লড়াইয়ের মাঝে রিচার্লিসন-সন লড়াই

দুজনেই এক ক্লাবের হয়ে খেলে থাকেন। আজ মধ্যরাতে দুজন একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। টটেনহ্যাম সতীর্থ আজ একে অন্যকে বিদায় করতেই মাঠে নামবেন। অথচ খুব বেশিদিন হয়নি দুজনের একসাথে পথচলা। এ বছরই দল বদলে এভারটন থেকে টটেনহ্যামে নাম লেখান রিচার্লিসন। নতুন দলে এসে মানিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের। 

প্রিমিয়ার লিগে ১০ ম্যাচে তাই একটিও গোল নেই। এই সময়ে নিশ্চিত তাকে সঙ্গ দিয়েছেন সন হিউং মিন। নতুন সতীর্থকে মানিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন নতুন ক্লাবে। ২০১৫ থেকে এই ক্লাবে আছেন দক্ষিণ কোরিয়াতে জাতীয় বীরের তকমা পাওয়া হিউং মিন। তার জন্য স্পার্সদের সব নাড়ি-নক্ষত্র হাতের তালুর মতো চেনা। এখানে নতুন কাউকে সহজ করে তোলা সনের চেয়ে আর কারও ভালো জানার কথা না। চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগে একসাথে খেলে রিচার্লিসনের জন্য সবকিছু তাই সহজ করে আনছিলেন। এমন দুই সতীর্থকেই আজ প্রতিপক্ষ হয়ে নামতে হচ্ছে বিশ্বকাপে।

বলা যায়, একেবারে বাঁচামরার লড়াইতে মুখোমুখি হচ্ছেন দুইজন। ক্লাবে দুই সতীর্থ ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে দুই প্রান্ত থেকে ছুটবেন একে অপরকে বিদায় করে দিতে। গত জুনেই একবার মুখোমুখি লড়েছিলেন দুজন। সিউলের ওই প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল ৫-১ গোলে হারায় দক্ষিণ কোরিয়াকে। প্রথম গোলটি করেছিলেন রিচার্লিসন। জোড়া গোলদাতা নেইমারের সাথে জার্সি বদল করেছিলেন সন। এবার ফল যাই হোক ভিন্ন কিছু আসবে দুজনের মধ্যে। এবার নেইমার নয় রিচার্লিসনের সাথেই জার্সি বদল করতে পারেন সন। জার্সি বদল, হাত মেলানো-মুখে হাসির পাঠ আসার আগেই পরের গন্তব্য নিশ্চিত হয়ে যাবে দুজনের। তাদের চাওয়া, গন্তব্য যেন হতাশার না হয়। গোড়ালির চোট কাটিয়ে আজ নেইমার খেলবেন কি না গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত ছিল না। তাই সার্বিয়ার বিপক্ষে শুরুর ম্যাচে জোড়া গোল করা রিচার্লিসন আজ ব্রাজিলের তুরুপের তাস হবেন।

এদিকে অনুমিতভাবেই দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা অস্ত্র সন। এক ক্লাবের হয়ে খেলেন বলে দুই সেরা তারকার শক্তি-দুর্বলতা ভালো করেই জানেন দুজন। গত সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়নস লিগে মার্শেইয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে টটেনহ্যামের জয়ের ম্যাচে সন দেখেছেন রিচার্লিসনের সামর্থ্য। দলের পক্ষে দুটি গোলই করেছেন এই ব্রাজিল তারকা। রিচিকে থামাতে তার শক্তির জায়গাগুলো নিয়ে নিশ্চিত দক্ষিণ কোরিয়াকে বার্তা দিয়েছেন সন। ঠিক একইভাবে প্রতিপক্ষের সেরা তারকাকে আটকে দেওয়ার কৌশলটা রিচি জানিয়ে দিয়েছেন ব্রাজিল টিম ম্যানেজমেন্টকে। হাসিমুখের আড়ালে দেশের জার্সিতে পেছনের লড়াইয়েও নামতে হচ্ছে দুই সতীর্থকে। দুই দলের লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৫টিতেই জিতেছে ব্রাজিল। কোরিয়া শুধু ১৯৯৯ সালে এক প্রীতি ম্যাচে জিতেছিল ১-০ গোলে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে এই সেদিন কোরিয়াকে ৫-১ গোলে হারায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

অবশ্য ওই ম্যাচ আর বিশ্বকাপের ম্যাচে আকাশ পাতাল পার্থক্য। প্রীতি ম্যাচের আমেজে নেই কোরিয়ানরা। এইচ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে নকআউট রাউন্ডে এসেছে তারা। উরুগুয়ের সাথে ড্র, ঘানার কাছে ৩-২ ব্যবধানে হারলেও শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে ২-১ এ হারিয়ে দিয়েছে কোরিয়া। প্রতি ম্যাচেই শক্ত লড়াইয়ের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা দেখিয়েছে দলটি। সেই দৃঢ় মানসিকতা বিশ্বকাপে এশিয়ার দল হয়ে সেরা সাফল্য আনা দলটিকে দুই আসর পর শেষ ১৬-তে নিয়েছে। ২০০২-এ সেমিফাইনাল খেলা কোরিয়ানদের এতদিন পর নকআউটে তুলে পর্তুগাল ম্যাচের পর তাই আনন্দাশ্রু ঝরেছে সনের চোখে। ২০১৮ এশিয়ান গেমস জিতে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীর দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া সন ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলেছেন।

এর মাঝে দুই বার দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে না পারার হতাশা দূর করলেন। পর্তুগালের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ৯১ মিনিটে গোল করেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন সন। অন্য ম্যাচে উরুগুয়ে একটি গোল দিয়ে দিলেই তাদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যেত। সে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিতের পর সতীর্থদের উজ্জীবিত করতে সন বলেন, ‘ইনজুরি সময়ের ওই বাকি সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ৬ মিনিট। যেভাবে আমরা এই সময়টা দৃঢ় থেকেছি। ঠিক সেভাবে বাকি অভিযানও দৃঢ় থাকতে হবে। যোগ্য হিসেবেই আমরা পরের রাউন্ডে উঠেছি। এবার সেই যোগ্যতা প্রমাণের পালা। আমরা সবসময় নিজেদের দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছানোর কথা বলি। আজ তা পূরণ হয়েছে। এখান থেকে আরো এগোনোর সামর্থ্য আমাদের আছে। আমরা অবশ্যই আরেকটি আশ্চর্য উপহার দিতেই পারি।’ কোরিয়ান মিরাকলকে থামিয়ে দিতে চায় ব্রাজিল।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //