শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাস সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য সিয়াম সাধনার মাস। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয় এই সময়টাতে। অর্থাৎ রোজাদার ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে।
এবারো গ্রীষ্মকালে রোজা হওয়ায় ১৪-১৫ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। আবার করোনাভাইরাসের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। থাকতে হবে সুস্থ।
আর এই সুস্থ থাকার জন্য খাবার গ্রহণের ব্যাপারে আগে সচেতন হবে। সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি- এ ছয়টি উপাদানসমৃদ্ধ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা হলে তাকে সুষম খাদ্য বলে। অর্থাৎ প্রতিদিনের তৈরি খাবারগুলোর মধ্যে এ ছয়টি উপাদান আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
শর্করা জাতীয় খাবার হলো- ভাত, চিড়া, গুড়, মুড়ি, রুটি, চিনি। শর্করা দেহে শক্তি উৎপাদন করে। তাই রমজান মাসের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শর্করা জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে। তবে কম খাওয়া কিংবা বেশি খাওয়া উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। প্রতিদিন একজন মানুষের মোট প্রয়োজনীয় খাদ্যশক্তির ৫০-৬০ ভাগ শর্করা প্রয়োজন। বলে রাখি সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন প্রায় ১৬০০-২৪০০ ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত আর পুরুষদের প্রায় ২০০০-৩০০০ ক্যালরি।
প্রোটিন জাতীয় খাবার হলো- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, ছোলা, পেয়াজু, বেগুনি, চটপটি। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রাম আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত এবং গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্য এর পরিমাণ ১.৫ গ্রাম। আমিষ জাতীয় খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে। তবে অবশ্যই তা পরিমিত হতে হবে।
আবার একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩৫-৪০ গ্রাম স্নেহজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। স্নেহজাতীয় খাবার ঘি, মাখন, তেল ও চর্বি। এক্ষেত্রে খাবার রান্না করার সময় হালকা তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে তেল একেবারে পরিহার ও করা যাবে না- সেটাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। স্নেহজাতীয় খাদ্য শরীরে শর্করার দ্বিগুণ শক্তি উৎপাদন করে।
পানিজাতীয় খাবার শরবত, চিড়া, ডাবের পানি, লেবু, বেল, বিভিন্ন মৌসুমি ফল ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা মেটায়। পুষ্টিবিদরা বেশি বেশি মৌসুমি ফল, শাকসবজি আর ভিটামিন সি খেতে বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ রমজান মাসে কিংবা করোনাকালীন সময়ে সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরি। প্রতিদিন একজন মানুষের ৮-১০ গ্রাম পানি পান করা উচিত। রমজান মাসেও তার ব্যতিক্রম নয়। যেহেতু দিনের বেলা রোজা থাকতে হয় তাই ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সময়ে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতেই হবে। তবে একসাথে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না।
একের ভেতর সব বলে একটা কথা আছে। অর্থাৎ যদি কেউ একটা খাবারের মধ্যে খাদ্যের ছয়টি উপাদান পেতে চায় সেক্ষেত্রে খিচুড়ি কিংবা হালিম খেতে পারে। তবে এ দুটি খাবার বাড়িতে বানানো হলে ভালো।
সবশেষে বলবো- সুস্থ দেহে সুন্দর মন। রমজান মাস ইবাদতের মাস। আর ইবাদত করার জন্য সুস্থ থাকাটা জরুরি। অসুস্থ শরীরে মন ভালো থাকে না, ইবাদত করা যায় না। তাই স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, সুস্থ থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : খাদ্য রমজান খাদ্যাভ্যাস সুষম খাদ্য খাবার তালিকা
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh