গোল্ডেন গ্লাভস জয়ে এগিয়ে কারা?

খেলা বুঝুক না বুঝুক, খরব রাখুক না রাখুক, খাঁটি দর্শক, নিয়মিত দর্শক, মৌসুমি দর্শক, আম দর্শক- বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সবাই বনে গেছেন ফুটবলবোদ্ধা। বিশ্বকাপ উন্মাদনায় সবার মাথায়ই ঘুরে ফিরছে অভিন্ন কয়েকটি প্রশ্ন-

কে জিতবে শিরোপা? কে হবেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বলের মালিক? কার হাতে উঠবে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট? আরও একটি গুরুত্বপর্ণ প্রশ্ন- কে জিতবেন সেরা গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস বা সোনার দস্তানা?

সোনার বল কিংবা সোনার জুতার তুলনায় সোনার দস্তানা পুরস্কারটি খুব কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। গোল্ডেন গ্লাভস দেওয়া হয় আসরের সেরা গোলকিপারের হাতে। বিশ্বকাপ শুরুর ৬৪ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৪ বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কারের প্রচলন শুরু। পুরস্কারটির নামকরণ করা হয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিনের নামে। 

এর পর যত বিশ্বকাপ হয়েছে, ব্যক্তিগত অ্যাওয়ার্ডটির মাহাত্ম্য ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা আধুনিক ফুটবলে অন্য পজিশনের খেলোয়াড়দের তুলনায় গোলরক্ষকের মূল্যয়ন বা গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। গোলপোস্টেরঅতন্দ্র প্রহরীরাও এখন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন। এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো এমন কিছু গোলরক্ষককে নিয়ে, যারা হয়ে উঠতে পারেন কাতার বিশ্বকাপের সেরা।

থিবো কর্তোয়া

বর্তমান সময়ের সেরা গোলকিপার কিনা- এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কর্তোয়া যে সেরাদের অন্যতম তা নিয়ে সংশয় নেই। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ছিটকে দেওয়ার ম্যাচে কর্তোয়া ঝলক বা গত চ্যাম্পিয়নস লিগজুড়ে রিয়ালের হয়ে তার অতিমানবীয় সব সেভ অনেকদিন মনে রাখবে ফুটবলভক্তরা। বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের আশা-ভরসার প্রতীক কর্তোয়া হয়েছেন গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও লা লিগার সেরা গোলরক্ষক। এই ফর্ম বিশ্বকাপেও টেনে আনতে  পারলে গোল্ডেন গ্লাভসটা উঠবে কর্তোয়ার হাতেই।

অ্যালিসন বেকার/এডারসন মোরায়েস

বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোচ তিতেকে পড়তে হবে মধুর এক সমস্যায়। যে সমস্যায় পড়তে চাইবে যে কোন কোচ। কেননা তিতের ব্রাজিল দলে যে রয়েছেন সময়ের অন্যতম দুই সেরা গোলরক্ষক। তবে একই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও অ্যালিসন ও এডারসন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী।

অ্যালিসন খেলেন ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুলের হয়ে, আরেক ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানসিটির গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন এডারসন। দুজনকে নিয়ে ব্রাজিল কোচকে কেন বিপাকে পড়তে হবে তা একটি ছোট পরিসংখ্যান দিয়েই বোঝানো যায়। ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে এ দুজনের বাইরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের খেতাব জিততে পারেনি অন্য কেউ। 

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দুই সতীর্থই হয়ে যাবেন একের অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হিসেবে ব্রাজিল কোচকে বেছে নিতে হবে যে কোনো একজনকেই। অ্যালিসন হোক বা এডারসন, বিশ্বকাপে দুজনের যে কেউই হতে পারেন গোল্ডেন গ্লাভসের বড় দাবিদার। 

ম্যানুয়েল নয়্যার

আধুনিক ফুটবলে যদি কাউকে ‘সুইপার গোলরক্ষক’-এর সংজ্ঞা দিতে বলা হয়, একবাক্যে ম্যানুয়েল নয়্যারের নামটি বললেই সম্ভবত যথেষ্ট হয়ে যাবে। ২০১৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির রক্ষণভাগ মূলত শুরুই হতো নয়্যার থেকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদেই পেয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস অ্যাওয়ার্ড। 

এর পর ব্যক্তিগত অর্জনের অভাব হয়নি নয়্যারের। কেউ কেউ মজা করে নয়্যারকে পার্টটাইম গোলরক্ষক কাম ফুলটাইম ডিফেন্ডারও বলে থাকেন। বয়স ৩৬ হলেও নয়্যারের পারফরম্যান্সের ধার কমেনি একটুও। বরং কাতার বিশ্বকাপে পেয়েছেন জার্মানদের নের্তৃত্ব সামলানোর ভার। কাতারে যদি দ্বিতীয়বারের মতো গোল্ডেন গ্লাভসটা নয়্যারের হাতেই ওঠে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

এমিলিয়ানো মার্টিনেজ

কোচ লিওনেল স্কালোনির হাত ধরে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনা। তবে বরাবরই বিশ্বকাপে বিশ্বমানের গোলরক্ষক না পাওয়ার দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টিনার। এমিলিয়ানো মার্টিনেজের কল্যাণে এবার যেন আর্জেন্টাইনদের সেই দুর্ভাগ্যের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার সবচেয়ে বড় তারকাও তিনি। 

২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় মার্টিনেজের অতিদানবীয় ফর্ম বিশ্বকাপে আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষ দলগুলোকে ভাবাচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। এডারসন-অ্যালিসন কিংবা চিলির ক্লদিও ব্রাভোকে হটিয়ে পেয়েছেন আসরের সেরা গোলরক্ষকের খেতাব। সুতরাং মেসিদের বিশ্বকাপ যাত্রায় এমিলিয়ানো মার্টিনেজ হয়ে উঠতে পারেন গোল্ডেন গ্লাভসের বড় দাবিদার।

এ ছাড়াও আলাদাভাবে নজর থাকবে 

কেসপার শ্মাইকেল, উনাই সিমন, জর্ডান পিকফোর্ড, কেইলর নাভাস, কেসপার শ্মাইকেল (ডেনমার্ক), উনাই সিমন (স্পেন), জর্ডান পিকফোর্ড (ইংল্যান্ড), ফার্নান্দো মুসলেরা (উরুগুয়ে), গিয়ের্মো ওচোয়া (মেক্সিকো), কেইলর নাভাস (কোস্টারিকা), এডওয়ার্ড মেন্ডি (সেনেগাল), ইয়ান সোমার (সুইজারল্যান্ড), রুই প্যাট্রিকো (পর্তুগাল), মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান (জার্মানি) ও হুগো লরিস (ফ্রান্স)।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //