চুরমার সুপার লিগ

বিরোধিতা আর প্রতিবাদের মুখে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই উচ্চাবিলাসী ক্লাবগুলোর স্বপ্নের সুপার লিগ প্রকল্প ভেঙে চুরমার। গত ১৮ এপ্রিল ১২টি ক্লাব মিলে এই লিগের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যা তাতে এটা স্পষ্ট যে, সুপার লিগ আপাতত হচ্ছে না। 

তবে একেবারে নিঃশেষ হয়েও যায়নি। ১২টি ক্লাবের মধ্যে আটটি ক্লাব সরে দাঁড়ালেও রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাস ও এসি মিলান এখনো নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট। জোট ভেঙে না দিলেও পরিস্থিতি এখন থমথমে। তবে ৪৮ ঘণ্টার প্রলয়ঙ্করি ঝড়ে ফুটবলের বড় বড় কর্তাদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। 

শুধু ফিফা, উয়েফা এবং ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালির ফুটবল ফেডারেশন এবং লিগ কমিটির কর্তারা নন, সুপার লিগের আত্মপ্রকাশের খবর বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনকেই ঠেলে দিয়েছিল মহাউদ্বেগের মধ্যে। এই লিগকে ‘লোভীদের লিগ’ আখ্যায়িত করে উয়েফা সরাসরিই আয়োজক ক্লাবগুলোকে নিষিদ্ধের হুমকি দিয়েছিল। 

সুপার লিগ প্রকল্প ভণ্ডুলে মূল ভূমিকাটা রেখেছে ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, আর্সেনাল, টটেনহাম, লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইংল্যান্ডের বড় এই ছয়টি ক্লাবই সুপার লিগ নামের বিলাসী প্রকল্পে একাত্ম হয়েছিল। পরবর্তীতে ক্লাবেরই সমর্থক, খেলোয়াড়, কোচরা আন্দোলনে নামে। এমনকি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও সরাসরি সুপার লিগবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। যোগ দেন ব্রিটেনের রাজপুত্র প্রিন্স উইলিয়ামসও। রাজনৈতিক ও নানামুখী চাপে দুইদিনের মাথায় ছয়টি ক্লাবই সুপার লিগ থেকে সরে দাঁড়ায়। 

ইংলিশ ক্লাবগুলো সরে দাঁড়ানোর মধ্যদিয়েই মূলত সুপার লিগ প্রকল্প জন্ম নেওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেথে পরে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ইতালির তিন ক্লাব জুভেন্টাস, এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও স্পেনের অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদও। সুপার লিগ প্রকল্পে অটুট থাকে কেবল স্পেনের দুই দৈত্য রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। তবে এখন জানা যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সঙ্গে জুভেন্টাস এবং এসি মিলানও আছে। তারা সরে দাঁড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছিল বলে খবর বেরোয়, সেটি আসলে সত্য নয়!

সুপার লিগ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ, সেটি এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। নতুন এই লিগের সভাপতিও নির্বাচন করা হয় তাকে। ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে দাবি করে পেরেজ স্পষ্ট করেই বলেছেন, এখন হয়তো সুপার লিগ আয়োজন সম্ভব হবে না। তবে ভবিষ্যতে প্রকল্পটা নতুনভাবে দাঁড় করানোর ইচ্ছার কথাও বলেছেন।

এই লড়াইয়ে বার্সেলোনার নবনির্বাচিত সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাও পেরেজের সঙ্গেই আছেন। লাপোর্তা বলেছেন, ভবিষ্যতে সবার সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতা করে নতুনভাবে কিছু করা হবে! 

এদিকে, ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে নিষিদ্ধ করার কথাও ভাবছে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে, এখনই নিষেধাজ্ঞার মতো কঠিন সিদ্ধান্তে যাবে না উয়েফা। বিদ্রোহী সুপার লিগ যেহেতু ভেস্তে গেছে, কাজেই নিষিদ্ধ করার দরকার কি! তবে শেষ পর্যন্ত সুপার লিগের পরিণতি কী হয়, জল কোন দিকে গড়ায়, সেটি দেখতে অপেক্ষাই করতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //