ফুটবলে সুনজর দরকার

অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে। অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলতে হবে। অবশ্যই সম্ভাবনা আছে ফুটবলে। তবে সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগাতে হলে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে একটা স্থায়ী অবস্থান তৈরি করতে পারবে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। 

চলমান বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে ৭ জুনের ম্যাচে বাংলাদেশের ০-২ গোলে হারকে পুরোপুরি নেগেটিভ দৃষ্টিতে না নিয়ে গ্যাপগুলো দূরীকরণের চেষ্টা হলে ভবিষ্যৎ ভালোই হবে আমাদের ফুটবলের। 

বাংলাদেশ হয়তো বাছাইপর্বে খুব ভালো করেনি। এখন পর্যন্ত মাত্র দুই পয়েন্ট অর্জন করেছে বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের গ্রুপে যে চারটি দেশ রয়েছে তারা বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে। তাই তাদের সঙ্গে খেলে দুই পয়েন্ট লাভও ইতিবাচক বলেই ধরে নিতে হবে।

কাতার ও ওমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে চিন্তা করতে হবে ভারত ও আফগানিস্তানকে নিয়ে। কীভাবে এই দুই দেশকে পেছনে ফেলা যায়, সেটাই হবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য। এই দুই দেশের ফুটবলের মান তারা এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে কোন পন্থায়, ভাবতে হবে সেটা নিয়ে। কাতার বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৫৮ নম্বরে, ওমান ৮০ নম্বরে, ভারত ১০৫ নম্বরে, আফগানিস্তান ১৪৯ নম্বরে অবস্থান করছে। আর বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৪ নম্বরে। ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলাটাই এখন মূল লক্ষ্য থাকা উচিত বাংলাদেশের জন্য। 

এবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ কিন্তু ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে মোটেও মন্দ খেলেনি। আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রথম লেগে লড়াই করেই ০-১ গোলে পরাজিত হয়। দ্বিতীয় লেগে বাংলাদেশ দারুণ খেলে ১-১ গোলে ড্র করেছে। আর ভারতের সঙ্গে কলকাতায় প্রথম লেগে ১-১ গোলে বীরত্বপূর্ণ ড্রর পর সর্বশেষ দ্বিতীয় লেগে ০-২ গোলে হেরেছে দ্বিতীয়ার্ধের জোড়া গোলে। এই দুই দেশের বিপক্ষে মোট চার ম্যাচেই স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের ঘাটতি কোন কোন জায়গায়। মূলত তিনটি ঘাটতি চোখে পড়েছে। 

প্রথমত, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্পিড কম। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে স্পিড বেশি হলো আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর খেলোয়াড়দের। ওই অঞ্চলের খেলোয়াড়রা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খেলার যোগ্যতা লাভ করে প্রধানত স্পিডের কারণে। আফ্রিকার যেকোনো দেশেই নানা কৌশলে স্পিড বাড়ানো হচ্ছে। আসলে স্পিডটাই বড় এক পুঁজি তাদের। 

দ্বিতীয়ত, দম বৃদ্ধি ফুটবল মানের অন্যতম উপকরণ। বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশ ফুটবলে উন্নত, তাদের খেলোয়াড়দের দম প্রচুর। ভারত ও আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের দম ইউরোপীয় কিংবা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর খেলোয়াড়দের মতো না হলেও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। দম প্র্যাকটিসের বিষয়। এটা ঠিকমতো রপ্ত করা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য জরুরি। দেখা গেছে, ম্যাচের একেবারে শেষভাগে এসে বাংলাদেশ দল এলোমেলো হয়ে পড়ে। মূলত দম কম থাকায় এটা হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের একদম শেষ দুই মিনিটে গোল হজম করতে যাচ্ছিল। আর ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের গোল দুটিও হয় দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের দম ফুরিয়ে যায় বলেই ড্র করতে করতে হেরে যায় বাংলাদেশ। 

শুধু নির্ধারিত ৯০ মিনিটই নয়, অতিরিক্ত ৩০ মিনিটসহ মোট ১২০ মিনিট দম রাখার প্র্যাকটিসও করে বিশ্বের প্রায় সব দেশই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। 

তৃতীয়ত, ওয়ান টাচের আধুনিক ফুটবলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে ভারত ও আফগানিস্তানের তুলনায়। সর্বশেষ ভারত ম্যাচেও দেখা গেছে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের একা খেলার প্রবণতা; কিন্তু ভারত ও আফগানিস্তান দারুণ ওয়ানটাচে খেলেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে আফগানিস্তান প্রায় ৭০ শতাংশ বল নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলে। আর ভারতও প্রায় ৬০ শতাংশ বল দখলে রেখে খেলেছে। ফলে ম্যাচটাও ভারতের নিয়ন্ত্রণে থেকে যায় শেষ পর্যন্ত। 

ওয়ানটাচের জন্য ইউরোপ সেরা। আর এখন ল্যাটিন আমেরিকা বা আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোও এখন ওয়ানটাচে খেলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকটাই পেছনে পড়ে আছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //