যেখানে থমকে রয়েছে দেশের ফুটবল

অনেক প্রত্যাশা থাকার পরও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে আবারো ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। টানা তৃতীয় আসরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। 

ছয়টি আসর শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখনো জাতির পিতার নামে অনুষ্ঠিত এই আসরে শিরোপা শূন্য স্বাগতিক দল। 

‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে এবারের আসরে শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা থাকলেও দক্ষ গোল স্কোরারের অভাবেই মূলত সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেমি ডে’র শীষ্যরা। আর এই একটি জায়গাতেই বছরের পর বছর ধরে আটকে আছে বাংলাদেশের ফুটবল। 

পুরো ম্যাচে ভালো খেলেও প্রাপ্ত সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে না পারার কারণেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে জামাল ভূঁইয়ার দলকে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের আগে গেল ডিসেম্বরে এসএ গেমসেও একই ফলাফল করে বাংলাদেশ। এবার গ্রুপ পর্ব থেকে নয় সান্ত্বনার ব্রোঞ্চ জিতে দেশে ফেরে বাংলাদেশ দল। নেপাল ও ভুটানের কাছে পরাজিত হয় দল। আর শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের বিপরীতে ড্র করে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। লংকার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় আলো ছড়াতে পারেনি লাল-সবুজ পতাকাধীরাদের খেলা। 

ভারত না থাকার ফায়দাটা স্বাগতিক নেপাল নিতে পারলেও বাংলাদেশ নিতে পারেনি। ব্যর্থতা সেই একটি জায়গায়, গোল করতে না পারার কারণে। সেই ধারা অব্যাহত থাকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও। 

সে কারণেই বাফুফে সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘স্ট্রাইকাররা গোল করতে না পারলে যতই ভালো দল গড়া হোক না কেন সাফল্য আসবে না। ডি-বক্সের ভেতর গিয়ে গোল করতে ভুলে যায় আমাদের খেলোয়াড়রা। আমি তো আর মাঠে গিয়ে গোল করতে পারবো না’।

কোচ জেমি ডে এবার নতুন করে সেই পুরনো বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছেন। পাশাপাশি জাতীয় দল আর ক্লাব দলে খেলোয়াড়দের পজিশন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আর জাতীয় দলকে সাফল্য পেতে হলে বিদেশি স্ট্রাইকারদের বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলানোর কথা বলেছেন। ক্লাব দলের মতো জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

সব মিলিয়ে বলাই যায়, দক্ষ গোল স্কোরারের অভাব পূরণ না হলে সাফল্য যে পাওয়া যাবে না সেটি একরকম পরিষ্কার হয়ে গেছে। 

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমিফাইনালে হারের পরই ইংলিশ কোচ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘পেশাদার লিগে বিদেশি ফুটবলারদের স্ট্রাইকার পজিশনে ক্লাবগুলো খেলাচ্ছে। এতে করে দল হয়তো লাভবান হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় দলের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করে দলকে ডোবাচ্ছে। আমি তাই বাফুফের কাছে অনুরোধ রাখবো লিগে বিদেশি সংখ্যা কমাতে’। 

তবে জেমি ডের এমন দাবি পাত্তা পায়নি বাফুফের কাছে। এখন কোচের মতামতকে কোনো প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে বাফুফে বরং বিদেশির সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিয়মিত একাদশে ঠিকই চারজন বিদেশি খেলতে পারবে, কিন্তু কোনো স্থানীয় খেলোয়াড়কে মাঠ থেকে তুলে নিলে তার বদলি হিসেবে বিদেশি নামাতে পারবে। যা আগে কখনোই ছিল না। এক্ষেত্রে দলগুলো অবশ্যই কৌশল বেছে নেবে। জয়ের জন্য তারা বিদেশি খেলোয়াড়দেরই মাঠে নামাবে।

বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি একরকম পায়ে কুড়াল মারার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলগুলো এখন প্রথম কয়েক মিনিট খেলানোর পর দেশি খেলোয়াড়দের তুলে নেবে। এই নিয়মে দেশের ফুটবল আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশ্লেষকরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। এতে ক্লাবগুলো উপকৃত হবে, জাতীয় দল কিংবা দেশ নয়। 

এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত আবার জেমি ডে মানতে পারেন কি না। কেননা যেকোনো দেশ কোচের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে অনেকটা আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশে এর উল্টোটাই হচ্ছে। অবশ্য বিদেশির সংখ্যা কমিয়ে দিলে দলগুলো আপত্তি তুলবে, যা নিকট অতীতে দেখা গেছে। বিশেষ করে শিরোপা প্রত্যাশীত দলগুলো। 

জেমি এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাকরি ছাড়বেন কি না সেটাও নতুন করে প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য বাফুফের কেউ কেউ আবার জেমির কাজে নাকি সন্তুষ্ট নন। কোনো ট্রফিই যখন আসছে না তখন আর জেমিকে রেখে লাভ কি এটাও নাকি তারা ভাবতে শুরু করেছেন?

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //