চকোলেটের অসাধারণ সব গুণ

গতকাল ৭ জুলাই ছিল বিশ্ব চকোলেট দিবস। যদিও প্রতিবছর ৯ ফেব্রুয়ারি চকোলেট ডে হিসেবে পালন করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ সেপ্টেম্বরকে ইন্টারন্যাশনাল চকোলেট ডে’র মর্যাদা দিয়েছে। অপরদিকে ব্রিটেনে অক্টোবরের ২৮ তারিখে দেশের বাসিন্দারা পালন করে থাকেন জাতীয় চকোলেট দিবস।

যাই হোক- চকোলেট এমনই একটা খাবার, যার নাম শুনলেই জিভে জল আসতে বাধ্য। আর সারা পৃথিবীতে চকলেট ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। শিশু থেকে মাঝবয়সি, সবাই কম-বেশি চকোলেট খেতে ভালবাসেন। 

কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই চকোলেট খেতে চান না। তাহলে আপনার জন্যও সুখবর আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই গপগপ করে খেয়ে নিতে পারেন চকোলেট। কারণ সকাল বেলা চকোলেট খেলে ওজন কমতেও পারে! অল্প শরীরচর্চার ১ ঘণ্টা পরে খেলে সবচেয়ে ভাল। এমনই বলছে স্পেনের মাদ্রিদের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা।

কাকাও গাছের কোকো বীজ হলো চকোলেটের মুল উপাদান। আর খাঁটি চকলেটের আছে অনন্য সব স্বাস্থ্যগুণ। আজকাল দুনিয়াজুড়ে চকলেটপ্রেমীরা ঝুঁকছেন ডার্ক চকোলেটের দিকে, যাতে প্রায় ৭০ শতাংশ কোকো আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চকোলেটে আছে মানবশরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলো আমাদের সার্বিক শারীরবৃত্তীয় ভালো থাকায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। 

কোকো বীজ

মাদ্রিদের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় ২০ জন জন ষাটোর্ধ্ব নারীর প্রত্যেককে সকালে হাঁটার এক ঘণ্টা পরে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ১০০ গ্রাম করে চকোলেট খেতে দেয়া হয়। দেখা গেছে, এভাবে চকোলেট খাওয়ার ফলে হজম শক্তি অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমেছে। শুধু তাই নয়, তাদের প্রত্যেকেরই ওজন কমেছে।

গবেষকদলটির প্রধান জানিয়েছেন, চকোলেট খেলে ওজন বাড়ে না। বরং যদি সকাল সকাল কিছুটা চকোলেট খেয়ে নেয়া যায়, তা হলে ওজন কমে।

দেখে নেয়া যাক চকোলেটের নানা গুণ:

পুষ্টিগুণে ভরপুর

৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাকাও থাকলে ১০০ গ্রাম ডার্ক চকোলেটে পাবেন ফাইবার ও খনিজ। ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক থাকে এই খাবারে। সাথে পাবেন স্যাচুরেটেড ও মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটও। যেহেতু এর পাশাপাশি কিছু বাড়তি চিনি ও প্রচুর ক্যালোরিও থাকে, তাই সীমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়াই ভাল।


অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে

কোন খাবারে কতটা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে, তা যাচাই করার এক বিশেষ ধরনের পরীক্ষা রয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, প্রসেস না করা কাঁচা কাকাওয়ে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। ব্লুবেরি ও আকাইয়ের মতো ফলকেও ছাড়িয়ে যায় সেই মাত্রা।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

ডার্ক চকোলেট খেলে ধমনিতে নাইট্রিক অক্সাই়ড তৈরি হয়। যার ফলে মস্তিষ্ক ধমনিকে খানিক বিশ্রাম নেয়ার বার্তা পাঠায়। তাই রক্ত চলাচল আরো সহজে হয় ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ডার্ক চকোলেটের এই গুণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে প্রত্যেকটা পরীক্ষায় এক রকম ফল পাওয়া যায়নি।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ডার্ক চকোলেট দীর্ঘ দিন ধরে খেলে দেখা যায়, ধমনিতে কম কোলেস্টেরল জমছে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে বলে আশা করেন বিজ্ঞানীরা। একটি সমীক্ষায় ৪৭০ প্রাপ্তবয়স্কদের ১৫ বছর ধরে ডার্ক চকোলেট খাওয়ানো হয়েছিল। দেখা গেছে, হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে তাদের মধ্যে।


মানসিক স্বাস্থ্য

ডার্ক চকোলেটে থাকে ফ্ল্যাভানলস। নিয়মিত চকোলেট গ্রহণ মস্তিষ্কের কোষগুলোতে অক্সিজেন ও রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও কোকো কগনিটিভ ফাংশান উন্নত করার জন্য পরিচিত। তবে চকোলেট সর্বদা পরিমিত গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।

এনার্জি বুস্টার

শরীরে এনার্জি দরকার হলে এক টুকরো চকোলেট খান, দুর্দান্ত কাজ করবে। অনেকেই এনার্জি বাড়ানোর জন্য চা-কফি কিংবা এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করে থাকে, কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না সামান্য চকোলেটও আপনাকে এনার্জি সরবরাহ করতে পারে।

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা

ডার্ক চকোলেটে যে বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থ থাকে তা ত্বকের পক্ষে উপকারি হতে পারে। ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করে ডার্ক চকোলেট। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে- ডার্ক চকোলেট খেলে শরীরে এমন পদার্থ তৈরি হয় যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করে। তবে সেটা খুবই সামান্য পরিমাণে।


এদিকে বিজ্ঞানীরা এখন চিনির দানার বদলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানিতে দ্রবীভূত চিনিকে চকোলেটের অণুর চারদিকে রেখে চকোলেট বানাতে চেষ্টা করছেন, যাতে অল্প চিনিতেই সুস্বাদু ও বিলাসী অনুভূতিদায়ক চকোলেট বানানো যায়। 

আবার চকোলেটের সাথে নানা রকম স্বাস্থ্য গুণসম্পন্ন শুকনো ফল, তাজা ফল, বিভিন্ন বাদাম ও বীজের সমন্বয় ঘটিয়ে চকোলেটকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তোলার চেষ্টা চলছে। 

অপরদিকে রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে চকোলেট। ত্বক যদি শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে তাতে প্রাণ ফেরাবে চকোলেট ফেশিয়াল। আসলে চকোলেটে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায়, তা ত্বকের জন্য অতিমাত্রায় উপকারী। চকোলেটে থাকা উপাদান ত্বকে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। সুতরাং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয় ও ত্বক মোলায়েম হয়।


রোদ লেগে ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া ও কালচে ছোপ পড়ার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এই ফেশিয়াল। ত্বকের কালো দাগ, বলিরেখার সমস্যা কমিয়ে ত্বককে আর্দ্র রাখে। ত্বকের কোষের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে, যাতে ত্বক দেখতে লাগে সতেজ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //