ফুটবলে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন?

আমরা এক পা এগোলে পৃথিবী দশ পা এগোয়। ফুটবলে আমাদের দেশের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফুটবলের মানের ব্যবধানটা এমনই। কেন এই পার্থক্য সেটা বুঝতে হবে সবার আগে। তা না হলে শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। 

ফুটবল নিয়ে আমরা শুধুই আনুষ্ঠানিকতাকে প্রাধান্য দেই। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন হলো। সেটা নিয়ে কতই না মাতামাতি হলো। নির্বাচনে কাজী সালাউদ্দিন সভাপতি পদে জয়লাভ করেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে তিনি দেশের ফুটবলের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা সবাই জানি, সালাউদ্দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। ব্রাজিলে যেমন পেলে, আর্জেন্টিনায় ম্যারাডোনা, ফ্রান্সে মিশেল প্লাতিনি, জার্মানিতে বেকেনবাওয়ার, বাংলাদেশে তেমননি সালাউদ্দিন। নতুন মেয়াদে তার দ্বারা ফুটবলের উন্নতি হবে কিনা, সবাই এখন সন্দেহ করে। 

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় কিংবা কোচিং স্টাফ- সবার মধ্যে ফুটবল উন্নতির উপায় নিয়ে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। খেলোয়াড়রা একটু ভালো খেলতে পারলে মনে করে তারা বিশাল তারকা হয়ে গেছেন। তাদের নতুন করে আর কিছু শেখার নেই। নেইমার বা ডেভিড বেকহামের মতো ফ্যাশন করে চুল কাটতে পারলেই চারদিকে নাম ছড়িয়ে পড়বে- এমন ধারণা আমাদের ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে আছে। 

যারা ফুটবল প্রশিক্ষণে জড়িত, তারা ভাবেন যে, একটুখানি জগিং করালে কিংবা সুইমিংপুলে সাঁতার কাটালেই খেলোয়াড় নিয়ে তাদের কাজ শেষ। বিভিন্ন টেকনিক শেখানো, দম বাড়ানোর উপায় জানানো ও দেশপ্রেমসহ মনস্তাত্ত্বিক শক্তি বাড়ানো নিয়ে কোনো কাজ করেন না আমাদের প্রশিক্ষকরা। সে বিদেশি অথবা দেশি কোচ হোক। দম বাড়ানোর জন্য আফ্রিকানদের, টেকনিক শেখানোর জন্য ইতালি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও হল্যান্ডকে ফলো করার চর্চা করানো দরকার। 

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে আমাদের ফুটবল মানের পার্থক্য একসময় খুব বেশি ছিল না। আর সেটা চলেছে কয়েক দশক ধরে। আচমকা ভারতের ফুটবলের মান অনেক বেড়ে যায়। ভারতীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক আসরের আয়োজন করে। এই আসর দিয়েই ভারত তাদের ফুটবল মানের উন্নতি ঘটিয়েছে। আমরা তো ক্রিকেটে বিপিএলের আয়োজন করছি। ফুটবলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক আসরের আয়োজন করা দরকার। বিশ্ব ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত রয়েছে ১০৪ নম্বরে। ভারত কয়েক বছর আগেও ১৫০ নম্বরে ছিল। 

আর বাংলাদেশ ছিল তার চেয়ে একেবারেই সামান্য পেছনে। এখন বাংলাদেশ পেছাতে পেছাতে নেমে গেছে ১৮৪ নম্বরে। মাত্র কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ছিল ১৮৭ নম্বরে। 

ফুটবল এখনো বাংলাদেশের মানুষের মনে বড় ধরনের জায়গা ধরে রেখেছে। সেটা বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় প্রমাণ পাওয়া যায়। জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি বিশ্বকাপ আসর এলে। বিশ্বকাপে না হোক, এশিয়ান মানে তো যাওয়াই যায়। তবে আমাদের সবার আগে বুঝতে হবে, অন্য দেশের সাথে পার্থক্য কতটুকু বাংলাদেশের ফুটবলের।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //