রেফারিং নিয়ে কথা বললে নিষিদ্ধ হতে পারি: কিংস কোচ

বসুন্ধরা কিংসের স্বপ্ন ছিল এএফসি কাপে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার। ওই স্বপ্ন পূরণের দিকেই হাঁটছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বসুন্ধরা কিংস মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র করে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়।

ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরার লাল কার্ড। প্রথমার্ধে অন্তিম মুহুর্তে তার লাল কার্ড টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেয়। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মূল বিষয় ছিল রেফারিং। 

বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচ মালে স্টেডিয়ামে খুব কষ্টে নিজেকে সংবরণ করলেন, ‘রেফারিং নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে। রেফারিং নিয়ে আমি কিছু বললে ন্যূনতম ৩-৫ ম্যাচ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারি। আমি নিজে ঠাণ্ডা থাকার চেষ্টা করছি।’ 

রেফারির এই সিদ্ধান্তের প্রভাব ম্যাচে কেমন ছিল। এই প্রশ্নের উত্তরে অস্কার বলেন, ‘মাঠে কী ঘটেছে সবাই দেখেছে। আমাদের ক্লাবের সঙ্গে এ রকম নতুন কিছু নয়। আগের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেও এমন হয়েছে।’

রেফারিং নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ফুটবলাঙ্গনেও। জাতীয় দলের সাবেক কোচ ও শেখ রাসেলের হেড কোচ সাইফুল বারী টিটু সুশান্তের লালকার্ড সম্পর্কে বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি বেশ কঠিন ছিল। সুভাশীষ (মোহনবাগান) এবং সুশান্ত বল দখলের মধ্যে ছিলেন। সুভাশীষের হাত সুশান্তের কাঁধে ছিল। পড়ে যাওয়ার পর বা পড়ে যাওয়ার পেছনে সুশান্তের পা লেগেছিল কি না সেটা স্পষ্ট দেখা যায়নি। তবে এটা ঠিক এই লাল কার্ডই বসুন্ধরা কিংসকে ম্যাচ থেকে পিছিয়ে দিয়েছে।’

মোহনবাগানের সুভাশীষ পড়ে গিয়ে কিছুটা বাড়তি অঙ্গভঙ্গির আশ্রয় নেন। টিভি রিপ্লেতে এমনটা বোঝা গেছে। তার অঙ্গভঙ্গিতে মনে হয়েছিল সুশান্ত তাকে পা দিয়ে পেটে আঘাত করেছে। ফুটেজে এটি স্পষ্ট দেখা না গেলেও সুভাশীষের অঙ্গভঙ্গি রেফারির লালকার্ড দেখানোর জন্য কিছুটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

বাংলাদেশের সাবেক ফিফা রেফারি ও বর্তমান বাফুফে হেড অফ রেফারিজ আজাদ রহমান লাল কার্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘টিভিতে ফাউলটি সেভাবে বোঝা যায়নি। রেফারি ঘটনার খুব কাছে ছিলেন। লাল কার্ড সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রেফারি নিশ্চিত হয়ে দেন। রেফারি এই সিদ্ধান্তটি দিয়েছে সহকারি এবং চতুর্থ রেফারির সাথে আলোচনা করেই।’ 

ফিফা সহকারি রেফারি সুজিত ব্যানার্জী চন্দনের দৃষ্টিতে, ‘এটা ভায়োলেন্ট কন্ট্যাক্ট নিঃসন্দেহে। এ সকল ক্ষেত্রে রেফারি ইন্ট্যানসেটির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন। রেফারি চাইলে লাল কার্ড না দেখালেও পারতেন। কিন্তু রেফারিং লতে লাল কার্ড দেখানোকে অবৈধ বলা যাবে না। মোহনবাগানের খেলোয়াড়কেও চাইলে কার্ড দেখাতে পারতেন।’

বাংলাদেশের ফুটবলে রেফারিং নিয়ে অনেক কথা হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্লাব ও জাতীয় দল উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেফারিংয়ের জন্যই বেশ ভোগান্তিতে পড়ে। এই প্রসঙ্গে আজাদ রহমান বলেন, ‘সব দেশেই ঘরোয়ার সাথে আন্তর্জাতিক রেফারিংয়ের পার্থক্য থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোড অফ কন্ডাক্টের জন্য সেখানে রেফারিং স্বাভাবিকভাবেই একটু উঁচু মানের হয় ঘরোয়ার চেয়ে। আমাদের রেফারিরাও এখন কঠিন ও সাহসী সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।’

রেফারিং নিয়ে হতাশা থাকলেও প্রতিপক্ষ মোহনবাগান যোগ্য দল হয়েই পরবর্তী রাউন্ডে খেলছে। এটি পরোক্ষভাবে স্বীকার করলেন বসুন্ধরা কোচ, ‘তারা মাত্র অল্প কয়েক দিনের প্রস্তুতিতে এই টুর্নামেন্ট খেলল। ভালো দল হিসেবেই পরের রাউন্ড খেলবে।’ টুর্নামেন্ট থেকে কিংস বিদায় নিলেও যথেষ্ট ভালো খেলেছে এমনটাই ধারণা টিটুর, ‘কিংস তিনটি ম্যাচেই ভালো খেলেছে। কিছুক্ষেত্রে ভাগ্যের সহায়তা লাগে। সেটা তাদের ছিল না। চার দলের মধ্যে তাদের বিদেশি খেলোয়াড়ের মান সেরা। এটা প্রমাণ হয়েছে। বেসেরা ফুল ফিট থাকলে তিন ম্যাচেই তারা জিততে পারতো বলে আমার ধারণা।’ 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //