ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৫ এএম
ম্যারাডোনা
তার জন্ম আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ভিল্লা ফিওরিতোর বস্তি এলাকার এক দরিদ্র পরিবারে। শিশুকাল, শৈশব, কৈশোর কেটেছে চরম অভাব-অনটনে, খেয়ে না খেয়ে।
ফলে দারিদ্রের কষাঘাতের কষ্টটা তার খুব ভালো করে জানা। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন শাসককুল ও সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষদের দ্বারা অসহায় দরিদ্র মানুষদের পদে পদে শোষিত হওয়ার করুণ দৃশ্য।
বিশ্ব গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত, প্রকাশিত ম্যারাডোনার একটা ছবিই উপরের কথাগুলো প্রমাণ করতে যথেষ্ট। ম্যারাডোনার অনেক ছবিতেই নিয়ম ভাঙার বার্তা ফুটে উঠেছে। তবে তার মধ্যে একটা ছবি বিশেষ। ছবিটা সমুদ্র ভ্রমণের। উন্মত্ত সাগরের বুক চিরে ভেসে চলছে জাহাজ। জাহাজের খোলা অংশের রেলিং ঘেঁষে উদোম শরীরে আয়েশি ঢঙে বসা ম্যারাডোনা। ডান হাতের বাহুতে বিশ্বখ্যাত বিপ্লবী চে গুয়েভারার উল্কি আঁকা। মুখে হাভানা চুরুট। সাগরের নীল জলরাশির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাথার ওপরে বিশাল নীল আকাশ। মুখটা ওপরের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করে চুরুটে সুখ টান দিচ্ছেন ম্যারাডোনা। চুরুট টানার ভঙিতেই যেন স্পষ্ট, পৃথিবীর সব নিয়মকে যেন বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন তিনি!
নিয়ম ভঙ্গ করা খেয়ালি ম্যারাডোনার বার্তাটি যেমন স্পষ্ট, তেমনি ছবিতে অন্য একটি বার্তাও স্পষ্ট- ম্যারাডোনা বিপ্লবী। তিনি মার্কসবাদী রাজনীতির সমর্থক ছিলেন। ৬০ বছরের জীবনে ম্যারাডোনা কখনোই সরাসরি রাজনীতি করেননি; তবে বামপন্থী রাজনীতির চেতনা যে তার রক্তে, শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত হয়েছে, তা আরো অনেকভাবেই ফুটে উঠেছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বখ্যাত বিপ্লবী চে গুয়েভারার উল্কি তার বাহুতে আঁকা। এ রকম আরো একটি উল্কি নিজের বাঁ পায়ে এঁকেছিলেন ম্যারাডোনা।
এসব দেখে দেখেই শোষিত মানুষদের হয়ে পুঁজিবাদী শাসককূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেতনাটা জন্ম নেয় তার মননে। জন্ম নেয় বিপ্লবী মনোভাব। বড় হলে তাই বিপ্লবীদের সংস্পর্শই টেনেছে তাকে। তাই তো স্বদেশী বিপ্লবী চে গুয়েভারা তার আদর্শ। কিউবার অবিসংবাদিত মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে গড়ে ওঠে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সন্তপ্রাণে সমর্থন জানান বিপ্লবী কাস্ত্রোকে।
লাতিন আমেরিকার আরেক বিপ্লবী হুগো চাভেজের রাজনৈতিক আদর্শকেও নিজের আদর্শ বলে গ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমি ফিদেলিস্তা, আমি চাভিস্তা।’ মানে ‘আমি ফিদেলের সমর্থক, চাভেজের সমর্থক।’ মতাদর্শের জায়গা থেকে কথাটা এক ভুবনের বিপ্লবীদের প্রতি আরেক ভুবনের বিপ্লবীর হৃদয় নিংড়ানো নৈবেদ্য। ম্যারাডোনার মৃত্যুর তারিখটি এই অর্ঘকে যেন আরো পূর্ণতা দিলো। ম্যারাডোনার মৃত্যু ২৫ নভেম্বর। পিতৃসম বন্ধু ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুও ২৫ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর তারিখটি, ম্যারাডোনাকে মিলিয়ে দিয়েছে তার ফুটবল ভুবনের নায়কের সাথেও।
২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছেন। ২০০৫ সালে ‘সুমিত অব দ্য আমেরিকাস’-এ অংশ নিতে আর্জেন্টিনায় যান যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। গায়ে ‘বুশকে আটকাও’ লেখা টি-শার্ট পরে ম্যারাডোনা সশরীরেই বুশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। যুদ্ধ পিপাসু বুশকে ‘মানবতার জঞ্জাল’ বলেও আখ্যায়িত করেন ম্যারাডোনা। ২০০৭ সালে এ রকমই এক টি-শার্ট পরে ইরানের মানুষদের প্রতি নিজের সমর্থন জানান ম্যারাডোনা। তিনি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র গঠনেরও পক্ষে ছিলেন।
ABOUT CONTACT ARCHIVE TERMS POLICY ADVERTISEMENT
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ | প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ
প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী | ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
© 2021 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh