ইতিহাসের আলোয় বিশ্বকাপ ফুটবল

পশ্চিম জার্মানির প্রথম শিরোপা জয়

১৯৫০ সালের আসরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগে খেলতে পারা জার্মানিই পঞ্চম আসরের শিরোপা জয় করে। ফিফার অর্ধশত বর্ষপূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে এই আসরটি আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রকৃতির লীলাভূমি খ্যাত সুইজারল্যান্ডকে। এই আসরটি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনের পর্দায় প্রথমবারের মতো সম্প্রচার করা হয়।

৩৮টি দেশের মধ্যকার বাছাইপর্বের মাধ্যমে ১৬টি দেশকে বেছে নেওয়া হয়। এবার এশিয়া থেকে চীন ও জাপানকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দক্ষিণ কোরিয়া। এই আসরের সবচেয়ে বিশেষত্ব হচ্ছে, টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকা হাঙ্গেরি টপ ফেভারিট হিসেবে অংশগ্রহণ করে। বলা বাহুল্য, এই দেশটি অলিম্পিকের পুরুষ দলের স্বর্ণজয়ী দেশ। ফেরেঙ্ক পুসকাস, নান্দর হিদেকুটি, জোসেফ বেসিক, জোলতান জিবোর ও স্যান্ডর ককসিসের সমন্বয়ে হাঙ্গেরি এক কথায় অপ্রতিরোধ্য এক দলের নাম। আসরের আলোচিত ম্যাচটা ছিল, অষ্ট্রিয়ার বিপক্ষে সুইজারল্যান্ড ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও পরে জয় পায় ৭-৫ গোলের ব্যবধানে।

সেই আসরে হাঙ্গেরি দক্ষিণ কোরিয়াকে ৯-০ গোলে হারিয়ে শুরু করে। এরপর জার্মানিকে পরাজিত করা পর রুখে দেয় ব্রাজিলকে। ফাইনাল ম্যাচটি নিয়ে যে ধরনের উত্তেজনার অপেক্ষা ছিল তার পুরোটাই দেখতে পেরেছিল দর্শকরা। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় ফাইনাল খেলাটি। এই ম্যাচে ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স হাঙ্গেরিই ছিল পরিষ্কার ফেভারিট।  ফেরেঙ্ক পুসকাস প্রথম গোল করেন এবং খেলার ৮ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় হাঙ্গেরি। পরের ১০ মিনিটে জোড়া গোলে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনে জার্মানি। এরপর ৮৩ মিনিটের মাথায় নিজের দ্বিতীয় গোল করে হেলমুট রান হাঙ্গেরির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন। ওই আসরে ফাইনাল ম্যাচটাই ছিল সবচেয়ে অঘটনের, অন্ততপক্ষে দলের শক্তির বিচার করলে।

এই আসরের কুখ্যাতি পাওয়ার ঘটনা ঘটে কোয়াটার ফাইনালে ব্রাজিল ও হাঙ্গেরির ম্যাচে। ‘ব্যাটল অব বার্ণ’ নামের এই ঘটনাটি ১৯৫৪ সালের ২৭ জুন বার্নের ওয়াঙ্ক ফর্ড স্টেডিয়ামে দু’দল যেন ফুটবল খেলতে নয়, নেমেছিল মল্লযুদ্ধে। ম্যাচের ৭ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা হাঙ্গেরিই প্রথম শক্তি প্রদর্শন করতে শুরু করে। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ফাউলের বন্যা বইয়ে দেয় ব্রাজিলও।

এক নজরে পঞ্চম আসর

স্বাগতিক : সুইজারল্যান্ড

চ্যাম্পিয়ন : পশ্চিম জার্মানি (প্রথমবার শিরোপা জয়)

রানার্সআপ : হাঙ্গেরি

সময়কাল : ১৬ জুন-৪ জুলাই ১৯৫৪

অংশগ্রহকারী দলসমূহ : চার গ্রুপে মোট ১৬টি দল (ব্রাজিল, যুগোস্লাভিয়া, ফ্রান্স, মেক্সিকো, হাঙ্গেরি, পশ্চিম জার্মানি, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, উরুগুয়ে, অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও বেলজিয়াম)

মোট ভেন্যু : ৬টি (৬ শহরে)

মোট ম্যাচ : ২৬ টি

মোট গোল : ১৪০ টি (ম্যাচ প্রতি ৫.৩৮)

সর্বোচ্চ গোলদাতা : স্যান্ডর ককসিস (হাঙ্গেরি) ১১টি

মোট দর্শক উপস্থিতি : ৮৮৯৫০০ (ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩৪২১২)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //