নতুন ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় বসুন্ধরা কিংস

বসুন্ধরা কিংস এখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দল হলেও তার কিছু আগে যাত্রা শুরু করে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। তবে একটা জায়গায় দুটি ক্লাবেরই মিল রয়েছে। নতুন হিসেবে তারা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ (বিসিএল) খেলে পেশাদার ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জায়গা করে নিয়েছে।

সাইফ এসসি ২০১৬ ও বসুন্ধরা ২০১৭ সালে দেশের ফুটবলে আগমন ঘটায়। এবার শুধু সাইফ কেন, দেশের ফুটবল ইতিহাসে কোনো ক্লাব যা করতে পারেনি সেটাই করে দেখানোর অপেক্ষায় রয়েছে বিপিএল ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটি। আগে যাত্রা শুরু করে সাইফ এসসি গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজস্ব স্টেডিয়াম তৈরির জন্য ৫৬ বিঘা জমি ক্রয় করলেও নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারেনি। সেখানে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের অর্থে বসুন্ধরা স্পোর্টস এরিনা নির্মাণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে তৈরি হয়ে আছে স্টেডিয়াম। যেখানে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি রচিত হতে যাচ্ছে নতুন এক ইতিহাস।

বাংলাদেশের প্রথম কোনো ক্লাব হিসেবে এদিন নিজেদের তৈরি স্টেডিয়ামে খেলবে বসুন্ধরা কিংস। প্রায় দেড় দশক আগে ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবল লিগের যাত্রা শুরু হয়; কিন্তু এতদিন পরও আসলে পেশাদারির ছাপ ওই অর্থে কোনো সেক্টরেই পড়েনি দেশের ফুটবলে। মৌসুমের সময়সীমা, ক্লাবের সংখ্যা বা দলবদলের নির্দিষ্ট সূচির কোনো ঠিক-ঠিকানা তো নেই, উল্টো প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে নতুন নতুন নিয়ম কানুন। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগেও সেই ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়ার উদাহরণও তৈরি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পেশাদার লিগ কমিটি।

সব মিলিয়ে পেশাদার ফুটবল লিগ আসলে শুধু নামেই, আর ক্লাবগুলোও চলছে নিজেদের যেভাবে ইচ্ছা ঠিক সেভাবেই। বাফুফের এখানে কোনো কর্তৃত্বও নেই! একটি পেশাদার ফুটবল দলের নিজস্ব মাঠ থাকা, অন্তত দুটি যুব দল থাকা, নিজস্ব ফিজিও ও চিকিৎসক, পেশাদার ম্যানেজার, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা থাকা এবং বার্ষিক বাজেট ও অডিটের মতো বিষয়গুলো থাকা একবারে আবশ্যকীয় কেন তার চেয়ে বেশি কিছু। 

বাংলাদেশে এসব যেন স্বপ্ন, কেউ যদি বলেন দুঃস্বপ্ন তাহলে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না। তাই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর এসব ব্যাপার শুধু কাগজ-কলমেই বিদ্যমান। একটি ক্লাবের নিজস্ব স্টেডিয়াম তো বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে দিবা স্বপ্নের চেয়ে বেশি ছিল। কেউ এটি বললে তাকে পাগল বানাতেও সময় নিতেন না সমালোচকরা। তাদেরই বা দোষ দিয়ে লাভ কি, গত এক যুগে দেশের আধুনিক ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আবাহনী লিমিটেড নিজস্ব স্টেডিয়াম করতে পারেনি।

এ ছাড়া বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সফল ক্লাব ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড অবশ্য বছর তিনেক আগে ঘোষণা দিয়েছিল পূর্ণাঙ্গ স্পোর্টস কমপ্লেক্স করার। তবে তাদের ঘোষণা ঘোষণাই রয়ে গেছে, দেখেনি প্রত্যাশিত আলোর মুখ। তবে প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে নিজেদের হোম ভেন্যুর অভাব ঘুচিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উত্তীর্ণ হয় বসুন্ধরা কিংস।

বাংলাদেশের ফুটবলে আগমনের পর থেকেই সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষদের টেক্কা দিয়ে চলেছে। বিপিএল ফুটবলে আসার পর থেকেই ক্লাব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাজায় কিংস ম্যানেজমেন্ট। মাঠের খেলায় ভালো ফলাফল করতে দেশীয় সেরা ফুটবলারদের সঙ্গে ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার ও কোচিং স্টাফদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সফলই বলা যায় তাদের। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরের প্রয়োজনীয় সবকিছু সম্পন্ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাদার ক্লাব হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে শুরু থেকেই বদ্ধ পরিকর ছিল তারা। সেই লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জুনে ২০০ বিঘা জমি নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এন’ ব্লকে কাজ শুরু হয় অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। 

ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি ক্রিকেট, হকি, ভলিবল ও কাবাডি কোর্ট, ফুটসাল গ্রাউন্ড, বাস্কেটবল কারাতে, গলফ ও ড্রাইভিং রেঞ্জ, শুটিং ও আর্চারি রেঞ্জ এবং সুইমিংপুলের মতো ইভেন্টের ব্যবস্থা রেখে অনেকটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ। এই কমপ্লেক্সটি বিভক্ত করা হয়েছে আবার দুটি জোনে। নর্থ জোনে রয়েছে এএফসির শর্ত মেনে ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারিসহ ভালোমানের ফুটবল স্টেডিয়াম। আর সাউথ জোনে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক ক্রিকেট মাঠ। এর মধ্যেই ফুটবল মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মূল মাঠের কাজ শেষ হয়েছে আগেই, এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর কিছু অবকাঠামোগত কাজ বাকি থাকলেও লিগ শুরু হওয়ার আগেই সেগুলো সম্পন্ন করে ম্যাচ আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে বসুন্ধরা কিংসের নিজস্ব হোম ভেন্যু। এরপরই নিজেদের হোম ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজনের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো ক্লাব প্রথমবারের মতো নিজেদের মালিকানাধীন মাঠে আয়োজন করতে যাচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যাচ।

প্রতিবেশী ভারতের ক্লাবগুলোর দিকে চোখ বুলালে দেখা যায়, এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও এখনো নিজস্ব স্টেডিয়াম গড়ে তুলতে পারেনি। ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী ক্লাব হিসেবে ধরা হয় জেএসডব্লিউ গ্রুপের মালিকানাধীন বেঙ্গালুরু এফসিকে। এএফসি কাপে দু’বার আঞ্চলিক ফাইনাল খেলা দলটিরও নেই একটা নিজস্ব স্টেডিয়াম! সেখানে তাই যোজন যোজন দূরত্বে এগিয়ে রয়েছে বসুন্ধরা কিংস।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় লিগ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি আইএসএলকে। সেখানে খেলা দলগুলো আধুনিক ফুটবলের অনেক বিষয়ে এগিয়ে গেলেও এখনো নিজেদের একটি স্টেডিয়াম এখন পর্যন্ত তৈরি করতে পারেনি। আইএসএলের ক্লাবগুলো হোম ভেন্যু নির্বাচন করছে বিভিন্ন প্রদেশের স্টেডিয়ামগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ে জন্য লিজ নিয়ে। সে হিসেবে বাংলাদেশের নতুন দল হয়ে বড় একটি মাইলফলকই স্পর্শ করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //