খেলা
মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:২০ পিএম
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম
খেলা
মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:২০ পিএম
খেলাধুলায় র্যাঙ্কিংটা যেন কেমন। খেলে যেমন পেছাতে হয় আবার না খেলেও অনেক সময় এগোতে হয়। ২০১৬ সালে ভুটান বিপর্যয়ের পর পেছাতে পেছাতে র্যাঙ্কিংয়ে একেবারে ১৯৭ নম্বরে পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
এরপর একটি-দুটি ম্যাচ থেকে ছোট ছোট অর্জনে ১৮২ নম্বরে উন্নীত হলেও আবারও পাঁচ ধাপ পিছিয়ে গেছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। এখন ১৮৭ র্যাঙ্কিং থেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাকি ম্যাচগুলোতে খেলাত হবে জামাল ভূঁইয়ার দলকে।
আগামী ১০ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে মাঠে নামবে জেমি ডের শিষ্যরা। এরপর ঠিক পাঁচদিন পর ১৫ অক্টোবর ভারতের বিপক্ষে খেলা রয়েছে। প্রথম ম্যাচটি ঢাকায় হলেও দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতের সল্টলেকের যুব ভারতী স্টেডিয়ামে। এর আগে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-০ গোলের পরাজয় দিয়ে নতুন মিশন শুরু হয় বাংলাদেশের। দারুণ খেলে গোলের প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারার কারণেই পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
এবার ভারত ও কাতারের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সিরিয়ার বাংলাদেশ ফুটবল ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ভুটানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। নতুন এই চ্যালেঞ্জে কতটা জয়ী হতে পারবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তিন বছর আগে ভুটান বিপর্যয়ের পর ৩৬ মাসের জন্য পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশের ফুটবল। এ সময়ে ফিফা কিংবা এএফসি থেকে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি লাল-সবুজ প্রতিনিধি দলটি। র্যাঙ্কিংয়ে পেছাতে পেছাতে প্রায় ২০০-এর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। মাঝের সময়টাতে কিছুটা বিরতি দিয়ে আবারও কক্ষপথে ফিরেছে বাংলাদেশের ফুটবল।
এখন বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার অপেক্ষায় রয়েছে জামাল ভূঁইয়ার দল। গত ১০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ফুটবলের নতুন দিনের সূচনাই হয়েছে। তাজিকিস্তানের ম্যাচ দিয়ে কাতার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নপূরণের পথে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
বাছাইপর্ব থেকে যেহেতু মূল বিশ্বকাপের দল নির্ধারিত হয় সেহেতু এখানে বাংলাদেশও বিশ্ব আসরে খেলার সম্ভাবনায় রয়েছে। গ্রুপে র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ কাতার। ৫৫ নম্বরে থেকে সবার উপরে রয়েছে দেশটি। ৮৬ নম্বরে থেকে এরপরই রয়েছে ওমান। ভারত রয়েছে ১০১ নম্বর নিয়ে। আর বাংলাদেশের ওপরে থাকা আফগানদের অবস্থান ১৪৯ নম্বরে। বর্তমানে লাল সবুজ প্রতিনিধি দলটির র্যাঙ্কিং ১৮৭ তে। যেখানে গত কয়েকমাস আগেও দশ ধাপ পিছিয়ে ছিল দল।
সে কারণে এবার নতুন চ্যালেঞ্জ ফুটবল দলের সামনে। সব দলই পরিচিত বিধায় একটা সুবিধা রয়েছেই। পাশাপাশি প্রধান কোচ মূল বাছাইয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাতারকে চাইছিলেন। তার সে আশা পূরণ হয়েছে। অর্থাৎ এদের সবার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। এখন হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে সবার সাথেই দুটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকছে। কারণ এবার এশিয়া থেকে বিশ্বকাপে খেলবে চারটি দেশ।
আট গ্রুপের ৪০ দল লড়াই করবে শেষ চারে পা রাখার জন্য। আট গ্রুপের আট চ্যাম্পিয়ন ও সেরা চার রানার্সআপ মিলে ১২ দল পৌঁছাবে বাছাইপর্বের তৃতীয় রাউন্ডে। কাতার সরাসরি বিশ্বকাপ খেলায় তারা থাকবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের হিসাবের বাইরে। অর্থাৎ কাতার যদি নিজেদের গ্রুপ থেকে শীর্ষস্থান অর্জনও করে এই গ্রুপ, এরপরও ‘ই’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় হওয়া দল সরাসরি উঠে যাবে পরের রাউন্ডে। রানার্সআপ হয়ে খেলার সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের সামনে।
১২ দলের ২০২৩ চীন এশিয়ান কাপেও খেলা নিশ্চিত করবে। আর তৃতীয় পর্বের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শীর্ষ ৬ দলকে ভাগ করা হবে দুটি গ্রুপে। দুটি গ্রুপের শীর্ষ চার দল খেলবে বিশ্বকাপে। এখন চলছে নানা সমীকরণের হিসাব নিকাশ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তৃতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ যেতে না পারে তাহলে কি হতে পারে? কারণ এটি কাতার বিশ্বকাপের পাশাপাশি এশিয়ান কাপেরও বাছাইপর্ব। সে কারণে কোনোভাবেই গুরুত্ব কম নয় বাংলাদেশের জন্য। দ্বিতীয় পর্ব পার হয়েই তৃতীয় পর্বে খেলার সুযোগ থাকবে। আর দ্বিতীয় পর্ব পেরুতে না পারলে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের অন্যান্য ধাপে খেলার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের সামনে। আট গ্রুপের চতুর্থ হওয়া সেরা চার দল অংশ নেবে তৃতীয় রাউন্ডের এশিয়া কাপ বাছাই পর্বে। আর বাকি চার চতুর্থ হওয়া দল ও পঞ্চম হওয়া দলগুলো একে অপরের বিপক্ষে খেলবে এশিয়া কাপের বাছাই পর্বের প্লে-অফে।
সব মিলিয়ে কঠিন এক সমীকরণ সামনে এলেও এতে রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ কোচ জেমি। কঠিন সময় পার করে বাংলাদেশের ফুটবলকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারাটাই তার কাছে বড় সাফল্য মনে হচ্ছে। পাশাপাশি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে তার কথা, ’আফগানিস্তান অবশ্যই শক্তিশালী দল। তবে ফুটবল কিন্তু দুই দলের খেলা। আমরা ভালো খেললে জিততেও পারি। আর আমি যখন জাতীয় দলের দায়িত্ব নেই তখন থেকেই উন্নতির চেষ্টা করে আসছি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়ে তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে পেরেছি বলে মনে। আর এখানে কাতার ও ভারতকে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি। কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের আগে খেলার পাশাপাশি ভালো ফলের সুখস্মৃতি আছে বলেই এমনটা বলে থাকতে পারেন জেমি।
ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারিয়েই বাংলাদেশ ইতিহাসের প্রথমবার জায়গা করে নিয়েছিল নক আউট পর্বে। যদিও সেই লড়াইটা ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দলের। কিন্তু বাংলাদেশের এই দলটাই যে এখন পুরোপুরি জাতীয় দলে পরিণত হয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন কোচ, সেটা সর্বোচ্চ যতটা সম্ভব ঠিক ততটাই। ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। হাই প্রোফাইল কোচ হিসেবে তাকে বলা যাবে না। কারণ উয়েফা প্রো লাইসেন্সই তার ছিল না।
তবে শুরু থেকে এই ইংলিশ ম্যানের কিছু কার্যক্রম সবার মনোযোগ আকর্ষণে যথেষ্ট ছিল। তার আগে কাজ করে যাওয়া এন্ড্রু অর্ড যে পথটা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল সেটাই শক্ত হাতে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন জেমি। রাশিয়া বিশ^কাপ বাছাইপর্বে ব্যর্থতার পর এই সময়ে কাতার বিশ^কাপ নিয়ে নিজেদেরকে প্রস্তুত করে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh