নেইমারকে ছাড়াই সুইসদের হারাতে চায় ব্রাজিল

প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর অস্বস্তি হয়ে আছে নেইমার জুনিয়রের ইনজুরি। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ সোমবার (২৮ নভেম্বর) মাঠে নামছে ব্রাজিল। এদিন রাত ১০টায় স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ মুখোমুখি হবে দুই দল। 

জিতলে গ্রুপের প্রথম দল হিসেবে শেষ ষোলতে পৌছাতে পারবে সেলেসাওরা। কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়ার বিপক্ষে দারুণ জয় পায় ব্রাজিল। রিচার্লিসনের জোড়া গোলে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা দলটিকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে নেইমারের চোট। ডান পায়ের গোড়ালির ইনজুরিতে পড়েছেন নেইমার। 

দলটির চিকিৎসক রদ্রিগো লাসমারকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চলমান আসরের প্রথম রাউন্ডে আর দেখা যাবে না নেইমারকে। গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে নেইমার ও রাইটব্যাক দানিলো খেলতে পারবেন না। এত কিছুর পরও ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো বলেন, ‘নেইমার না থাকলেও আমাদের হাতে বিপুলসংখ্যক বিকল্প খেলোয়াড় রয়েছেন। মাঝে মধ্যে বিপক্ষ দলগুলোর জন্য আমার দুঃখই হয়। তবে সেসবকে আমরা গোনায় আনছি না।’

ইনফর্ম নেইমারের জায়গায় কাকে খেলাবেন জানিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কোচ। তিনি জানান, চোট পাওয়া নেইমারের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন রদ্রিগো। তার মধ্যে নতুন প্রতিভা রয়েছে, সে জ্বলে উঠতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। 

রদ্রিগো সাধারণত পাশ থেকে বা সেন্টার-ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে থাকেন। দুই দলই যেহেতু প্রথম ম্যাচে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে তাই আজকের ম্যাচে জিতে নক আউট পর্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে উভয়দল। দারুণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে ব্রাজিল প্রথম ম্যাচেই সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে অনেকটাই সফল হয়েছে। যদিও দলের সুপারস্টার নেইমার ডান গোড়ালির ইনজুরিতে পড়ে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গেছেন। 

সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ২-০ গোলের জয়ে অবশ্য নেইমার গোল পাননি। তিতের তুরুপের তাস টটেনহ্যাম হটস্পায়ার তারকা রিচার্লিসনই সেলেসাওদের এগিয়ে নিয়ে গেছেন। করেছেন দুই গোল। বিশ্বকাপের শুরুতেই তিতেসহ পুরো দলই ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রাজিল এখন আর শুধু নেইমারনির্ভর নয়, তার প্রমাণ প্রথম ম্যাচেই মিলেছে। সে কারণেই আগের দুই বিশ্বকাপে যে চাপ নিয়ে নেইমার মাঠে নেমেছিলেন তার থেকেই অনেকটাই নির্ভার হয়ে এবার তিনি নেমেছিলেন। কিন্তু আবারো সেই ইনজুরি তার ছায়াসঙ্গী হয়েই থাকল।

এবারের টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ সার্বিয়াকে ডার্ক হর্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেলেসাওরা তাদের আধিপত্য দিয়ে সার্বিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে রিচার্লিসেনর জোড়া গোলে সার্বিয়া পরাজিত হয়। এর মাধ্যমে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা টানা আট জয় নিশ্চিত করেছে। ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালের পর থেকে তারা অপরাজিত রয়েছে। এই আট জয়ে ব্রাজিল ২৮ গোল দিয়েছে। 

অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড তাদের প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে নিজেদের ভালোই প্রমাণ করেছে। গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে খুব বেশি পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি ক্যামেরুন। নতুন কোচ মুরাত ইয়াকিন সেই একই কৌশলে সুইসদের এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই জয়ে ইয়াকিন সন্তুষ্ট হতেই পারেন, তার ওপর দল কোনো গোল হজম করেনি। শেষ ১০ ম্যাচে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সুইজারল্যান্ড কোনো গোল হজম না করে ম্যাচ শেষ করেছে। ইউরো ২০২০-এর বাছাই পর্বে শেষ ছয়টি ম্যাচ সুইসরা মাত্র এক গোল খেয়েছিল। ওই সময়ই ইয়াকিন দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার বছর আগে গ্রুপ পর্বে তারা ব্রাজিলের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। ক্যামেরুনের সাথে জয়ী হয়ে টানা চার ম্যাচে তারা অপরাজিত রয়েছে। এই জয়ে স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলও রয়েছে। ব্রাজিলের বিপক্ষে এই সংখ্যা পাঁচ করতে পারলে নক আউট পর্বও নিশ্চিত হয়ে যাবে। প্রথম ম্যাচের গোলদাতা বিল এম্বোলোর জন্য গোলের মুহূর্তটি ছিল অন্য রকম এক অনুভূতি। নিজের জন্মভূমির বিরুদ্ধে গোল করে তিনি দলকে প্রথম জয় উপহার দিয়েছেন।

ব্রাজিল প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়বে তারা। কিন্তু দলের ‘স্টার ম্যান’ নেইমার খেলতে পারবেন না এই ম্যাচে। নেইমারহীন ব্রাজিল নিজেদের কতটা মেলে ধরতে পারবে? দলে অবশ্য তারকার অভাব নেই। গত বিশ্বকাপেও একই গ্রুপে ছিল ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড। রোস্তভ এরেনায় ফিলিপে কুটিনহোর গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় সুইসরা। স্টিভেন জুবেরের গোলে ব্রাজিলের কাছ থেকে কেড়ে নেয় পয়েন্ট। এর আগে ১৯৫০ সালের আসরেও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপে শুধু সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল এবং হাঙ্গেরির বিপক্ষে জয় নেই ব্রাজিলের। আর বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকান দলের বিপক্ষে বাজে রেকর্ড সুইসদের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। ২০১৪ সালে ইকুয়েডরকে ২-১ গোলে হারানোর পর লাতিনদের বিপক্ষে শেষ ৭ ম্যাচে জয়হীন সুইজারল্যান্ড। হার পাঁচটি। তবে ব্রাজিলের বিপক্ষে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুপ্রেরণা হতে পারে সুইজারল্যান্ডের। সেলেসাওদের বিপক্ষে শেষ চার দেখায় দু’বার জিতেছে দলটি (এক ড্র ও এক হার)।

ব্রাজিলের বিপক্ষে সুইসদের তুরুপের তাস হতে পারেন ব্রিল এমবোলো। তার গোলেই ক্যামেরুনের বিপক্ষে জয় পায় সুইজারল্যান্ড। জাতীয় দলে শেষ চার ম্যাচে তিন গোল করেছেন ক্যামেরুনিয়ান বংশোদ্ভূত স্ট্রাইকার এমবোলো। আর তিনটিই ছিল জয়সূচক গোল। ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না নেইমার। তাতে কৌশলে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে কোচ তিতেকে। সম্ভবত একাদশে ঢুকতে যাচ্ছেন ফ্রেড। রাইটব্যাক দানিলোও চোটে পড়েছেন। 

গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে পাওয়া যাবে না তাকে। এতে অভিজ্ঞ দানি আলভেজের মাঠে নামার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ৩৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার গত বিশ্বকাপ মিস করেছিলেন। সার্বিয়ার বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রদ্রিগো। তাকে শুরুর একাদশে দেখা যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না। তবে কাসেমিরো চান রদ্রিগো নেইমারের জায়গায় খেলুক। ব্রাজিলের একাদশ হতে পারে এমন, আলিসন বেকার, এডার মিলিতাও, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনহস, আলেক্স সান্দ্রো, কাসেমিরো, ফ্রেড, লুকাস পাকেতা, রাফিনহা, রিচার্লিসন, ভিনিসিউস জুনিয়র। সবার নজর রিলার্চিসনে গত তিনটি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ‘নাম্বার নাইন’ পজিশনে ভালো করতে পারেনি কেউই। আক্ষেপটা বোধহয় এবার ঘুচাতে যাচ্ছেন রিচার্লিসন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //