Logo
×

Follow Us

ফিচার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, অবহেলার দীর্ঘশ্বাস

Icon

জাহিদুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, অবহেলার দীর্ঘশ্বাস

পদ্মার শহরের বুকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক সবুজ স্বপ্ন। আর সে স্বপ্নের প্রথম ঠিকানাই ‘প্যারিস রোড’। দুই পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গগণশিরীষ, তার নিচে পিচঢালা পথ, সেই সৌন্দর্য মুগ্ধ করে নবাগত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পথিকের মন। একবার হেঁটে গেলে ফিরে তাকাতে ইচ্ছা করে বারবার। প্যারিস রোড যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব, পরিচিতির প্রতীক।

কিন্তু এ গর্বের আড়ালেই লুকিয়ে আছে অনেক না বলা দুঃখ, অবহেলার দীর্ঘশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সড়কে হাঁটলে সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়ে পদে পদে। বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের ছোঁয়া পায়নি এসব পথ। ভারী যানবাহনের চাপে গড়ে ওঠা গর্ত, খানাখন্দ যেন স্থায়ী বাসিন্দা। এবারের টানা বৃষ্টিতে তা আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সড়ক নয়, যেন কাদাপানির পুকুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। বাজেট ঘাটতির জন্য এতদিন কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে রাস্তাগুলো এখন প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগের অর্থবছরের কিছু বাজেট এবং নতুন অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েকটি রাস্তার কাজের টেন্ডারও হয়ে গেছে। শিগগিরই রাস্তার কাজগুলো শুরু হতে পারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে থেকে স্টেডিয়াম গেট পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ক্লাস করতে যাতায়াত করেন শামসুজ্জোহা, সোহরাওয়ার্দী, মাদার বখশ হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মেহেরচণ্ডী এলাকার ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। ইটের সলিং ভেঙে যাওয়ায় রিকশাওয়ালারা পর্যন্ত চলাচল করতে চান না। চললেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের পেছন থেকে চারুকলার গেট পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তাটির পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের মোড় থেকে শুরু করে হবিবুর রহমান হল পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিনোদপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী হল পুকুর পার পর্যন্ত, পশ্চিমপাড়ায় রোকেয়া হলের উত্তর পাশ থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত, শামসুজ্জোহা হল থেকে বধ্যভূমি পর্যন্ত সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এসব রাস্তায় বৃষ্টি হলে কর্দমাক্ত হয় ও পানি জমে থাকে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এতদিন শুনেছি ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় রাস্তা মেরামত করা যাচ্ছে না। তবে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ালেও ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হচ্ছে না। কয়েকটি রাস্তার অবস্থা এমন, হাঁটাও দায়, ভেবে-চিন্তে পা ফেলতে হয়। চলতি অর্থবছরে নতুন বাজেট এসেছে। শিগগিরই যেন রাস্তাগুলো মেরামত করে তাদের ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. মাহিন হাসান বলেন, ‘রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। মেরামতের কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। আমাদের চলাফেরায় বেশ কষ্ট হয়। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তো বড় বড় গাড়িতে চলাফেরা করেন, তাই এটি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’

মাহমুদ হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নানা অজুহাতে রাস্তাগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। আমাদের ভোগান্তি ও অসুবিধা নিয়ে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। শিগগিরই যেন রাস্তাগুলো মেরামত করে আমাদের ভোগান্তি থেকে লাঘব করা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে রাস্তাগুলো আসলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছরের কিছু বাজেট এবং চলতি বছরে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে সব রাস্তাই মেরামতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কয়েকটি সড়কের টেন্ডারও করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে কয়েকটি রাস্তার কাজ শুরু হবে। বৃষ্টির কারণে এখন কাজ শুরু করা যাচ্ছে না, কারণ এতে ভোগান্তি আরো বৃদ্ধি পাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘এই নতুন অর্থবছরে প্রতিটি রাস্তা সংস্কারের জন্য আলাদা বাজেট পাস করা হয়েছে। সাতটি সড়ক মেরামতে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ফাইন্যান্স কমিটিতে কয়েকটি রাস্তার কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মতিহার হলের সামনের রাস্তার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বিনোদপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর পার পর্যন্ত এবং রোকেয়া হলের উত্তর পাশের রাস্তার কাজও কয়েক মাসের মধ্যে শুরু হবে। একটি রাস্তা ছাড়া চলতি বছরেই বাকি রাস্তার কাজ শেষ হবে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫