মানবতার কবি নজরুল

নজরুলের সাহিত্যে অনেক অসামান্য রচনা আছে; কিন্তু আমাকে আকৃষ্ট করে কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিত্ব।

নজরুল গরিব ছিলেন। অভাবের দরুণ তার রুটির দোকানে কাজ করতে হয়েছে, রেলওয়ে গার্ডের বাড়িতে ভৃত্যের কাজ করতে হয়েছে। লেখাপড়া করার মতো টাকা-পয়সা ছিল না; কিন্তু একটা জায়গায় তিনি এ সমস্ত থেকে মুক্ত ছিলেন, সেটি হলো তিনি অসামান্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। সেই প্রতিভার বলে তিনি সামনের দিকে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে গেছেন। যেমন রুটির দোকানে কাজ করলেও লেখাপড়া শিখেছেন। সবাই লেখাপড়া শেখে স্কুলে গিয়ে, কিন্তু তিনি ধরাবাঁধা পথে যাননি। তিনি দেখে শুনে আলাপ করে শিখেছেন। প্রতিভাবলে শিখেছেন।

নজরুল সব সময় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখেছেন, তা নয়। তিনি যখন যুদ্ধে ছিলেন, তখন তিনি গল্প, প্রেমের উপন্যাস লিখেছিলেন। এর মধ্যে সমকাল ছিল না। হঠাৎ করে একটা জায়গায় লাল ফৌজের কথা এসেছে সেটা তার সমসাময়িকতার প্রমাণ দেয়, পৃথিবীতে তার চারদিকে কি ঘটছে সে সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। 

পরে যখন কলকাতায় ফিরে এলেন, তিনি সে সময় যেসব রচনা লিখেছেন সেগুলো হলো কবিতা, ছোট গল্প ও উপন্যাস। তার মধ্যেও সমসাময়িকতা ছিল না। এটা কলকাতায় ফিরে আসার পর প্রথম দেড় বছরের ঘটনা। তারপর তিনি ধীরে ধীরে সমসাময়িক বিষয়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে অসামান্য সব কবিতা লিখেছেন। ছোট গল্প, গান লিখেছেন, প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করেছেন। সমসাময়িকতার প্রভাবে অসামান্য সব কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। 

চিত্তরঞ্জন দাশ যখন কারাগারে বন্দি ছিলেন, তখন নজরুল লিখলেন, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট’। এটি একটি অসামান্য গান। এটা সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে লেখা। অন্যদিকে আছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি ঠিক সমসাময়িক নয়, এতে বিদ্রোহের কথা আছে- সামাজিক শোষণের নামে বিদ্রোহ, ধর্মের নামে বিদ্রোহ, স্বাধীনতার নামে বিদ্রোহ। এটা নিঃসন্দেহে বিদ্রোহ; কিন্তু নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পংক্তিতে যা তুলে ধরেছেন, তা কেবল ওই সময়ের ঘটনা নয়। এখানে নজরুলের যে বিদ্রোহ, তা চিরকালীন বিদ্রোহের বাণী।

নজরুল ১৯২৫ সালের দিকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ঠিক রাজনীতির দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন বলব না, প্রকৃত পক্ষে বন্ধু আব্দুল হালিমের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। হালিম ছিলেন মনে-প্রাণে কমিউনিস্ট। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে তিনি নির্বাচনে নেমেছিলেন ১৯২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। তখন নজরুল সেই নির্বাচনে প্রচারের কাজ করতে যান আব্দুল হালিমের পক্ষে, আর এটি করতে গিয়ে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন নজরুল। প্রায় মারা যান এমন অবস্থা হয়েছিল, এরপর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন ১৯২৫ সালের শেষ দিকে। পরে বন্ধুদের নিয়ে একটা দল করলেন, যার নাম ছিল- লেবার স্বরাজ দল। তিনি জানতেন এ দল এত ছোট, টাকা-পয়সাও কম, এর হয়ে কিছুই করা যাবে না। সুতরাং ঠিক করলেন কংগ্রেসের একটা অংশ হিসেবে নিজেদের দেখবেন এবং তখন নজরুল রাজনীতিতে সত্যি সত্যি খুবই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

এ সময় নজরুল কতগুলো কবিতা লেখেন- সাম্যবাদী কবিতাগুচ্ছ। যার মধ্যে মানুষ আছে, কবিতা আছে, ঈশ্বর আছে, নারী আছে, বীরঙ্গনা আছে, কুলি-মজুর আছে। এইসব কবিতাই ছিল আধুনিক ও অসামান্য, নজরুলের দারুণ সব সৃষ্টি। তিনি এই সময়ে যে কবিতা লেখেন, সেসব কবিতা সব মানবের জন্য, সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে, সকল ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে। 

পরে তিনি তার এক বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারের আহ্বানে কৃষ্ণনগরে চলে যান হুগলি থেকে। কৃষ্ণনগরে গিয়ে তিনি রাজনীতিতে আরো জড়িয়ে পড়েন। যার আহ্বানে তিনি কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলেন, সেই হেমন্ত কুমার সরকার ছিলেন বেঙ্গল ব্যবস্থাপক সভার একজন মেম্বার। তার সাথে নজরুল কাজ করতে শুরু করেন। এরা তখন একটা পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি সপ্তাহিক- নাম ‘লাঙল’। এটি টিকে ছিল মাত্র তিন মাস। 

সেই সময়ে তিনি কয়েকটি জেলার চাষিদের সাথে জড়িয়ে যান। তিনি ফরিদপুরের জেলেদের ও বগুড়ায় গিয়ে কৃষকদের একটা সম্মেলনে যোগ দেন। ফলে এই সময়ে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন, তবে কিছুদিন পরেই তিনি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। আবার এই বছরের শেষ দিকেই যখন নির্বাচন হয় তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে তিনি সমস্ত ভুল হিসেব করেছিলেন। তিমি মনে করতেন ৩০০ টাকা দিয়েই নির্বাচন করা যাবে। বিধান রায়ের বুদ্ধিতে নির্বাচনে নামলেন তিনি, কিন্তু বিধান রায় পরে তাকে যথেষ্ট টাকা দেননি। ২৫০ বা ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা নিয়ে উনি ঢাকায় গিয়েছিলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য। মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কিছু আসন ছিল। বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ এই চারটা জেলা তখন একটা বিভাগ ছিল। এই বিভাগে তিনি একজন মেম্বার হিসেবে প্রার্থী হন। দু’জন মেম্বার হওয়ার কথা পাঁচজন ক্যান্ডিডেট ছিল। সেই নির্বাচনে তিনি ভেবেছিলেন ভোটে জয়ী হবেন। 

তিনি কবি জসীমউদ্দীনকে বলেছিলেন, ‘ঢাকায় তো সবাই আমাকে ভোট দেবে, ফরিদপুর থেকে কয়েকটা ভোট পেলেই আমি নির্বাচিত হব।’ কিন্তু তিনি এত কম ভোট পেয়েছিলেন যে, তার জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছিল ও ম্যালেরিয়া, রক্ত আমাশয় নিয়ে তিনি ফিরে যান কৃষ্ণনগরে (বাড়িতে)। 

কৃষ্ণনগর যাবার পর আমরা আরেক নজরুলকে দেখতে পাই। এই নজরুলের সাথে সমসাময়িকতার কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি ১৯৪১-৪২ সাল অবধি সুস্থ মানুষ হিসেবে বেঁচে ছিলেন। এ সময়ে তিনি গান লিখেছিলেন, গান, তারপরে গান, তারপর আরো গান এবং এই গানগুলোর মধ্যে সমসাময়িকতা সে অর্থে নেই, দু-একটা গানে থাকতে পারে। 

কিন্তু তিনি সমসাময়িকতা থেকে দূরে গিয়ে, রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে, টাকা আয় করতে শুরু করেন গান দিয়ে। একটা গান লিখলে তিনি ২০ টাকা পেতেন; কিন্তু একটা কবিতা লিখলে সবসময় ১০ টাকাও আয় হতো না। এই সময়ে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানির সাথে যুক্ত হন। গ্রামোফোন কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে তিনি গান লিখতে শুরু করেন। ১৯২৮ সালে কয়েকটা গান বের হয়, ২৯ সালেও বের হয়- এরপর ১৯৩১ সালে তার গানের সংখ্যা বেড়ে গেল। তার গানগুলো কিনে নিত গ্রামোফোন কোম্পানি, প্রতিটা গানের জন্য ২০ টাকা করে পেতেন। প্রতিটা গানের জন্য রয়্যালিটিও পেতেন। একটা গান রেকর্ডের পরে বিক্রির ৫% রয়্যালিটি পেতেন। তখনকার একটা রেকর্ডের দাম ছিল ২.৫০ টাকা থেকে ২ টাকা, এর ২০ ভাগের এক ভাগ পেতেন রয়্যালিটি। 

এভাবে তিনি একটা মোটর গাড়ি কিনে ছিলেন সম্ভবত ১৯৩১ সালে। তখনকার সময়ে কলকাতায় একটা মোটর গাড়ির দাম ছিল সাড়ে চার হাজার/পাঁচ হাজার টাকা এরকম। তিনি যে গাড়ি কিনলেন, বড় গাড়ি, ওপরে স্থায়ী ছাদ থাকে না, তুলে ফেলা যায়, আবার টেনে নামিয়ে দেয়া যায়, কনভার্টেবল। সেই কনভার্টেবল গাড়ি কিনলেন যার দাম ৯ হাজার সাড়ে ৯ হাজার টাকা, সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত- যে এই গাড়িতে কে যাচ্ছে। বাড়িতে তখন দারোয়ান রাখেন কাজী নজরুল। এরকম করে পূজার ছুটিতে তিনি তার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নিয়ে যেতেন বেড়াতে; ফার্স্টক্লাস কামরা রিজার্ভ করে যেতেন, আরেকটা কম্পার্টমেন্টে মালপত্র নিয়ে যেতেন। এমনি করে বিলাসিতার মধ্যে মগ্ন হয়েছিলেন তিনি। এই বিলাসিতা সাময়িক ছিল, কারণ- ১৯৩৬ সালে গাড়িটা বিক্রি করে দিতে হয়। গাড়িটা তার খুবই সাধের ছিল, সেটি বিক্রি করতে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন, কিন্তু বাধ্য  হয়ে করতে হয়। এ থেকে বোঝা যায় তার কী রকম টানাটানি যাচ্ছিল। ৬০ টাকা ভাড়ার একটা বাড়িতে তিনি থাকতেন। ৬০ টাকা দিতে পারছিলেন না, তখন ১০০ টাকা ধার করতে হয়। এভাবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে তখন। 

১৯২৬ সালে ‘লাঙ্গল’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বিদ্রোহী কবিতা এই সময়ে লেখা নয়। নজরুলের বিদ্রোহমূলক কবিতার সংখ্যা খুব কম। নজরুলকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়, ‘বিদ্রোহী‘ কবিতার নাম অনুসারে; কিন্তু নজরুল রাজনীতি করেছেন ও তিনি বিদ্রোহ যা কিছু দেখিয়েছেন তখন পর্যন্ত। একবার গানের জগতে প্রবেশ করার পরে ওই দিকে আর যাননি। এ কারণে তাকে কেবলই বিদ্রোহী কবি বলা ঠিক না। তার লেখা বিদ্রোহী কবিতা মাত্র ৪০ থেকে ৫০টা, বাকি কবিতা প্রেমের। তিনি যেমন বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত, তেমনি প্রেমের কবি হিসেবে তার পরিচিতি নেই; কিন্তু তিনি সমান পরিচিতি পেতে পারেন প্রেমের কবি হিসেবে।

নজরুল জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের রাজনীতিকে সমর্থন করতেন। কংগ্রেসের পক্ষে মিছিলে গিয়েছিলেন, বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। গান্ধীজী যখন গ্রেফতার হন, তখন নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় এসেছিলেন- গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন, গান গেয়েছিলেন- নিজের গান। তার জন্য এ ছিল কংগ্রেসী জাতীয়তাবাদী লড়াই। আবার তিনি যখন খালেদের মতো কবিতা লিখেছেন, ওমরের মতো কবিতা লিখেছেন, সেই সময়ে তিনি ইসলামী জাতীয়তাবাদের কথা লিখেছেন। তিনি সরাসরি জাতীয়তাবাদ বলছেন না; কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে তিনি মুসলমানদের সঙ্গে মিলেছেন, মুসলমানদের স্বাধীনতা হোক, স্বাধীনতার কথা তিনি বলেননি, মুসলমানদের অবস্থার উন্নতি হোক, দারিদ্র্য কেটে যাক আগের মতো গৌরব ফিরে পাক এইসব কথাবার্তা বলেছেন এটাও জাতীয়তাবাদ। এবং সেটা মুসলিম জাতীয়তাবাদ। আবার যখন তিনি পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন, ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক থাকাকালে যখন পাকিস্তান প্রস্তাব পাশ হলো, তখন তিনি একটা সম্পাদকীয় লিখেছিলেন- ‘পাকিস্তান, না ফাঁকিস্থান।’ পাকিস্তানকে যদি ফাঁকিস্তান বলে থাকেন, তা হলে এটা কিন্তু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ নয়। সেটাও ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ।

নজরুলের সময়ে তার মতো প্রতিভাবান লোক রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কেউ আসেননি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। রবীন্দ্রনাথ একটা পাহাড়ের মতো, পর্বতের মতো, সেটার ধারে কাছে নজরুল যান না। কারণ তার প্রতিভাকে তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘তিনি তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চেছেঁছিলেন।’ অর্থাৎ ছোট ছোট কাজে তিনি তার প্রতিভার অপচয় করেছেন। তিনি লেখাপড়া শিখে একটা সত্যিকারের প্রতিভাবান লোক হবেন সেটা তিনি হতে পারেননি; কিন্তু তিনি মস্তবড় প্রতিভাবান লোক ছিলেন। তার প্রতিভা বহুমুখী ছিল, যেমন তিনি গল্প লিখেছেন, গান লিখেছেন, কবিতা লিখেছেন, নাটক লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন।

নজরুল ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। আমি ব্যক্তি নজরুলকে সমসময় ভালোবেসেছি। এবং আমি তার জীবনী লেখার অনেক আগেই একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি নজরুলকে কেবল বিদ্রোহী হিসেবে দেখানো হয়; কিন্তু নজরুল তো শুধু বিদ্রোহী ছিলেন না। তার বিদ্রোহটা সাময়িক কালের জন্য, কয়েক বছরের জন্য। নজরুলকে আমরা দেখতে পাই বহু জীবনীতে, তাকে বলা যায় মুসলমান নজরুল। অথচ নজরুল নিজেকে কট্টর মুসলমান হিসেবে কখনো চিহ্নিত করেননি। মুসলমান বলে অহংকার করেননি তিনি, সবসময় বলেছেন তিনি মানুষের কবি। কাজী নজরুল ইসলামকে আমরা বিভিন্ন জীবনীতে যেভাবে দেখতে পাই, তা পূর্ণাঙ্গ নজরুল নয়, তা হচ্ছে খ-িত। এসব জীবনীতে নজরুলের দুটি দিক মাত্র ফুটে উঠেছে- ‘বিদ্রোহী’ নজরুল এবং ‘মুসলমান’ নজরুল; কিন্তু সবার আগে তিনি একজন মানুষ। আমি আমার নজরুল জীবনীতে সেই মানুষ নজরুলকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করেছি। 

আশ্চর্য ব্যাপার, নজরুলের জীবনী লিখতে গিয়ে অনেকে অনেক গল্প তৈরি করেছেন। একজন বলেছেন, নজরুল যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তাঁর মা এসেছিলেন তাঁর অনশন ভাঙানোর জন্য, তখন তিনি তাঁর মায়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন এবং তার কথা রাখেন; কিন্তু আসল ঘটনাটা হচ্ছে তার মা এসেছিলেন তার খোঁজ নিতে, নজরুল তখন দেখা করতে অস্বীকার করেন। অথচ কেউ লিখেছেন, মায়ের পায়ে চুমু খেয়ে তার অনশন ভাঙেন। আমাদের একজন মস্তবড় নজরুল গবেষক নজরুলের যে জন্ম তারিখটা দিয়েছেন সেটা ভুল জন্ম তারিখ। তিনি যে জন্ম তারিখ দিয়েছেন আর যে বার দিয়েছেন, সেই বারে ওই তারিখ ছিল না। সত্যি বলতে কী, নজরুলকে নিয়ে যেসব গবেষণা হচ্ছে, তা ভুলেভালে পরিপূর্ণ। আমি নজরুলকে আবিষ্কার করেছি নবরূপে, এক মানুষ নজরুলকে। 

নজরুল ইসলাম সমালোচিত হয়েছেন অনেকভাবে, যেমন প্রবাসীতে বা ‘শনিবারের চিঠি’তে। সজনীকান্ত দাস লিখতেন বিকৃত করে। কেবল নজরুল এর শিকার হননি, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দকেও করা হয়েছে। সজনীকান্তর কাজই ছিল বিদ্রুপ করা সাহিত্য নিয়ে। সজনীকান্ত দাস অতি বিচিত্র লোক ছিলেন। যেমন নজরুলকে বিদ্রুপ করেছেন আবার নজরুল অসুস্থ হওয়ার পরে তিনি সহযোগিতাও করেন। অন্যদিকে নজরুল এত উদার লোক ছিলেন যে সজনীকান্ত দাস তার একটা গজল বিকৃত করে একটা প্যারোডি লিখেছিলেন, নজরুল সেই কবিতাটা সুর দিয়ে গান করেছিলেন। 

নজরুল মানবতার জন্য লড়াই করা এক কবি। মানুষ তাকে মনে রেখেছে, মনে রাখবে চিরদিন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //