চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের স্বপ্নময় সংবর্ধনা

স্বপ্ন জয়ের পর স্বপ্নজয়ীদের স্বপ্নময় সংবর্ধনা। ঠিক তাই। ইতিহাস গড়া বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল দেশে ফিরে সাক্ষী হলেন আরেক ইতিহাসের। প্রথমবারের মতো সাফ জয়ী নারী ফুটবলারদের যেভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হলো, এমন রাজসিক সংবর্ধনা বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়া দল কখনোই পায়নি।

বিমানবন্দরে ফুলেল সংবর্ধনার পর ‘চ্যাম্পিয়নস’ লেখা ছাদখোলা বাসে চড়ে বিজয় শোভাযাত্রা, সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক রাজকীয় সংবর্ধনায় হৃদয় ভেজানোর সৌভাগ্য অর্জন করলেন সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, আঁখি, স্বপ্নারা।

বিজয়ীদের বিরোচিত সংবর্ধনা জানানোর সব প্রস্তুতি আগেই সেরে রাখা হয়েছিল। সাবিনাদের শুভেচ্ছা জানাতে সাধারণ মানুষের প্রস্তুতিটা যেন ছিল আরও বেশি। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে চ্যাম্পিয়নরা দেশের বিমানবন্দরে পা রাখবে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে, এটা জানাই ছিল। অথচ বিজয়ীদের এক নজর দেখতে এবং শুভেচ্ছা জানাতে সাধারণ মানুষ বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকে সকাল থেকে।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই ভীড় বাড়তে থাকে। খেলোয়াড়রা বিমানবন্দরে অবতরণের আগে থেকেই চলতে থাকে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’, ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’-নানা স্লোগান। সঙ্গে চলে অপেক্ষার প্রহর গোনা। 

দর্শকদের সেই অপেক্ষার অবসান হয় বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে। নির্ধারিত সময়ের ৫ মিনিট আগেই ১টা ৪৫ মিনিটে শাহাজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিজয়ী নারী দলকে বহনকারী বিমান। বিমান থেকে নামার পর বিমানবন্দরের ভেতরেই খেলোয়াড়দের ফুলেল সংবর্ধনা জানান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

ফুলেল শুভেচ্ছার পর মিষ্টিমুখ করানো হয়। এরপর সংক্ষিপ্তভাবে নিজেদের বিজয়গাঁথার সুখ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাবিনা খাতুনরা। ভেতরের এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে খেলোয়াড়রা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন  সাড়ে ৩টায়।

ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বিজয়ীনিদের বেরিয়ে আসতে দেখেই দেখে দর্শকরা যেন গর্জে উঠেন। তাদের সমবেত স্লোগান-গর্জনে বিমানবন্দর এলাকা কেঁপে উঠে। দর্শকদের মুর্হূমুহূ করতালি আর স্লোগান বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা উঠে পড়েন তাদের বহন করার জন্য অপেক্ষমান ছাদখোলা বাসে। নতুন ইতিহাস রচনার মধ্যদিয়ে ছাদখোলা বাসে শুরু হয় বিজয়ীনিদের বিজয় শোভাযাত্রা। ছাদখোলা বাস যাত্রা শুরু করে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনের দিকে।

বাসের সামনে, পেছনে, ডানে, বামে মানুষ আর মানুষ। মানুষের ভীড় ঠেলে ছাদখোলা বাস যেন এগোতেই পারছিল না। বাস চলতে থাকে পিপঁড়ের গতিতে।

বাসের আগে-পিছে মিছিল তো ছিলই। বাস চলার পথে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়েও বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। খেলোয়াড়রাও হাত নেড়ে দর্শকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। বাস কতটা ধীর গতিতে চলেছে, সেটি একটি তথ্যেই স্পষ্ট- সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে বাফুফে ভবনে পৌঁছেছে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে। মানে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে পৌঁছতে লেগেছে ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট!


বাফুফে ভবনে পৌঁছানো পর চ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এর মধ্যে দিয়েই শেষ হয় সাবিনা-কৃষ্ণাদের স্বপ্নযাত্রা।

সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন উৎসব করেছিল ১৯ বছর আগে, ২০০৩ সালে। সেই অর্জন ছিল পুরুষ দলের। বাংলাদেশের মেয়েরা সাফ শিরোপা জিতলেন এবারই প্রথম। ভারত, নেপালের মতো দলকে হারিয়ে সাফের শিরোপা জেতা বাংলাদেশের নারী দলের জন্য ছিল হিমালয় সমান কঠিন। তবে হিমালয়ঘেরা নেপালে সেই কঠিন কাজটা সাবিনা খাতুনের দল সেরেছে দাপটের সঙ্গে।

পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ গোল দিয়েছে ২২টি, বিপরীতে হজম করেছে মাত্র একটি। এই তথ্যটিই প্রমাণ করে স্বপ্ন ছুঁতে নেপালে কতটা আগ্রাসী ছিলেন সাবিনা-কৃষ্ণা-স্বপ্নরা। দুই পরাশক্তি ভারতকে ৩-০ গোলে হারানোর পর ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে।

সাবিনাদের এই সাফল্য নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। পাশাপাশি এই অর্জন দেশের নারী ফুটবলকে একদিকে যেমন অনেক উপরে তুলে ধরেছে, তেমনি ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও জোগাবে। শুধু নারী ফুটবলে নয়, পুরুষ ফুটবলসহ দেশের অন্যান্য খেলার জন্যও সাবিনাদের এই কীর্তি হতে পারে অনুপ্রেরণীয় উৎস।

এমন ঐতিহাসিক অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ এ রকম ঐতিহাসিক সংবর্ধনাটা যথার্থই।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //