নকশালবাড়ি

তরাই আর গারো পাহাড়ের কালো মানুষের বিশাল হাত ঐক্যবদ্ধ অকস্মাৎ...

শৈশবের বিরাট এক তাপপ্রবাহের কালে, আক্ষরিক অর্থেই অকস্মাৎ আমাদের বয়সী নিতান্তই বালকদের জীবনে নেমে এলো নকশালবাড়ির বিপুল ঝড়।

পরবর্তী সময়ে সেই দুরন্ত কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল যাবতীয় সাবেক ধারণা। হাজার হাজার তরুণ হ্যামিলনের বাঁশির সুরে বিপ্লবের স্বপ্নে নিরাপদ জীবনকে পেছনে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অজানা অন্ধকারে। কত শত প্রাণ অকালে চলে গেল। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে এমন কোনো পরিবার নেই যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ কোনো না কোনোভাবে নকশাল আন্দোলনের ফলে বিপর্যস্ত হয়নি।

এই পরিবারগুলোর অধিকাংশই শহর ও গ্রামের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত। শহীদ পরিবারের অধিকাংশই আর্থিক ও সামাজিক বিপর্যয় কখনো আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। নকশালবাড়ি আন্দোলন হাজারো সমালোচনা সত্তে¡ও নিঃসন্দেহে উপমহাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক।

সত্যি কথা বলতে, আপনি যত নিন্দেমন্দ করুন না কেন, একথা স্বীকার করতেই হবে যে নকশালদের পরবর্তীকালে আমাদের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিও পুরনো দিনের মতো থাকেনি। এই আজ যে অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সেও কৃষি অর্থনীতির গুরুত্ব, তাও তো নকশালবাড়ির প্রভাবে। আজ যে গ্রামকেন্দ্রিক এমন আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, তার পেছনেও নকশাল রাজনীতির ভূমিকা রয়েছে।

আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তো নকশালবাড়ি আন্দোলনের অবদান বিরাট। কত কত সাহিত্য, গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, সিনেমা আজও প্রভাবিত নকশাল রাজনীতির মতাদর্শে। অনেক কিছুই হয়তো আবেগসর্বস্ব, রোমান্টিক। তবুও ওই আন্দোলন যে আজও শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের ভাবায় এ বড় কম কথা নয়।

ইদানীং উপমহাদেশেই নতুন করে ইতিহাস লেখার চল বেড়েছে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, মওলানা ভাসানী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ থেকে তেভাগা, তেলেঙ্গানা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিনির্মাণ হচ্ছে। নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ। নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন রচনাশৈলী চেনা-জানা মানুষটিকে নতুনভাবে সামনে আনছে।

সাদা-কালো সব মিলিয়ে যে ব্যক্তি অবয়ব বা আন্দোলনের নেতি-ইতি যত চর্চা হবে তত নতুন প্রজন্মের কাছে পুরনো অধ্যায় স্পষ্ট হবে। গুরুবাদী উপমহাদেশে কাজটা কঠিন। পাশাপাশি আছে অগভীর জ্ঞান চর্চা অথবা ইচ্ছে করে কোনো মানুষের বা লড়াই সংগ্রামের অবমূল্যায়ন। ফরায়েজী আন্দোলন বা তিতুমীরের লড়াই কিংবা ঐতিহাসিক নৌ-বিদ্রোহ বা মওলানা ভাসানীর আপসহীন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা যেমন ইচ্ছা করে গুরুত্বহীন করে তোলা হচ্ছে। তবুও বলব ইতিহাসের ডি কন্সট্রাকশন হোক। আবেগ দিয়ে আর যা-ই হোক নির্মোহ ইতিহাস রচনা সম্ভব নয়।

নকশাল আন্দোলনের ইতিহাস নতুন করে লেখার সময় হয়েছে। পুরনো কাসুন্দি অনেক ঘাঁটা হলো। আবেগ দিয়ে অনেক লেখালেখি হলো। সিনেমা, থিয়েটারে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে চমৎকার সব রোমান্টিক কাহিনি নির্মিত ইতোমধ্যেই ঢের হয়েছে। কিন্তু নকশাল আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা কোথায়, আন্দোলনের ভুল-ত্রুটি কোথায় সে সব নিয়ে আলোচনা খুব একটা হয় না। বরং একটু-আধটু সমালোচনা হলে তা খুব কম নকশালপন্থিদের সহ্য করতে দেখি।

নকশাল আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও প্রভাব শুধু ভারতে নয়, ওপার বাংলাতেও যথেষ্ট ছিল। তেভাগা ছিল অখণ্ড বাংলার লড়াই। তাকে বাদ দিলে সম্ভবত ভারতের মাটিতে জন্ম নিলেও দুই বঙ্গকে আলোড়িত করার উদাহরণ একমাত্র নকশালবাড়িই।

ফলে লেখার শুরুতে অচেনা কবির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছি বটে, তরাই আর গারো পাহাড়ের অকস্মাৎ ঘটনার কথা, বাস্তবে কোনো কিছুই অকস্মাৎ হয় না। নকশালবাড়ি রাজনীতির পেছনেও ছিল একাধিক কারণ। তাছাড়া ছিল সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, ফরায়েজী, তিতুমীরের লড়াই সংগ্রামের দীর্ঘ ঐতিহ্য।

ছোট ছোট আগুনের স্ফুলিঙ্গ দাবানলের সৃষ্টি করেএটা নকশালবাড়ি দেখিয়েছিল। আসলে তখন ভারতের অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে উঠেছিল। গ্রামের পর গ্রাম খাদ্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছিল। তখনকার খবরের কাগজের পাতায় কোথাও না কোথাও খেতে না পেয়ে মানুষের আত্মহত্যা ছিল শিরোনাম। 

১৯৬৬-৬৭ সালে এমন এক দিন ছিল না, যেদিন সারা দেশের কোনো না কোনো জায়গায় পুষ্টির অভাবে বা অনাহারে, অর্ধাহারে মানুষের মৃত্যু হতো। সংবাদ সম্মেলন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বীকার করলেন, দেশের ৪ কোটি ৬৬ লাখ লোক একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গভীর সঙ্কটে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

শাসকদের জানা উচিত, এই সঙ্কটের মূলে ছিল আমাদের দেশের জমি বৈষম্য। বস্তুত কৃষি জমির মালিকানা ছিল মুষ্টিমেয় ধনী কৃষকদের হাতে। দিনমজুরি নামমাত্র। ধনীদের ইচ্ছামতো জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ রুটিন ঘটনা। সত্তরের দশকের পরেও আমি নিজে বিহারের গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখেছি কী অমানবিক, অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় গ্রামীণ সর্বহারাকে।

তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া হচ্ছে এদেশের মনুবাদী সামাজিক কাঠামো। যে কাঠামোয় উচ্চবর্গের হাতে থাকে বিঘার পর বিঘা জমি। আর নিম্নবর্গের বেঁচে থাকার উপায় কোনোরকমে মালিকের দয়ায় খুদকুঁড়ো খাওয়া। তাদের মেয়েদের ইচ্ছে মতন ভোগ করার অধিকারটুকুও মালিক মহাজনের। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহ বা ছোটখাটো জাগরণ ছাড়া ১৯৪৭ থেকে ৬৬-৬৭ অবধি মোটামুটিভাবে ভারতের কৃষকদের মুখ বুজে মার খাওয়াই ছিল দস্তুর।

তেভাগা, তেলেঙ্গানার লড়াই আগেই থেমে গেছে। মহারাষ্ট্রে আদিবাসী বিদ্রোহ স্তিমিত। সর্বক্ষেত্রেই কৃষক, আদিবাসী, জনজাতির বিদ্রোহের নেতৃত্ব ছিল কমিউনিস্ট পার্টির হাতে। পার্টি তখন ছোট। ধীরে ধীরে সংগঠন বাড়ছে। লাল পতাকার নিচে সংগঠিত হচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক গরিব, মেহনতি জনতা। দেশের নানা প্রান্তে শোনা যাচ্ছে গণজাগরণের গান ‘ওয়াক্ত কি আওয়াজ হ্যায়, মিলকে চলো...।’ শ্রমিক, কৃষক স্বপ্ন দেখছে জন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের।

কিন্তু ক্রমশই একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছিল যে পার্টির নেতৃত্বে এক সুবিধাবাদী ঝোঁক দলকে বিপ্লবের পথ থেকে নানা কৌশলে সংসদীয় রাস্তায় নিয়ে যেতে সক্রিয়।

স্ট্যালিনের মৃত্যুপরবর্তীকালে ক্রুশ্চেভের রাশিয়ার ক্ষমতা দখল এবং রুশ কমিউনিস্ট পার্টির শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা দখলের তত্ত্ব বাম রাজনীতিতে ভয়ঙ্কর হৈচৈ ফেলে দিল। কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরে আন্তর্জাতিক মহাবিতর্ক ভারতের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে দলকে দু টুকরা করে রুশ ও চীনপন্থি বলে আলাদা করল। ৬২ সালে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিরোধে ক্রুশ্চেভ অনুসারীরা ভারত সরকারের পক্ষে থাকল। অন্যদিকে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতায় আস্থা রেখে দলের বড় অংশ চীন বিরোধিতা থেকে বিরত থাকল।

নকশালবাড়ি রাজনীতির প্রাণপুরুষ চারু মজুমদার সাফ জানিয়ে দিলেন, চীন একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। সে কখনোই পররাষ্ট্র আক্রমণ করতে পারে না। দু বছর ধরে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের কোনো মীমাংসা হলো না। হওয়ার কথাও নয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, সেখানে জোড়াতালি দিয়ে আর কত দিন চলতে পারে! ফলে যা আশঙ্কা ছিল, তা-ই হলো। ১৯৪৬ সালে এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে ভাগ হয়ে গেল। সাবেক কমিউনিস্ট পার্টি ক্রুশ্চেভপন্থি। নতুন দল হলো ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), সংক্ষেপে সিপিআইএম।

সিপিআইএমের মধ্যে ভিড় জমালেন দলের মিলিট্যান্ট অংশ। যারা বিশ্বাস করল, চীনের পথে এদেশে জন গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করবে নতুন পার্টি।

পুরনো দলিল দস্তাবেজ দেখলে বা এখনো বেঁচে আছেন যে বৃদ্ধ কমরেডরা তাদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায় যে চারু মজুমদার ও উত্তরবঙ্গের অন্য কমরেডদের কেন জানি না প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল নতুন পার্টিও কোনোদিনই সশস্ত্র পথে অগ্রসর হবে না। হতে পারে, তেলেঙ্গানা, তেভাগায় যেভাবে পার্টিনেতৃত্ব বৈপ্লবিক ঝাঁজকে কেতাবি বুলি দিয়ে ঠান্ডা করেছিলেন সেটা চারু মজুমদার বা অন্য কমরেডরা ভুলে যাননি।

এও হতে পারে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যে কৃষি বিপ্লবের কথা বলতেন, সেটা উত্তরবঙ্গের পার্টি কমরেডরা যত আমলে নিতে পারতেন, কলকাতার পার্টি নেতাদের পক্ষে তা অনুভব করা ছিল কষ্টকর। ভারতের কমিউনিস্টদের বড় দোষ তারা সাধারণভাবে কোনোদিনই ঠিকঠাক দেশের মাটি চিনতে চাননি। বিপ্লবের যাবতীয় কার্যক্রম ছিল এক ধরনের অ্যাকাডেমিক অনুশীলন। হয় চীন, না হয় রাশিয়ার পথে চলার চেষ্টা এদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে সর্বভারতীয় করে তুলতে পারেনি। ৬৪ সালে নতুন পার্টি জন্ম নিল।

সাবেক দলের সুবিধাবাদী রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যানের ডাক দিয়ে। নতুন দলের বিরাট অংশ জেলে বন্দি হলেন চীন-ভারতের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। জেলের মধ্যেই সিপিআইএমের উত্তরবঙ্গের কমরেডরা সেলে বসে আলাদা করে আগামীদিনে কৃষক আন্দোলন কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তাই নিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত হলেন। ওই সময় চারু মজুমদার লিখলেন ঐতিহাসিক আটটি দলিল। যার মধ্যেই নিহিত ছিল নকশাল রাজনীতির বীজ।

চারু মজুমদার কমিউনিস্ট পার্টির দীর্ঘদিনের কর্মী। শিলিগুড়ির মহানন্দা পাড়ার আদি বাসিন্দা চারু ছিলেন তুখোড় ছাত্র। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে পড়তে পড়তে জড়িয়ে পড়েন কৃষক আন্দোলনে। দিনাজপুরের অবিসংবাদিত কৃষক নেতা মাধব দত্ত তরুণ চারুর সাংগঠনিক দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দিনাজপুরে পার্টি গড়ে তোলার দায়িত্ব দেন। দিনাজপুর চিরকালই বাম আন্দোলনের গড়। তেভাগার ঘাঁটি। মাধব দত্ত, চারু মজুমদার, হাজী দানেশ পরবর্তী সময়ে উপমহাদেশের রাজনীতিতে বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

চারু মজুমদার কৃষক আন্দোলন থেকে উঠে এসেছিলেন বলেই সংসদীয় গণতন্ত্রের আইনি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। তিনি জানতেন স্রেফ আইন-কানুন মেনে কোনো দেশে কখনো কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লব করতে পারেনি। প্রতিবেশী চীন তাকে আন্দোলিত করেছিল। আটটি দলিল লিখেছিলেন ১৯৬৫-৬৬ সালে। তবে একসঙ্গে আটটি নয়। সহজ ভাষায় তাত্ত্বিক প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক একটি দলিল লিখেছিলেন থেমে থেমে। প্রথমদিকের একাধিক দলিল পাঠিয়েছিলেন চীনের নেতাদের কাছে। তারা ঠিক কী বলেছিলেন জানা না গেলেও, নিশ্চিত ইতিবাচক কিছু বার্তা ছিল যাতে তিনি পরবর্তী সময়ে চীনের পথ অনুসরণ করতে সামান্য দ্বিধাবোধ করেননি।

আট দলিল কেউ কেউ লেনিনের ‘কী করিতে হইবে’র সঙ্গে তুলনা করেন। এই সব অতি উচ্ছ্বাস চারু বাবুকে নেতা থেকে ঈশ্বর করে দিতে লাগল ধীরে ধীরে। সে সব অবশ্য পরের কথা। আট দলিল মোটামুটি বিপ্লবের যে রূপরেখা তৈরি করেছিল তা এখন পড়লে মনে হয়, অনেক কিছুই আবেগতাড়িত বিশ্লেষণ। যার সঙ্গে বাস্তবের সম্পর্ক নেই।

চারু মজুমদারের মূল লেখনী বারে বারেই আক্রমণ করেছে সিপিআইএমের ‘সংশোধনবাদী’ ঝোঁকের বিপক্ষে। এই ঝোঁকের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে একটা সময় নকশালপন্থি রাজনীতি পুরোপুরি গণ-আন্দোলনের পথ ছেড়ে পুরনো স্বদেশি আন্দোলনের পথে চলে গেল মার্কসবাদী তাত্তি¡ক মোড়কে।

১৯৬৭ সালের ২৪ মে নকশালবাড়িতে কৃষক প্রতিরোধ হলো জোতদারদের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে তখন অ-কংগ্রেসী যুক্তফ্রন্ট সরকার। সিপিআইএম তার বড় শরিক। ২৫ মে সেই সরকারের পুলিশ কৃষকদের ওপর নির্মম দমনপীড়ন চালালে বামপন্থি শিবিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটল। মাত্র তিন বছরের মধ্যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি আবার ভাঙল। ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল ময়দানে চারু মজুমদারকে সামনে রেখে গড়ে উঠল নতুন দল। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদী, লেনিনবাদী। 

কৃষক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ডাক দিলেন চারু মজুমদার, কানু সান্ন্যাল, অসীম চ্যাটার্জীসহ অন্য নকশাল নেতারা। চারু মজুমদার ঘোষণা দিলেন, সত্তরের দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করুন। হাজার হাজার তরুণ সমাজতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নকশাল আন্দোলনে। রাষ্ট্রশক্তি বিপুল শক্তিতে তা দমনের নামে পথে নামল। ১৯৭২ সালের ২৮ জুলাই জেলের মধ্যে শহীদ হলেন চারু মজুমদার। শেষ হয়ে গেল এক রূপকথার। এক অধ্যায়ের।

স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দু দুটি ঘটনা দুই বাংলাকে আলোড়িত করেছে। দুটিই ইতিহাসের মাইলফলক। নকশাল আন্দোলন আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। প্রথমটি সেভাবে সফল হতেই পারল না। বাংলাদেশের যুদ্ধে গণ-আন্দোলনের ধারা, সমাজতান্ত্রিক চেতনা পিছু হটতে বাধ্য হলো। দুটির ক্ষেত্রেই দায়ী নকশাল আন্দোলনের ভুল রাজনীতি। চরম দক্ষিণে চলা বামপন্থাকে শুধরাতে গিয়ে চরম বাম বিচ্যুতি ক্ষতি করে দিল উপমহাদেশের সামগ্রিক বাম পথের।  

লেখক : তথ্যচিত্র নির্মাতা 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //