ফিফার কাঠগড়ায় বাফুফে

আবারো নেতিবাচক খবরে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বছর দুয়েক আগে দুর্নীতি দমন কমশন (দুদক) থেকে চিঠি পাওয়ার পর এবার বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা থেকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। 

দুটি চিঠিতেই প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও দুদকের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে ফিফার চিঠিতে বাফুফের কর্মকাণ্ডে আরো স্বচ্ছতা আনার কথা বলা হয়েছে। চিঠির বিষয়ে বলা হলেও ফান্ড বন্ধ হওয়ার বিষয়ে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি থেকে। 

এ বিষয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘ফিফা ও বাফুফের ফান্ড নিয়ে যে কথাগুলো উঠেছে তা ঠিক নয়। কারণ, আমি সর্বশেষ ৭ এপ্রিল ফিফার থেকে ফান্ড পেয়েছি ও ১৫ দিন আগেও পেয়েছি।’ 

ফিফা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে সেটিকে বাফুফেবস নগণ্য বলেছেন। সবসময়ই অনুদান পাঠানোর আগে কিছু পর্যবেক্ষণ করে। এবারো সেরকম কিছুই করেছে, এরচেয়ে বেশিকিছু নয়। 

কিন্তু ফিফার চিঠিকে তো আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রতিষ্ঠানটির চোখে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে সেটি জানানোর ব্যাপারে এতটুকু বিলম্ব করে না তারা। বাফুফের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক কথা শোনা গেছে। বাফুফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই কর্মকর্তার কথাবার্তার খুব একটা মিল পাওয়া যায় না। সে কারণে ফিফা থেকে চিঠি আসার পর সেই কর্মকর্তা আবু হোসেনের ওপর চটেছেন বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তাকে বাদ দেয়ার বিষয়েও নাকি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ ওই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসাব-নিকাশ সুষ্ঠুভাবে ফিফায় পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় ফিফা কঠোর অবস্থান নিয়েছে, বিষয়টি অনেকটাই এরকম। 

এরপর বাফুফে সাধারণ সম্পাদক ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান, দু’জনের কাউকেই সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। পরে ২০ মিনিটের শর্ট নোটিসে ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যানের অফিসে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

এখানে কিছুটা লুকোচুরির বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। ফিফার মেম্বারস অ্যাসোসিয়েশন ও ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে অনলাইন সভায় বসে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। তাতে ফিফার সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে। ‘বাফুফের ফিন্যান্স সম্পর্কিত কার্যক্রমে আরও স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অনুরোধ জানানো হয় ফিফার পক্ষ থেকে। বাফুফের ক্রয়নীতি, টেন্ডার-প্রক্রিয়া ও অর্থ পরিশোধ ইত্যাদি বিষয়ে লিখিত নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ফিফা ফরোয়ার্ড প্রজেক্ট ফান্ড বাফুফের অনুকূলে ছাড়করণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’, ফিফার এমন কথা বলার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে।

বাফুফে থেকে দেয়া লিখিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে বাফুফের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা নেই ও গোঁজামিল আছে আর্থিক লেনদেনেও, এসব পরিষ্কার হয়ে যায়। বেশকিছু অভিযোগের কারণে ফিফা ফরোয়ার্ড প্রজেক্টে বাংলাদেশের জন্য বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছে; কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে সালাম মুর্শেদী দাবি করেছেন, ‘গত চার বছরে আমাদের আর্থিক কর্মকাণ্ড ৯১ শতাংশ স্বচ্ছ হয়েছে। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা শব্দগুলো ব্যবহারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, অন্য কিছু নয়।’ 

জানা গেছে, ফিফা-এএফসি থেকে বিভিন্ন অনুদান নিয়মিত পেলেও ফিফার কভিড-১৯ ফান্ডটা এখনো পায়নি বাফুফে। এখন সেটি ছাড় করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে অনলাইন সভায়। করোনাভাইরাস জেকে বসার পর পরই গত বছরের শুরুর দিকে ফিফা এই ফান্ড বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিল। অনেক দেশ ফিফার এই অনুদান পেয়ে গেলেও বাংলাদেশকে এখনো দেয়া হয়নি। 

বাফুফে যদি সকল নিয়ম-নীতি মানতো তাহলে কেন প্রতিবার নির্বাহী কমিটির সদস্যরা অডিট রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি জানান। আর এখন ফিফাও বলছে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //