টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির প্রাপ্তিস্থান ও দাম

সুপ্রাচীন কাল থেকে টাঙ্গাইলের শাড়ি এ দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে আসছে। টাঙ্গাইলের দক্ষ কারিগরেরা বংশানুক্রমে এই শাড়ি তৈরি করছেন। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাঙয়ের ভ্রমণ কাহিনীতে টাঙ্গাইল শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। তাঁতিরা ঠিক কবে থেকে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করছেন সেই ইতিহাস কেউ জানে না। বসাক শ্রেণির তাঁতপল্লীর তাঁতিরা বংশানুক্রমে হাজার বছর ধরে এই শাড়ি তৈরি করে চলছেন। টাঙ্গাইলের তাঁতিরা শুধুমাত্র সুতি সুতাকে উপজীব্য করে নিজের দক্ষতায় তৈরি করেন টাঙ্গাইলের শাড়ি; যা বেশ আরামদায়ক, মার্জিত ও রুচিশীল। গরমে পরার জন্য সুতি শাড়ি উত্তম।     

বৈশিষ্ট্য

টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পাড় বা কিনারের কাজ। নব্বইয়ের দশকে টাঙ্গাইল শাড়িতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। সে সময় কটন শাড়ির পাশাপাশি টাঙ্গাইল সফট সিল্ক শাড়ির প্রচলন শুরু হয়। সফট শিল্ক শাড়ি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে তার আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নত বুনন কৌশলের কারণে। 

সফট সিল্ক, হাফসিল্ক শাড়ি ছাড়াও তাঁতিরা তৈরি করছে আনারকলি, দেবদাস, জরিপাড়, স্বর্ণচুড়, বালুচরি, কুমকুম, সানন্দা, কটকি, সুতিপাড়, নীলাম্বরী, ময়ূরকণ্ঠী, ইককাত, হাজারবুটি। আগে পদ্মপাড়, মাধবীলতা, মরবি, তেরবি, কুঞ্জলতা, লতাপাতা পাড়ের শাড়ির তৈরি করা হলেও এখন তাঁতিরা পাড়ে পরিবর্তন এনেছে।

পুরুষ ও নারী তাঁতিরা মিলে শাড়ি তৈরির কাজ করে। মহিলা রঙ করা ও জরির কাজে সহায়তা করে। পুরুষেরা তাঁত বোনে ও চরকা কাটে। তাঁতের শাড়ির জমিনে নানা নকশা যেমন ফুল তোলে শাড়িকে চমৎকার করে তোলে।  

টাঙ্গাইল শাড়ির প্রকারভেদ

সুতি শাড়ি

আধা রেশমি শাড়ি।

হাফ সিল্ক শাড়ি।

সফট সিল্ক শাড়ি।

সুতি জামদানি শাড়ি।

বালুচুরি শাড়ি।

ডাংগ্য শাড়ি।

গ্যাস মারচেন্ডাইজড শাড়ি।

টুইস্টেড সুতি শাড়ি।

প্রাপ্তিস্থান

প্রতি সোম ও শুক্রবার টাঙ্গাইল শাড়ির হাট বসে মূল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণের বাজিতপুরে। ভোর থেকে হাট শুরু হয়ে চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এখানে মহাজনরা পাইকারি দরে শাড়ি কিনে নিয়ে বড় বড় মার্কেটে সরবরাহ করে।  

টাঙ্গাইল শাড়ি দেশের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সে পাওয়া যায়। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করা যেকোনো পেশার নারীরা টাঙ্গাইল শাড়ি পরতে ভালোবাসে। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বিদেশেও এর সুনাম রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, জাপান, সৌদি আরব ও ভারতের কিছু রাজ্যে এ শাড়ির সুখ্যাতি রয়েছে।

দরদাম

এ শাড়ির ডিজাইন, মান, বুনন ও নকশার তারতম্য ভেদে শাড়ির দামের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তবে জামদানি ও সিল্কের দাম অন্য শাড়ির তুলনায় একটু বেশি। 

সফট সিল্ক শাড়ির দাম ৯৫০ থেকে ৫০০০ টাকা, সফট কটন শাড়ির দাম ৬৫০ থেকে ৩৫০০ টাকা, বালুচরি শাড়ির দাম ১৪০০ থেকে ২৮৫০ টাকা, তসর সিল্ক শাড়ির দাম ১৯০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, সম্বলপুরী শাড়ির দাম ৭৫০ থেকে ৩০০০ টাকা, সিল্ক কাতান শাড়ির দাম ২৫০০ থেকে ১০০০০ টাকা এবং অন্যান্য শাড়ির দাম ৬০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //