Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

শেফ তৈরির কারিগর জাহিদা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪, ১৯:১১

শেফ তৈরির কারিগর জাহিদা

জাহিদা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

শেফের পোশাক পরে একদল শিক্ষার্থী ক্লাস রুমে বসে খোশগল্পে মেতেছেন, প্রশিক্ষক ক্লাসে ঢুকতে আরও খানিকটা সময় বাকি-সময়টা নিজেদের মতো করেই কাটাচ্ছিলেন। হাসি, গল্প, খুনসুটির সেই আবহ ছাপিয়ে ডিপার্টমেন্টের করিডর ধরে সশব্দে একজন নারীকে হেঁটে আসতে দেখা গেল। তিনিও শেফের পোশাকে সজ্জিত। যতই কাছে আসলেন, ক্লাস রুমটিতে ততই পিনপতন নীরবতা। রুমের কাচের দরজা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই ভারী গলায় জানতে চাইলেন, ‘আপনারা এত উচ্চস্বরে কথা বলছেন কেন? শান্ত হোন! শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।’ 

এতক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছিল তিনি হলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান জাহিদা বেগম। এখন পর্যন্ত রন্ধন শিল্পে প্রায় বিশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী সরাসরি তার হাত ধরেই তৈরি হয়েছেন। দেশ-বিদেশের বড় বড় হোটেলে এখন তারা দাপিয়ে কাজ করছেন।

জাহিদা বেগমের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপণন নির্বাহী হিসেবে। এরপর ১৯৯৮ সালে শেরাটন ঢাকা হোটেলে (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তার শেফ তৈরির কারিগর হয়ে ওঠা ২০০৩ সালে। সে বছরই তিনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেন। তারপর নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে তাকে। সংসার-শিশু সন্তান সামলে কর্মক্ষেত্রে আসতে হয়েছে, দশ থেকে বারো ঘণ্টা অফিসের কাজ শেষে ঘরে ফিরে আবারও সংসারের দায়িত্ব সামলাতে হয়েছে। 

শুরুর দিকে জাহিদা বেগম হাঁপিয়ে উঠতেন, মনে হতো একজন নারী এবং মা হিসেবে তিনি আর সামনে এগোতে পারবেন না। কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানালেন, ‘আমি কেন এ পেশাকে বেছে নিয়েছি এ প্রশ্ন শুনতে হয়েছে বারবার। অনেকেই ডিমোটিভেট করেছে। কিন্তু আমি থেমে যাইনি। এক সময় আমাদের কোর্সগুলোতে মেয়েদের উপস্থিতি খুব কম ছিল, পাঁচ থেকে ছয়জন মেয়ে থাকত প্রতিটি ব্যাচে। এখন সে সংখ্যাটা কখনো কখনো পঞ্চাশ-পঞ্চাশ হয়ে যায়। আমাদের মেয়েরা দেশের বাইরেও কাজ করছে এখন। আমি সব সময় চেষ্টা করি মেয়েদেরকে মোটিভেট করার।’ 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত রন্ধন বিষয়ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিযোগী দলের নেতৃত্ব দেন জাহিদা বেগম। ভারত, নেপাল, জাপান ও সাইপ্রাসে রন্ধন বিষয়ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। একবার ভারতে আয়োজিত তেমনই এক প্রতিযোগিতায় দল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন জাহিদা বেগম। সেখানে তারা মজার একটি ঘটনার সাক্ষী হন। জাহিদা বেগম বলেন, ‘সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক প্রতিযোগী এসেছেন। তারা নানা পদের খাবার রান্না করেছেন। আমি করলাম হাঁসের মাংস ভুনা, সঙ্গে খোলাজালি পিঠা। দুই হাজার লোকের খাবার তৈরি করেছিলাম, মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়! অনেকে এসে হাঁসের মাংস না পেয়ে আঙুল দিয়ে ঝোল চেটে খেয়েছেন। 

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করানো হয়। এনসিসি (শর্টকোর্স), শেফ ডিপ্লোমা, কালিনারি কোর্স, হাইজিন কোর্স, স্পেশাল শর্টকোর্স ইত্যাদি। ডিপার্টমেন্টে প্রশিক্ষণের পর শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের জন্য দেশের বিভিন্ন পাঁচতারকা, চারতারকা ও তিনতারকা হোটেলে পাঠানো হয়। সফলভাবে ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫