পেছনে রুদ্র। রাজার পক্ষে যিনি, তার লক্ষ্য স্বার্থ, লাভ অর্থ আমার পক্ষে যিনি কার লক্ষ্য সত্য, লাভ পরমানন্দ।

রাজার বাণী বুদ্বুদ, আমার সীমাহারা সমুদ্র। আমি কবি, অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করবার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য প্রেরিত। সত্যের প্রকাশিকা রাজ বিচারে রাজদ্রোহী, ন্যায় বিচারে সে বার্ন ন্যায় দ্রোহী নয়। ধর্মের আলোকে ন্যায়ের দুয়ারে তা নিরাপদ নিষ্কলুষ অম্লান অনির্বাণ সত্যস্বরূপ’।

বিচারাধীন থাকার সময় কবিকে প্রেসিডেন্সি জেলে আটক রাখা হয়। কারাদণ্ডের পর তাকে প্রথম আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে হুগলি জেলে। বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা ও উৎপীড়নের প্রতিবাদে কবি অনশন শুরু করেন। জেল কর্তৃপক্ষ কাজীর দাবি মেনে নিতে রাজি নয়। নজরুলও দাবি না মানলে অনশন তুলবেন না। দিন দিন কবি হয়ে পড়লেন হীনস্বাস্থ্য। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস জনসভা ডাকলেন। কলেজ স্কয়ারে গোলদীঘির এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। বক্তা : হেমন্ত সরকার, অতুল সেন, মৃণালকান্তি বসু, কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচি জানালেন, নজরুলকে বাঁচান বাংলাদেশ ও সাহিত্যের পক্ষে প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ টেলিগ্রাফ পাঠালেন : ‘গিভ আপ হাঙ্গার স্ট্রাইক, আওয়ার লিটারেচার ক্লেইমজ ইউ’।

এর মধ্যে কারাগারে বিষধর সাপ ঢুকিয়ে কবিকে মেরে ফেলার চক্রান্ত। কবি বললেন, ‘আমাকে মেরে ফেলা এত সহজ নয়। আমি ততদিন বেঁচে থাকব, যতদিন ওরা বিতাড়িত না হয় এ দেশ থেকে’।

গোলামির চেয়ে শহীদি দরজা অনেক ঊর্ধ্বে জেনো

চাপরাশির ওই ‘তকমা’র চেয়ে তলোয়ার বড় মেন

শৈলজানন্দ হাওড়া স্টেশনে তুলে দিতে এলো নজরুলকে। আবার কতদিন পর দু’বন্ধুতে দেখা হবে কাল-ই তা বলে দেবে। সেখানে গিয়ে পরদিনই চিঠি দেবে বলেছিল। সেই চিঠি এলো পুরো একমাস পর। বেগুণীরঙের কালিতে তার মনের নির্যাস।

নানা কথার পর লিখেছে :

ঊনপঞ্চাশ রাহুগ্রস্ত বাঙালি পল্টনটা ভেঙে দেবার কথা চলছে রে! আবার ঘুরতে হবে পথে পথে। এবার বল তুই। ‘বল্ মা তারা দাঁড়াই কোথা’? সেই পাশ বালিশটা ঘাড়ে তুলে নিয়ে সোজা উঠব গিয়ে তোর আস্তানায়। তারপর যা থাকে কপালে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছে শৈলজা। কি করবে নজরুল? কোথায় যাবে, কি করবে?

শৈলজানন্দ জানে আরেকজন নজরুলকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।

বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের দোচালার সেই ঘরখানি। মুজফ্ফর আহমদ সাহেব নজরুলের থেকে দশ বছরের বড়, সিংহ হৃদয় বলেছিলেন, চলে তো আসুন এইখানে, তারপর দেখা যাবে। ছোটখাটো মানুষটি; কিন্তু কত বড় হৃদয়।

চোখে আলো লাগার ক্ষণ আসে, হঠাৎ আসে ভালো লাগার মুহূর্ত, যখন মনের পর্দার রঙ যায় সহসা বদলে, কখনো সে রঙ পলাশের, কখনো শিমুলের। তখন নজরুলের কবিতা বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে। প্রলয়ের উচ্চারণের মতো; কিন্তু তা তো নয়, এ যে ফুলের ঘ্রাণ ঝড়ের গর্জনে।

৩.

প্রথম দর্শনেই প্রমিলাকে ভালো লেগে যায়। কবি প্রথম দিন তাকে দেখেই বললেন,

: যত গান লিখেছি তাতে সুন্দরের কল্পনা ছিল। কল্পনার সঙ্গে বাস্তব মেলান কঠিন, বাস্তব কল্পনাকে এড়িয়ে চলে।

: আজ আপনাকে প্রথম দেখলাম। আমার কল্পনার কবির সঙ্গে বাস্তবের কত মিল। সব গান শুনিনি, সব কবিতাও নয়। আজ দেখা হবে কল্পনাও করিনি, দেবলোকের কল্পরাজ্য থেকে কেমন করে নেমে এলো আমার কবি, মাটির এ পৃথিবীতে?

: তুমি আমার তুমি। আমি জানি তুমি আমার লেখা ভালোবাস, তাই তোমার কাছে এসেছি। আমার লেখা যে ভালোবাসবে সর্বাধিক, তার কাছেই সমর্পিত হতে চাই।

: আপনার সমর্পণের অর্থ আমার এখনো বোঝা হয়ে ওঠেনি। যদি তা হয় আমাদের দু’জনের মিলন তাহলে কাল বিলম্বে প্রস্তুত নই। এ সুযোগ সবার জীবনে আসে না। আমার তো নয়ই। আমার জানতে হবে একটি কথা।

: কি সে কথা? 

: সমর্পণটা সত্য কিনা।

: সমর্পণ, সমর্পণই। মিথ্যা কখনো সমর্পণ হতে পারে না। না মানুষের কাছে, না ঈশ্বরের কাছে। যদি সত্যি হয়, তাহলে তা সারাজীবনের জন্যই সত্যি।

আরও কথা ছিল, বাতাসে ভেসে গেছে। সংগ্রহ করতে হলে যেতে হবে গানগুলোর কাছে, প্রতিনিয়ত যা বেজে চলেছে বোদ্ধা শ্রোতার অন্তরে। যেখানে বাঙালি, গানগুলো নিরন্তর বাজছে সেখানেই।

প্রমিলাকে ভালোবাসতেন অন্তর দিয়ে। কবিতায় ও গানে যারা তাদের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রমিলা নেই। যখনই ঘরোয়া, গেয়ে উঠেছেন উদ্দেশ্যে :

তোমারেই আমি ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার

জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার

বিয়ে নিয়ে হুলুস্থূল। হিন্দু রমণী বিবাহের প্রতিক্রিয়া সহজ ছিল না। চুরুলিয়ায় প্রমিলাকে মুসলমান কেন করা হয়নি, এ নিয়ে চলেছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। নজরুল বলেছেন,

ওদেরও কেতাব আছে, তাই কেতাবী হিসেবেই ওর ধর্মান্তরণ প্রয়োজন হয়নি আমার কাছে। আমি এও জানি অসবর্ণ বিবাহের এ গ্লানি যেমন মুসলমানদের কাছে অসহ্য, তেমনি হিন্দুদের কাছেও। আমার ঘরে অতিথি এলে সব সময় থাকি ভয়ে ভয়ে। আমার সন্তানরা মুসলমান হবে, না হিন্দু হবে, তাদের কবর দেবে, না দাহ করবে, এ নিয়ে আমার কোনো সংস্কার নেই। তাই বলে ওদের যে থাকবে না, তাই বা কি করে বলি।

বিয়ে বাড়ি নিয়ে কত গান। কত নৃত্যনাট্য, গীতিনাট্য, আলেখ্য, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ঘিরে। 

গানের রাজা নজরুলের বিয়েতে নেই গান, কোলাহল, ঘরসাজান, খাওয়া-দাওয়া। হৈ হৈ হট্টগোলে ভরে থাকত বিয়ের মহফিল গায়ক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের নিয়ে। ভোর থেকে বসবে তাদের কবিতার জলসা, ফুলে ফুলে ভরে যাবে চারদিক, দাওয়াত পাবেন যারা তারাও আসবে, আর যারা পাবেন না এমনই লক্ষাধিক নজরুল ভক্ত বিয়েতে শামিল হবেন, শুধু বলতে, ‘আমিন’, ‘আমিন’। চারদিক থেকে ভেসে আসবে গজলের শিরীন আওয়াজ, ‘আজ শাদিমে মিলেঙ্গে হাম দোনো, উঁপর সে মাঙ্গে দোয়ায়েঁ’। কলকাতার নব্য কবি শিল্পী সাহিত্যিক নতুন সাজ পরে উপস্থিত এই বিয়ের মহফিলে। এমন ভরপুর বিয়ে আর কোথায় কে দেখেছে।

স্বপ্নে দেখা সে বিয়ের মহফিল সম্বন্ধে বলছেন শাহ্রিয়ার :

তোমার বিয়েতে কাজীদা, আমি পরব আঙরাখা, আমার দাদা রেখে গেছেন আমার জন্য জরি বসান সাদা শাহী পোশাক। তোমার মহফিল স্বপ্নের মহফিল। ইরান থেকে এসেছে অজস্র পরী, ছুটি নিয়েছে তারা হাফিজের শিরাজের মহফিল থেকে। গোলাপে গোলাপে আচ্ছাদিত বাগান বেহেশতের হুরপরীরা নিয়ে এসেছেন রেকাবে করে বেহেশতি ফলের সরঞ্জাম নিয়ে। সবচেয়ে সুগন্ধি আতর ছড়িয়ে দিয়েছে তার সমস্ত মহফিলে। গজলের পরিবেশে শামিয়ানায় এসে বসেছেন সুবে বাংলার বড় বড় ওস্তাদরা। পানের রস ছড়িয়ে পড়ছে তাদের গোলাবি বদন থেকে। গাইছেন, ওস্তাদ জমির উদ্দিন খান ফারসি বায়েত :

আওমাদে বাকাত লে ম্যান উন শওখে সিতামগারে।

এ এক অন্য বিয়ে। চারদিক নীরব নিস্তব্ধ, সাদামাটা অনুষ্ঠান, যাতে দুটি প্রাণ নীরবে হবে মিলিত। মিলনটাই বড়, বাইরের হট্টগোল, চাকচিক্য নয়। কখনোও কেউ ভেবেছিল এমনি নীরব নিস্তরঙ্গ হবে এই বিয়ে বাড়ি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //